165 বার প্রদর্শিত
"ধর্ম ও বিশ্বাস" বিভাগে করেছেন Level 1
দুনিয়ার জীবনটা হল ক্ষণস্থায়ী। অল্প কিছু সময়ের জন্য এখানে এসেছি আমরা। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনটা হল বিশাল সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির ন্যায় কিংবা তার চেয়েও সামান্য। এখানে এসেছি আমরা আখিরাতকে সুসজ্জিত করতে। ইনশাআল্লাহ কিছুদিন পর আমরা সকলেই দুনিয়ার এই ক্ষুদ্র সফর শেষে পাড়ি জমাবো আমাদের সম্মানিত পিতা আদম আলাইহিস সালামের আদি বাসগৃহ জান্নাতে। জান্নাতই আমাদের আসল বাড়ি। তাই জান্নাতের জন্যই আমাদের সকল ব্যস্ততা হওয়া উচিত।

ক্ষণিকের দুনিয়ার মিছে চাকচিক্যের পেছনে পড়ে আসল বাড়ির কথা ভুলে যাওয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেনা। কিন্তু জীবনভর এই অনর্থক কাজই করে চলেছি আমরা। দুনিয়া নিয়ে আমাদের ব্যস্ততা দেখলে মনে হয় যেন দুনিয়াই সব;আখিরাত বলে কিছু নেই। বাল্যকাল থেকে যৌবনকাল, যৌবনকাল থেকে বার্ধক্য পুরোটা সময় শুধু দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত আমরা। কিভাবে আরো বেশি সম্পদের মালিক হবো, কিভাবে আরো সুন্দর বাড়ি বানাব, কিভাবে আরো দামী গাড়ির মালিক হবো এসব চিন্তাই ঘিরে রাখে আমাদের। অথচ কিভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবো, কিভাবে আখিরাতে আরো বেশি মর্যাদার অধিকারী হবো, কিভাবে জান্নাতকে আরো বেশি সুসজ্জিত করবো এসব চিন্তাই হওয়া দরকার ছিল আসল চিন্তা।

.

অনেকে আবার ভাবে, দুনিয়াটা এখন একটু সাজিয়ে নেই। পরে যখন ময়দানের ডাক আসবে বা কাজ কর্ম কমে আসবে তখন দ্বীনের জন্য নামবো। অভিজ্ঞতা বলে, এমনটি যারা ভাবে তাদের অধিকাংশের পক্ষেই পরবর্তীতে আর দুনিয়া ছেড়ে আখিরাত নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার এবং এর জন্য সময় বের করার সুযোগ হয়না।

তাই আসুন, দুনিয়াকে দুনিয়ার মতই মূল্য দেই;জীবনের লক্ষ্য না বানাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمِنْكَبِي فَقَالَ ‏"‏ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَعُدَّ نَفْسَكَ فِي أَهْلِ الْقُبُورِ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ لِي ابْنُ عُمَرَ إِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالْمَسَاءِ وَإِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالصَّبَاحِ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ قَبْلَ مَوْتِكَ فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِي يَا عَبْدَ اللَّهِ مَا اسْمُكَ غَدًا ‏"

ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেনঃ পৃথিবীতে এমনভাবে জীবনযাপন করো, যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির। আর নিজেকে কবরবাসী মনে করবে।

মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেনঃ তুমি সকালে উপনীত হলে বিকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবে মনে করোনা এবং বিকালে উপনীত হলে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবে মনে করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে কাজে লাগাও, মৃত্যু আসার আগেই জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাও। কেননা, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি তো জান না, আগামীকাল তুমি কি নামে অভিহিত হবে। (তিরমিজী- ২৩৩৩)

.

আরেক হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: ذَكَرَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا عِنْدَهُ الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا تَسْمَعُونَ، أَلَا تَسْمَعُونَ، إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ، إِنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সাহাবীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দুনিয়ার ব্যাপারে আলোচনা করলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা কি শুনতে পাওনা! তোমরা কি শুনতে পাওনা যে, সাদাসিধা জীবনযাপন করাই হল ঈমানের অংশ, সাদাসিধা জীবনযাপন করাই হল ঈমানের অংশ। (আবু দাউদ- ৪১৬১)  

.

এসকল হাদীসের বাস্তব নমুনা ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ। তাঁরা দুনিয়াকে হাতের নাগালে পেয়েও লাথি মেরে পেছনে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হয়েও কখনো বিলাসিতার ধারে কাছেও যাননি। কখনো তিনি মিহি আটার রুটি খাননি। তাঁর ঘরে কখনো লাগাতার তিনদিন পেটভরে খাবারের আয়োজন হয়নি। আরামদায়ক বিছানায় শোয়ার সুযোগ হয়নি, খেজুরের পাতার বিছানায় ঘুমাতেন,যার ফলে পিঠে দাগ পড়ে যেত। আরো কত কত কষ্ট করেছেন তিনি। অথচ আমরা...

 .

প্রিয় পাঠক, মৃত্যুই যখন আমাদের প্রকৃত ভবিষ্যত, তাহলে অন্য কোন ভবিষ্যত নির্মানের জন্য আখিরাতকে পেছনে রাখছি ! জান্নাতই যখন আমাদের আসল বাড়ি, তাহলে অন্য কোন বাড়িকে সাজানোর জন্য জান্নাতের কথা ভুলে আছি !

তাই আসুন দুনিয়ার ধোঁকায় না পড়ি, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মত সাদাসিধা জীবনযাপন করি, আখেরাতের পাথেয় অর্জন করি।

আল্লাহ তাআলা সহজ করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।

এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে দয়া করে প্রবেশ কিংবা নিবন্ধন করুন ।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
02 ফেব্রুয়ারি 2019 "ধর্ম ও বিশ্বাস" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন শারিউল ইসলাম নাইম Level 7
1 উত্তর
1 উত্তর
30 অগাস্ট 2019 "অন্যান্য" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Asif Shadat Level 7
5 টি উত্তর
20 মার্চ 2019 "মতামত" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Asif Shadat Level 7
1 উত্তর
08 ফেব্রুয়ারি 2019 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md monirul Level 6
1 উত্তর
03 জানুয়ারি 2019 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন শারিউল ইসলাম নাইম Level 7
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...