৬২ ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যে অনেক আগেই বিষাক্ত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে ৮ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর। নদীটির পানিতে এন্টিবায়োটিকসহ হাসপাতালের বর্জ্যও মিশছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমেক্সাসিলিন, পেনিসিলিন, সিপ্রোফ্লোক্সাক্সিন আর অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়েটিকও রয়েছে এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের খোলস, স্যালাইন, সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ, সিরাপ ইত্যাদি হাসপাতাল-বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলার কারণেই এন্টিবায়োটিক পানিতে মিশছে।বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন অনেক কমে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পানির গুণাগুণ। রাজধানী ঢাকার প্রাণরূপী বুড়িগঙ্গা এখন নগরবাসীর আবর্জনা ফেলার ভাগাড় মাত্র। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে মাছ ও জলজ প্রাণী বসবাসের জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। অপরদিকে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন মাত্রা কমপক্ষে ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায়।
চলাচলকারী নৌযান থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ কালো তেল, পোড়া মবিল ফেলে বুড়িগঙ্গার পানিকে আরো বিষিয়ে তোলা হচ্ছে।বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে পরিবেশবিদগণ যেসব সুপারিশ করেছেন, সে সবের মধ্যে রয়েছে: পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন, গৃহস্থালি বর্জ্য পানি প্রবাহে ফেলা থেকে বিরত থাকা, ট্যানারিগুলো জরুরিভিত্তিতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন ও বর্জ্য পরিশোধন করা, শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোনাগার (ইটিপি) স্থাপন এবং নিয়মিত তা পরিচালনা করা, নৌযানের ডিজাইনে বর্জ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার স্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলা, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নৌযানের বর্জ্য সংগ্রহকরণ ও তা পরিশোধনপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ, নৌযানের বর্জ্য ও তেল নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকা।