286 বার প্রদর্শিত
"সাধারণ" বিভাগে করেছেন Level 7

2 উত্তর

+4 টি ভোট
করেছেন Level 6
 
সর্বোত্তম উত্তর

দক্ষিন আফ্রিকান বাবা ও কানাডিয়ান মা এর সন্তান ইলনের পুরো নাম “ইলন রিভ মাস্ক,” জন্ম ১৯৭১ সালে, দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল ইলনের। মাত্র নয় বছর বয়সে ঘরে বইয়ের অভাবে তিনি শেষমেষ পড়া শুরু করেন বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, যা তিনি একসময় পড়া শেষও করে ফেলেন! স্কুল জীবনে অনেকটাই চুপচাপ ছিলেন তিনি, যাকে আমরা বলি ইন্ট্রোভার্ট। একারণে স্কুল পড়ুয়াবস্থায় প্রচন্ড বুলির শিকার হতেন এবং তাকে একবার হসপিটালেও নেয়া হয়। জীবনের শুরুতেই এত এত মানসিক চাপ কিন্তু কোনোভাবেই তাঁর সাফল্যের অগ্রযাত্রাকে শিকল পড়িয়ে রাখতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ পারদর্শিতা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ব্লাস্টার নামক একটি মজাদার ভিডিও গেম তৈরি করে ফেলেন। মজার ব্যাপার হলো, সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেন!

শিক্ষাজীবন:

দক্ষিন আফ্রিকার আবশ্যিক সামরিক জীবনকে “না” বলে মাস্ক কানাডা পাড়ি দেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়া থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বলে রাখা ভালো, স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কমার্স কিংবা আর্টসে পড়াশুনা করতে গেলেও অনেকের মধ্যেই সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যারিয়ার গড়ার সুপ্ত একটা ইচ্ছা থাকে। তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন ইলন মাস্ক। কেননা তিনি একসময় অর্থনীতির শিক্ষার্থী হওয়ার পরও পরবর্তীতে তিনি কিন্তু বৈজ্ঞানিক কর্মক্ষেত্রেই সফল হতে পেরেছেন।

এনার্জি ফিজিক্সের উপর পিএইচডি করার উদ্দ্যেশে মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ঠিক করেন যে, পিএইচডি বাদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং ঠিক ২দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন।

সফলতার শুরু:

সময়টা ছিল ইন্টারনেটের শুরুর দিকে, বিল গেটসের মতে যা,

“Internet is the new big thing”

ইন্টারনেটের অপার সম্ভাবনাই মূলত ইলন মাস্ককে জিপ টু তৈরিতে অনুপ্রেরণা দেয়, এমন একটি সফটওয়্যার যা শহরের খবরের কাগজের জন্য ইন্টারনেট গাইড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জিপ টু এর সিইও পদের জন্য মাস্ক আগ্রহী হলে তাঁর নিজের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদই তাঁকে বাঁধা দেয়। ইতিমধ্যে বিখ্যাত টেক কোম্পানি কমপ্যাক জিপ টু কে অধিগ্রহণ করলে মাস্ক পকেটে পুরে নেন ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জিপ টু এর পাট চুকিয়ে মাস্ক নিয়ে আসলেন এক্স ডট কম নিয়ে। এক্স ডট কম কী জানো? আমাদের দেশে বিকাশ-ইউক্যাশের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের ধারণাটাই মাস্ক এক্স ডট কমের মাধ্যমে দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মানি ট্রান্সেকশনের মাধ্যম পেপ্যাল এ। ২০০২ সালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে পেপ্যালকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় যা তখনকার সময়ে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অধিগ্রহণ ছিল। পেপ্যালের ১১.৭ শতাংশ শেয়ার ইলন মাস্কের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জিপ টু ও এক্সডটকম-পেপ্যাল এর পর মাস্ক কিন্তু চাইলেই মিলিয়নিয়ারের তকমা দিয়ে অনায়েসেই বিলাসী এক জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু মাস্কের স্বপ্নটা ছিল আরও অনেক বড়, আরও অনেক সুদূরপ্রসারী।

স্পেসএক্স দিয়ে মহাকাশজয় :

ইলন মাস্কের ইচ্ছা ছিল, আন্তঃমহাদেশীয় রকেট দিয়ে তিনি ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে পৃথিবী থেকে মহাকাশে পন্য সরবরাহ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, রকেট কেনার উদ্দ্যেশে মাস্ক উড়াল দিলেন রাশিয়ায়। কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে দেখেন যে এক একটি আইসিবিএম (আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র) এর দাম প্রায় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যা একবারই ব্যবহারযোগ্য। এরকম অবিশ্বাস্য দাম শুনে ইলন মাস্ক হতাশ হয়ে পড়েন। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিকারকেরাও মাস্কের সাথে ঠাট্টা মশকরা শুরু করে। দেশের পথে ফিরে আসার পথিমধ্যেই মাস্ক ঠিক করেন যে তিনি নিজেই স্বল্পমূল্যে এমন সব রকেট বানাবেন যা পৃথিবীর অরবিটের ছাড়িয়ে পাড়ি দিতে সক্ষম এবং একইসাথে যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য। রকেট পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার স্লোগানে মাস্ক যুক্ত করেন,

“এটা পাগলাটে যে, আমরা এসব অত্যাধুনিক রকেট বানাই এবং প্রতি অভিযানের শেষে এগুলো ধ্বংস করে দেই। এটা সত্যিই হাস্যকর।”

২০০২ সালের ৬ই মে ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স (স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলোজিস কর্পোরেশন)।
স্পেসএক্স দিয়ে শুরুতেও ইলন মাস্ক বাজিমাত করে দিয়েছিলেন, তা ভাবা ভুল। বরং পরপর তিনটি ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণের পর অনেকে স্পেসএক্স এর অন্তিম সময় দেখে ফেলেছিলেন । তবুও ইলন মাস্ক হাল ছাড়েননি। তিনি নিজের টেকনোলজির উপর শতভাগ আস্থা রেখেছিলেন কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর এই প্রযুক্তির উপর ভর করেই তাঁর স্বপ্ন পারি দিবে মহাকাশে। শত বাঁধা ও ঝুঁকিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হলো। চাইলেই কিন্তু রবার্ট ব্রুস আর মাকড়শার সেই গল্পটার সাথে আমরা ইলন মাস্ক-স্পেসএক্স এর যোগসূত্র খুঁজে বের করতেই পারি, তাই না?

স্বপ্ন যখন মঙ্গলে:



Elon Musk in 67th International Astronautical Congress
ইলন মাস্ক ছিলেন এমন একজন মানুষ, যার মস্তিষ্ক সবসময়ই ব্যস্ত থাকতো সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তাভাবনায়। ইলন মাস্ক মনে করতেন, মানবজাতির পদচারনা শুধুমাত্র পৃথিবী থাকাটা হাস্যকর, কেননা পৃথিবীর বুকে যেকোনো মহাবিপর্যয়ে নিমিষেই মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। তাই ইলন মাস্ক নিকট ভবিষ্যতেই মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন। মাস্ক মনে করতেন, পৃথিবী থেকে ৫৪.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পারি দেয়ার খরচ যোগানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো রকেট পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। স্পেসএক্স তৈরি করলো ফ্যালকন-৯, ফ্যালকন হেভি, প্রস্তাব দিলো বিএফআর এর মত অত্যাধুনিক স্পেসক্রাফটের। মাস্ক ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মঙ্গল অভিযানকে বাস্তবে রূপ দিতে চান। আর ফ্যালকন-৯ থেকে শুরু করে আজকের ফ্যালকন হেভি একটা জিনিসই প্রমাণ করে, আর তা হলো ইলন মাস্কের সেই মিশন টু মার্স এখন অনেকটাই বাস্তব। মাস্ক মঙ্গল নিয়ে এতটাই আশাবাদী যে তিনি পৃথিবীতে নয়, বরং মঙ্গল গ্রহে মৃত্যুবরণ করারও ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন!

টেসলা, হাইপারলুপ এবং অন্যান্য:

স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার ২ বছর পর ইলন মাস্ক ঠিক করলেন, পৃথিবীর জ্বালানির ঘাটতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন টেসলা ইনকর্পোরেটেড, সৌর ও বৈদ্যুতিক জ্বালানি শক্তিচালিত মোটরগাড়ির অনন্য এক প্রতিষ্ঠান। ইলন মাস্ক নিশ্চিত করেন যে, ক্যালিফোর্নিয়ার টেসলার ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়া প্রতিটি গাড়ি যেন ১০০% পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়।

যদি আপনাকে  বলা হয়, ঢাকা থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তে  যাতায়াত করতে পারবেন মাত্র কয়েক মিনিটে, অবাক হবা নিশ্চয়ই। ইলন মাস্ক এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলেছেন, যেখানে এসব কিছু সম্ভব। তিনি এর নাম দিয়েছেন হাইপারলুপ। মাটির নিচ দিয়ে লুপের মধ্য দিয়ে চলে হাইপারস্পিডের এক ক্যাপস্যুলের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের দূরত্ব চলে আসবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার।

ইলন মাস্কের নানান উদ্যোগের মধ্যে আরো রয়েছে সোলার সিটি যেখানে মাস্ক পুরো পৃথিবীকে সৌর শক্তির নিচে আনতে চান, ওপেন এআই যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার কাজ করা হয়, নিউরালিংক, গিগাফ্যাক্টরির মত আরো অনেক উদ্ভাবনী ধারনা। কয়েকদিন আগে থাইল্যান্ডের এক গুহায় শিশুদের আটকে পড়ার সময়ে ইলন মাস্ক ফ্যালকন ৯ রকেটের তরল অক্সিজেন সরবরাহ করার টিউব দিয়ে তৈরিকৃত একটি মিনি সাবমেরিন দান করে উদ্ধারকর্মীদের সাহায্য করেন।

তথ্যসূত্র:


0 টি ভোট
করেছেন Level 5
ইলন মাক্স হচ্ছেন একজন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।তিনি মহাকাশ ভ্রমন সংস্থা স্পেস এক্সের সিইও ও সিটিও।বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মটরসের সিইও।এছাড়া ও তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ শক্ত গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক।
করেছেন Level 7
খুব ভালো উত্তর তবে ভাই আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানিনা।আপনার প্রোফাইল সম্পাদন করে কিছু জানান ।
করেছেন Level 6
@KHAN ভাই, কেমন আছেন?  
করেছেন Level 5
আলহামদুলিল্লাহ,ভাই।আপনি ভালো আছেন তো?

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

0 টি উত্তর
07 অক্টোবর 2018 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md tushar Level 6
1 উত্তর
1 উত্তর
1 উত্তর
1 উত্তর
1 উত্তর
1 উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি 2020 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Nazmul hasan Level 7
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...