320 বার প্রদর্শিত
"পড়াশোনা" বিভাগে করেছেন Level 2

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন Level 6
 
সর্বোত্তম উত্তর
হাঙ্গেরী রাজা সিগিসমন্ড ও তুরস্কের সুলতান বায়োজীদের মধ্যে নিকোপলিসের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হাঙ্গেরীর রাজা সিগিসমন্ড স্বাধীনচেতা ও উচ্চাভিলাসী নরপতি ছিলেন। সুলতান বায়োজীদ এক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে উত্তর বুলগেরিয়া, নিকোপলিস, ভিদিল ও সিনিস্টিয়া অধিকার করেন। এর ফলে হাঙ্গেরী বিজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। অতঃপর এক নৌঅভিযানের মাধ্যমে তিনি নিগ্রোপয়েন্ট ও কিউস নামক স্থানদ্বয় অধিকার করেন। সুলতান বায়োজীদের এরূপ সাফল্যে হাঙ্গেরীর রাজা সিগিসমন্ড চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তবে তিনি তার স্বীয় শক্তি ও সামর্থ্যের ওপর আস্থাশীল ছিলেন। এ কারণেই তিনি এক বিশেষ দূত মারফত তার পিতৃরাজ্য বুলগেরিয়া দখল করে করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বায়োজীদকে অভিযুক্ত করলেন এবং এ কাজের জন্য কৈফিয়ত চেয়ে পাঠালেন। সুলতান বায়োজীদ এর কোনো উত্তর না দিলেও তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন যে, অচিরেই তাকে হাঙ্গেরীর রাজার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। এদিকে সিগিসমন্ড বায়োজীদকে সামান্যতম সুযোগ না দিয়েই বুলগেরিয়া আক্রমণ করলেন এবং দানিয়ুব নদীর অববাহিকায় অবস্থিত নিকোপলিস শহরটি দখল করে নিলেন।

এ সংবাদ পাওয়া মাত্র বায়োজীদ ক্রুদ্ধ হলেন এবং সিগিসমন্ডকে শায়েস্তা করার জন্য তার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। সিগিসমন্ড তুর্কীদের রণদক্ষতা ও শক্তি সম্বন্ধে ভালোভাবেই জ্ঞাত ছিলেন। সুতরাং তার পক্ষে এককভাবে তুর্কী সুলতান বায়োজীদকে মোকাবিলা করা সহজ নয় মনে করে নববিজিত নিকোপলিস শহরটি পরিত্যাগ করে তিনি চলে গেলেন। অতঃপর হাঙ্গেরী রাজ সিগিসমন্ড তুর্কীদের মোকাবিলা করার জন্য ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের নিকট সক্রিয় সাহায্যে ও সমর্থনের আবেদন জানালেন। তার আহবানে সাড়া দিয়ে পোপ নবম বেনিফাস এগিয়ে আসলেন এবং তার সাহায্যার্থে একদল সৈন্য প্রেরণ করলেন। পোপ স্বয়ং তুর্কী মুসলমানদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত খৃস্টান শক্তির ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করলেন।

পোপের ঘোষণায় ইউরোপের চতুর্দিকে যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়ে গেলো। পোপের আহবানে সাড়া দিয়ে ফ্রান্স, হাঙ্গেরী, ভেনিস, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, লোম্বার্ডী, স্যাভর, ব্যাভারিয়া, জার্মানি, ওয়ালচিয়া, বেহেমিয়া, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের রাজন্যবর্গ, নাইটগণ সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ১৩৯৬ খৃস্টাব্দের বসন্তকালে বুদাপেস্ট শহরে একত্রিত হলো। সম্মিলিত খৃস্টান বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার। এই সম্মিলিত খৃস্টান বাহিনী দানিয়ুব নদীর তীর ধরে অগ্রসর হওয়ার সময় তুর্কী শাসিত ভিদিন, সিস্টোভা ও ওরসোভা নামক স্থানগুলো দখল করে নিল এবং বুলগেরিয়ার নিকোপলিস শহরের নিকটে শিবির স্থাপন করলো। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তুর্কী বাহিনীর কোনো আগমনবার্তা পাওয়া গেলো না। এতে খৃস্টান শিবিরে নানারূপ জল্পনা-কল্পনা ও কৌতূহলের সৃষ্টি হলো। আসলে এ সময়ে সুলতান বায়োজীদ কনস্টান্টিনোপল অবরোধে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি হাঙ্গেরীর রাজা সিগিসমন্ডের নেতৃত্বে সম্মিলিত খৃস্টান শক্তির আগমনের কথা জানতে পেরে সাময়িকভাবে কনস্টান্টিনোপল অবরোধ তুলে নিলেন এবং এক লাখ পঁচিশ হাজার সৈন্যের এক বিশাল সুশিক্ষিত মুসলিম বাহিনী নিয়ে নিকোপলিস শহর অভিমুখে যাত্রা করলেন। বিশাল তুর্কী বাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়ে রাজা সিগিসমন্ড চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

ইতোমধ্যে তিনি ধর্মযোদ্ধাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এ সময় খৃস্টান বাহিনীর মধ্যে অনিয়মানুবর্তিতা, বিশৃক্মখলা, উন্মুক্ততা ও জুয়া খেলার আড্ডায় পরিণত হয়েছিল। এমতাবস্থায় ধর্মযোদ্ধা বাহিনীর নেতা জন ডি নেভার্সের সাথে সিগিসমন্ড পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তুর্কীদের প্রথম আক্রমণের মোকাবিলা করবে হাঙ্গেরী ও ওয়ালচিয়ার সেনাবাহিনী এবং পরবর্তী পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যুহ হিসেবে সম্মিলিত ধর্মযোদ্ধাগণ তুর্কী বাহিনীর মোকাবিলা করবে। কিন্তু এই বলে ধর্মযোদ্ধাগণ সিগিসমন্ডের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো যে, সিগিসমন্ড একাই যুদ্ধজয়ের গৌরব উপভোগ করতে চান। তুর্কীদের ওপর তারা তৎক্ষণাৎ আক্রমণের দাবি জানালো। তুর্কীদের রণদক্ষতা ও কৌশল সম্বন্ধে ধারণা থাকায় সিগিসমন্ড ধর্মযোদ্ধাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন। কিন্তু অতি উৎসাহী ফরাসী ও অন্যান্য ধর্মযোদ্ধাগণ পরিকল্পনাহীনভাবে তুর্কীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সিগিসমন্ড তাদের এই হঠকারিতা ও অদূরদর্শিতায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ফরাসী সৈন্যদের নির্বুদ্ধিতা ও অহঙ্কারের জন্যই তারা যুদ্ধে পরাজিত হবে। কিন্তু তারা যদি আমাকে বিশ্বাস করতো তাহলে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সৈন্য আমাদের ছিল।’’ সিগিসমন্ডের এই ভবিষ্যদ্বাণী শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিলো। ধর্মযোদ্ধাগণ প্রথমদিকে তুর্কি বাহিনীর ওপর বিক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ চালিয়ে কিছুটা সাফল্য লাভ করলেও পরক্ষণেই তাদেরকে তুর্কীদের নিয়মিত দুর্ধর্ষ পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনীর মোকাবিলা করতে হলো এবং তিন ঘণ্টা প্রচন্ড যুদ্ধের পর খৃস্টানদের সকল অহঙ্কার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো।
করেছেন Level 2
এতো কস্ট করে বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
05 নভেম্বর 2018 "পড়াশোনা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ran Ran Ran Level 7
1 উত্তর
05 জুন 2020 "পড়াশোনা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Fahad Level 2
1 উত্তর
18 অক্টোবর 2018 "পড়াশোনা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ran Ran Ran Level 7
1 উত্তর
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...