বর্তমানে আমাদের মধ্যে যে ব্যাধিটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, সেটি হল বিরোধী মতের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল না থাকা এবং কারো সাথে মতের সামান্য অমিল হলে তার বিরুদ্ধে গালি-গালাজ ও ট্রলের অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। সাধারণদের মাঝে তো বটেই দ্বীনদার শ্রেণির মাঝেও এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর বুলালেই দেখা যায়, আমাদের ভাইরা একে অন্যকে এমন নোংরা ভাষায় আক্রমণ করছেন যেগুলো মুখেও আনা যায়না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিভিন্ন জায়গায় দ্বীনি মাহফিল ও মজলিসগুলোতেও এখন ঈমান আমলের বয়ানের পাশাপাশি গালিগালাজ ও গীবতের চর্চা হয়।
.
কারো সাথে মতবিরোধ হলে বা কারো ফাতওয়া-মাসাইল ও কর্মকান্ড ভুল মনে হলে সংশোধনের নিয়তে দরদের সাথে আলোচনা করা যায়। এর জন্য সালাফদের রেখে যাওয়া নীতি ও আদর্শ আমাদের সামনে আছে। কিন্তু গালি গালাজ করা, ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করা, পূর্বের এমন পাপ কাজ যার জন্য সে অনুতপ্ত হয়েছে সেসব নিয়ে আলোচনা করা কোনভাবেই সংশোধনের পদ্ধতি হতে পারেনা। অথচ এই কাজগুলো অনেকে দ্বীনের কাজ মনে করে করছে। এসব যে গুনাহের কাজ এই অনুভূতিও নেই অনেকের মাঝে। যারা এই কাজগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাদের সামনে আজ দুটি হাদীস উল্লেখ করবো। আশা করি হাদীসদুটিই আমাদের সংশোধনের জন্য যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
.
১। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطّعّانِ، وَلَا اللّعّانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَذِيءِ.
মুমিন কটুভাষী ও লানতকারী হতে পারে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলতে পারে না। তিরমিযী ১৯৭৭
.
২। আবু বারযা আল আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ قَلْبَهُ! لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلَا تَتّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ؛ فَإِنّهُ مَنْ يَتّبِعْ عَوْرَاتِهِمْ يَتّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.
হে ঐ সকল লোক, যারা মুখে ঈমান এনেছে, কিন্তু ঈমান এখনো তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না, তাদের অপ্রকাশিত দোষ-ত্রুটির অনুসন্ধান করো না, কেননা যে ব্যক্তি তাদের দোষ অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। মুসনাদে আহমাদ ১৯৭৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৪৮৮০
.
এই হাদীস থেকে বোঝা গেল যে, মুসলিমদের দোষচর্চা করা, তাদের দোষ ত্রুটি প্রকাশে উৎসুক হওয়া মূলত মুনাফিকদের কাজ, যা এমন লোকদের থেকেই প্রকাশ পেতে পারে, যারা মুখে নিজেদের মুসলিম দাবী করলেও অন্তরে এখনো ঈমান প্রবেশ করেনি। আর এই ধরনের লোকদের জন্য আখিরাতে যে ভয়ানক আজাব অপেক্ষা করছে তা তো আমাদের কল্পনারও বাইরে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসকল মন্দ কাজ হতে হেফাজত করুন।
--
তবে এক্ষেত্রে অনেকে আবার ভ্রান্তির শিকার হন, অন্যদের বিরুদ্ধে তো তারা ঠিকই জবান এবং কলম চালান, অথচ নিজ পছন্দের ব্যাক্তি ও দলের কুরআন হাদীস বিরোধী বক্তব্য ও স্পষ্ট ভুলের ব্যাপারে আলোচনা করলে সেটাকে গীবত মনে করেন। সেসকল ভাইদের জেনে রাখা দরকার যে, সব ধরণের দোষ বর্ণনা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। উলামায়ে কেরাম এই ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করেছেন। নির্ভরযোগ্য আলেমদের থেকে এই ব্যাপারে জেনে নেয়া কাম্য।