একাদশি বছরে মোট ২৬ টি। যথাঃ উৎপন্না, মোক্ষদা, সফলা, পুত্রদা, ষটতিলা, ভৈমী, বিজয়া,,আমলকী, পাপ মোচনী, কামদা, বরার্থিনী. মোহিনী, অপরা, পাণ্ডব, যোগিনী, দেবশয়নী, কামিকা, পবিত্রা, অজা, পরিবতিনী, ইন্দিরা. পাশাংকুশা, রমা, দেবযানী, পদ্মিনী এবং পরমা। ✳ একাদশীব্রতের নিত্যতা চারটি ১) শ্রীভগবান হরির সন্তুষ্টি বিধান ২) শাস্ত্রোক্ত বিধি প্রাপ্তি ৩) আহারের নিষিদ্ধতা ৪) ব্রতের অকারণে অনিষ্টোৎপত্তি ✳ ১) শ্রীভগবান হরির সন্তুষ্টি বিধান শুক্লা বা কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী দিনে উপবাসী থাকিয়া দ্বাদশী দিনে আহার করিলে ঐ ব্রতে হরির পরমা প্রীতি সঞ্চার হয় । (মৎস পুরাণ ও ভবিষৎ পুরাণ) একাদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ, এই ব্রত নিশ্চয়ই হরির প্রীতিকর । (অগ্নি পুরাণ) কি বিপ্র, কি ক্ষত্রিয়, কি বৈশ্য, কি শূদ্র, কি নারী যে কেহই হউক না কেন, ভক্তি সহকারে বিষ্ণু প্রীতিকর একাদশী ব্রত সাধন করিলে মোক্ষ লাভ করিতে পারে । (বৃহন্নারদীয় পুরাণ) ✳ ২) শাস্ত্রোক্ত বিধি প্রাপ্তি আয়ুক্ষয় যাবৎ একাদশীতে উপবাস কর্তব্য । (অগ্নিপুরাণ) যাব্জজীবন দ্বাদশী পরিত্যাগ করিতে নাই । (বিষ্ণুরহস্য) ✳ ৩) আহারের নিষিদ্ধতা পূর্বদিনে (সংযমদিনে, দশমীতে) রাত্রীভোজন, অপরদিনে (পারণ দিনে, দ্বাদশীতে) রাত্রীভোজন এবং মধ্য দিনে (উপবাস দিনে, একাদশীতে) দিবাভোজন ও রাত্রী ভোজন, উপবাস ফলকামী ব্যক্তি এই ভোজন চতুষ্টয় ত্যাগ করবে । (বৃহন্নারদীয় পুরাণ) ✳ ৪) ব্রতের অকারণে অনিষ্টোৎপত্তি হরিবাসর সমাগত হইলে ব্রহ্মহত্যাদি নিখিল পাতক অন্নমধ্যে অধিষ্টিত হয়, সুতরাং হরিবাসরে আহার করলে যাবতীয় পাতকই গৃহীত হইয়া থাকে । একাদশী না করিলে বিধবা ও মহাত্মা যতিকেও আপ্রলয় অন্ধতামিশ্র নরকে পচ্যমান হইতে হয় । (নারদীয় পুরাণ) ✳ একাদশী দিনে আহার করিলে মাতৃঘাতী, পিতৃঘাতী, ভ্রাতৃঘাতী ও গুরুহন্তা পাপী বলিয়া পরিগণিত হইতে হয়, সে ব্যক্তি বিষ্ণুধাম হইতে বিচ্যুত হইয়া পড়ে । (স্কন্ধ পুরাণ) ✳ পাতকী ব্যক্তি একাকীই নরকে গমন করে সত্য, কিন্তু যে ব্যক্তি একাদশীতে অন্ন ভোজন করে, সে পিতৃগণসহ নরকগামী হয় । (বিষ্ণুধর্ম্মোত ্তর) ✳ হরিবাসর উপস্থিত হইলে তদ্দিনে যখন পুরোডাশও (যজ্ঞায় হবির্বিশেষ) অভক্ষ্য বলিয়া পরিগণিত হয়, তখন অন্নপাকের বিষয় আর কি বলব ? (পদ্মপুরাণ) ✳ বিধবা হইয়া একাদশীতে আহার করিলে তাহার সমস্ত সুকৃত বিনাশ পায় । (কাত্যায়নস্মৃতি ) ✳ একাদশীর নিত্যতা শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ উভয় পক্ষে- ✳ বিষ্ণুরহস্য, স্কন্ধপুরাণ, কুর্ম্মপুরাণ, ও নারদীয় পুরাণে লিখিত আছে শুক্লা একাদশী যেরূপ, কৃষ্ণাও তদ্রূপ জানিবে, ঐ উভয়ে বিন্দুমাত্রও প্রভেদ নাই । ✳ গো, তিল ও ব্রাহ্মন ইহারা কৃষ্ণ বর্ণ হইলেও যেরূপ দোষাবহ নহে, সেরূপ কি কৃষ্ণ, কি শুক্লা উভয়পক্ষীয় একাদশীই উপবাসের যোগ্য। ✳ একাদশীদ্বয়ের ভেদজ্ঞান করিলে আজন্ম পরিত্রানের আর উপায় দৃষ্ট হয় না । (সনৎকুমারের উক্তি) ✳ সংক্রান্তি প্রভৃতিতে – ✳ সংক্রান্তি বা হরিবাসরে একাদশী হইলে তদ্দিনই উপবাসের উপযুক্ত । ঐ তিথি পুণ্যস্বরূপা ও সর্ব্বপাপহারিণী । (কাত্যায়নী স্মৃতি) ✳ নিশ্চিত জানিবে যে, শনি ও রবিবার এবং সংক্রান্তি ও গ্রহণ এই সমস্ত কালে একাদশী ত্যাগ করিতে নাই । (দেবলের উক্তি) ✳ বিষ্ণুরহস্য – ভীষণ আপন্ন অবস্থায় বা বিপুল আনন্দ সময়ে অথবা জননাশৌচে ও মরণাশৌচেও কদাচ দ্বাদশীব্রত ত্যাজ্য নহে । (সূতকাদিতে) ✳ উপবাস দিনে শ্রাদ্ধ নিষিদ্ধ – একাদশী দিনে শ্রাদ্ধ করিলে দাতা, ভোক্তা ও প্রেত তিন জনেরই নরকগতি লাভ হয়। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ) ✳ একাদশী অধিকারী – ✳ আট বৎসর বয়ঃক্রমের পর অপুর্ণ অশীতি বর্ষ যাবৎ শুক্লা ও কৃষ্ণ উভয়পক্ষীয় একাদশীতে উপবাস করা মানবের বিধেয় । (কাত্যায়ন স্মৃতি) ✳ কি বৈষ্ণব, কি শৈব সকলের পক্ষেই একাদশীব্রত করা কর্তব্য (বিষ্ণুধর্মোত্তর) ✳ স্কন্ধ পুরাণে শিবের উক্তি – হরিবাসরে আহার করিলে তাহাকে শৈব বা সৌর অথবা আশ্রমী কিংবা তীর্থসেবী বলিয়া পরিগণিত করা যায় না, সে শ্বপচ অপেক্ষাও সমধিক পাপী । হে শঙ্করী ! মদ্ভক্তি আশ্রয়পূর্বক হরিবাসরে আহার করিলে সেই দুষ্ট পাতকীকে মদীয় অপ্রিয়কারী বলে জানবে । ✳ মহাভারতে উদ্দ্যেগ পর্বে প্রকাশিত আছে – জল, ফল, মূল, ক্ষীর, ঘৃত, ব্রহ্মন কামনা, গুরুর বচন ও ঔষুধ এই আটটি ব্রত নাশক নহে । ✳ কাশ্যপপঞ্চরাত্র ে লিখিত আছে, দীক্ষিত ও ভক্তনিষ্ঠ যে বৈষ্ণব ইহধামে মদীয় উথান- দিবসে, শয়নাহে ও পার্শ্ব- পরিবর্ত নে ফল মূল সেবন করে আমি কদাচ তদীয় অপরাধ মার্জ্জনা করি না, আপ্রলয় তাহাকে ভীষণ নরকে নিপাতিত করিয়া রাখি । একাদশী মাহাত্ম্য ✳ যেরূপ দাবানল সমুদ্রগত হইয়া গহবরস্থ শুষ্ক ও আর্দ্র কাষ্ঠ্রাশিকে ভস্মীভূত করে, তদ্রুপ শ্রীহরিবাসরে নিখিল পাতক বিনাশ করিয়া দেন । (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ) ✳ হে বিপ্র ! কলিযুগে যে সকল ব্যক্তি উচ্ছিন্ন পথাবলম্বী ও নিষ্ঠুরতা নিবন্ধন কলূষিতাত্মা হইয়াছে, একাদশী ভিন্ন সংসারে তাহাদিগের উদ্ধারের উপায় আর নেই। ✳ সর্বশেষ লিখিত আছে একাদশী- ব্রত-কথা শ্রবণ করিলে, তদব্রতানুষ্ঠানে অনুমোদন করিলে এবং একাদশী ব্রতাচরণার্থ মানবগনের (হৃদয়) শ্রদ্ধা জন্মাইয়া দিলে অখিল পাপ হইতে পরিত্রান লাভ করতঃ গরুধ্বজের অত্যুত্তমপদ বৈকুন্ঠধামে গতি লাভ করিতে পারে। ✳ একাদশী দ্বিবিধ – সম্পূর্ণা ও বিদ্ধা । বিদ্ধাও আবার পূর্ববিদ্ধা, পরবিদ্ধা প্রভৃতি ভেদে অনেকবিধ । তাহার মধ্যে পূর্ববিদ্ধা পরিত্যজ্য। ✳ একাদশী, ষষ্ঠী, পূর্ণিমা, চতুর্দ্দশী, তৃতীয়া, চতুর্থী, অমাবস্যা ও অষ্টমী এই সকল তিথি পরবিদ্ধা হইলে উপবাসে গ্রাহ্য, কিন্তু পূর্ববিদ্ধা হইলে পরিত্যজ্য। (সারদা পুরাণ) ✳ কুর্ম্পুরাণ, নারদীয় পুরাণ, বিষ্ণুরহস্যে লিখিত আছে – দশমী শেষসংযুক্ত একাদশীতে উপবাস করিলে, সেই মূঢ়মতির দ্বাদশ বার্ষিকী একাদশীর ফল হ্রাস পায় । উদাহরণ – ক) গান্ধারীর ১০০ পুত্র নিহিত (ধৃতরাষ্ট্র মৈত্রিয় সংবাদ) খ) সীতার বনবাস (বাল্মিকী মুনি) গ) মান্ধাতৃপত্নীর পতি, পুত্র ও বান্ধব বিয়োগ (বশিষ্ট মুনি) ✳ যে শাস্ত্রে দশমীবিদ্ধা দ্বাদশী প্রতিষ্ঠাতা আছে, ব্রহ্মোক্তি হইলেও তাহা আমার নিকট শাস্ত্র বলিয়া গ্রাহ্য নহে । (সূত-শৌনক সংবাদ) ✳ মনুষ্যেরা শুক্রমায়ায় বিমোহিত হইয়া দানবজয়ার্থ দশমীবিদ্ধা একাদশী ব্রত করিতেছে, অতএব হে মার্কেন্ডেয়, তোমার মঙ্গল হউক ! তুমি মদীয় আদেশে ধরাতলে গমন পূর্বক দশমীবেধ বিষয়ে শুক্রমায়া বিধুরিত কর । ✳ যে ব্যক্তি দশমীবিদ্ধা দ্বাদশীতে উপবাস করে, তাহাকে ভগবদ্বিদ্বেষী বলিয়া অবগত হইবে । কেননা, ভগবান দ্বাদশীরূপ পরিগ্রহ করিয়াছেন, সুতরাং দশমীবিদ্ধা দ্বাদশী পরিত্যাজ্য, তাহাতে সন্দেহ নাই । ✳ সূর্যোদয়ের পূর্বে দুই মুহূর্ত একাদশী থাকিলে তাহাকে সম্পূর্ণা বলা হয় । (স্কন্ধপুরাণ, গরুঢ়পুরাণ, শিবরহস্য, ভবিষ্যতপুরাণ) ✳ সন্ধিগ্ধা একাদশী – আদিত্যোদয়ের পূর্বে ঘটিকাত্রয়ব্যাপি নী (গরূড় পুরাণ) ✳ অরুণোদয়ের বিদ্ধা বর্জন ক) বেধ – সার্দ্ধ তিন ঘটিকা । খ) অতিবেধ – প্রভাদর্শন হইতে দুই ঘটিকা গ) মহাবেধ – সূর্য দৃশ্য হইতেছে বা না হইতেছে । ঘ) যোগ – আদিত্য উদয়ের বিহিত বেধ । ✳ যদি একাদশী যোগ দ্বারা দুষ্ট হয়, তবে তৎফল রাক্ষস দ্বারা গৃহীত হয়ে থাকে । এইরূপ বাস্কলিমা দৈত্য মহাবেধের ফল, জম্ভাসুর অতিবেধের ফল এবং মোহিনী বেধের ফল গ্রহণ করে । ব্রহ্মা তা মোহোনীকে সমর্পন করেছেন । (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)