প্রথমে টবে করে চারা কিনে আনুন।গোলাপ শীত ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের ফুল। অধিক উষ্ণ ও আর্দ্রতায় গোলাপ ভালো হয় না। ২২-৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা, ৮৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ১০০-১২৫ সেমি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী। গোলাপ চাষের জন্য ঊর্বর দোঁ-আশ মাটি উত্তম। ফুলের গুণগতমান সূর্যালোকের উপস্থিতির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর। বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।এঁটেল মাটি গোলাপ চাষের জন্য ভালো না। টবের জন্য সার মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে, পানি না জমে। ১ ভাগ দো-আঁশ মাটি, ৩ ভাগ গোবর সার বা কম্পোষ্ট, ১ ভাগ পাতা পচা সার, আধ ভাগ বালি (নদীর সাদা বালি হলে ভালো) দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে এক মুঠো সরিষার খৈল ও এক চামচ চুন মিশিয়ে ১টি ৮ ইঞ্চি টবে একমাস রেখে দিতে হবে। এই একমাস টবে পানি দিয়ে মাটি উল্টে পাল্টে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভালো হবে। মাটির মিশ্রণে ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া যায়। টবে নিচের কয়েক সেমি পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমনভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হবে।চারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটির গোল্লাটি অবিকল আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিতে হবে। মাটির গোল্লাসহ চারার গোড়ার শিকড় বেরিয়ে থাকা অবস্থার চারা গাছ না নেওয়াই ভালো। বিশ্বস্ত এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত। চারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।খোলামেলা আলো বাতাসপূর্ণ এমন স্থানে টব রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্য কিরণ পায় এবং অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা পায়। বিকেলের রোদ না লাগানোই ভালো, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছে যাতে চারিদিক হতে আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে গাছটি কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। এজন্য টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে দিতে হবে। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছ রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ও ছায়ায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভালো থাকবে। ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে। টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপের চাষ করা হবে তার জাতের উপর। ছোট জাতের জন্য ৮ ইঞ্চি) টব ভালো। বড় জাতের জন্য ১২ ইঞ্চি বা আরো বড় টব ব্যবহার করতে হয়। বছরের যে কোন সময় টবে গোলাপের চারা বসানো যায়। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস চারা বসানোর উত্তম সময়। এসময় চারা লাগালে বেশি দিন ধরে ফুল পাওয়া যায়, গাছের পরিচর্যা করতে সুবিধা হয, রোগ পোকার আক্রমণও কম থাকে।চারাগাছ বা কলমচারা মাটির গোল্লাসহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টবে কিনতে পাওয়া যায়। চারাটি যদি টবের হয়, তাহলে টব থেকে মাটিসহ চারাটি এমনভাবে নিতে হবে যাতে ভেঙে না যায় বা শিকড়ের কোনো ক্ষতি না হয়। ভেজা মাটির গোল্লাসহ চারা সংগ্রহ করলে তা শুকিয়ে নিতে হয়। চারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো বা মরা ডাল হালকা ছেঁটে দিতে হবে। এরপর চারাটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের ওপরে কিছু কম্পোষ্ট সার দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি হালকা চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। চারা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কুঁড়ি বের হবার গিট বা পর্বটি মাটির ওপরেই থাকে।টবে বসানোর পর অন্তত ২-৩ বার পানি দিতে হবে। চারা অবস্থায় গাছ যাতে প্রখর রোদ বা বৃষ্টির ঝাপটা থেকে রক্ষা পায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রথম অবস্থায় ৩-৪ ঘণ্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে ৭-৮ ঘণ্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে গোলাপ ভালো হবে। টব বসাবার পর গাছ ধরে গেলে একমাস পর থেকে ১৫ দিন বা এক মাস পর পর সার দিতে হয়। শীতের ঠিক পরেই অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরের ৮-১০ সেমি মাটির স্তর তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার ও নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হয়। এর পর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হয়। শীতকালে গাছ ছাটার পর, প্রতি টবে ৩ মুঠা গুঁড়া গোবর সার ও ১ মুঠা স্টিমড্ হাড়ের গুঁড়া বা স্টেরামিল প্রয়োগ করিতে হইবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে ১ মাস অন্তর অন্তর ১ মুঠা করে স্টিমড্ বোন মিল বা স্টেরামিল প্রয়োগ করতে হবে।সাধারণত ২০-২৫ সেমি বড় রেখে ডাল ছেটে দিতে হয়। ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেতলে বা ছিঁড়ে না যায়। এ জন্য ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হয়। সাদা, হলুদ, হালকা হলুদ ও দো-রঙা জাতের গোলাপ গাছ খুব হালকা ছাট আর লাল জাতের গোলাপ গাছে শক্ত ছাট দিতে হয়। শুঁয়ো পোকা বা অনিষ্টকারী অন্য যে কোন পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত। লাল মাকড়সার আক্রমণ ও ডাইব্যাক রোগই মারাত্মক। সেচের সময় টবে জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে পানি বের হবার পথ করে দিতে হবে। গোলাপ ফুল সাধারণত কুঁড়ির পর্যায়ে আসার পর কাটা উচিত। কাট ফ্লাওয়ার হিসাবে ফুল লম্বা পুষ্প দন্ড কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হয়। ফুল কাটার কাজটি খুব সকালে অথবা শেষ বিকেলে করা উচিত। ফুলদানীর পানিতে ৩ শতাংশ গ্লুকোজ মিশ্রিত করে তামার ফুলদানির মধ্যে ডুবিয়ে ফুলদানির মুখে জড়িয়ে রেখে কাট ফ্লাওয়ার আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। এভাবে যত্ন নিয়ে গোলাপ চাষ করলে একটি আদর্শ লম্বা কাণ্ডযুক্ত গোলাপ গাছের জাত প্রতি বছর প্রায় ১৫ থেকে ৩০ টি ফুল উৎপন্ন করে। সংগৃহিত