মানব বিবর্তন বা মানুষের উৎপত্তি বলতে বিবর্তন এর মাধ্যমে অন্যান্য হোমিনিড থেকে একটি আলাদা প্রজাতি হিসেবে হোমো স্যাপিয়েন্স- দের উদ্ভবকে বোঝায়। এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যয়ন করতে হলে বিজ্ঞানের অনেক শাখার সাহায্য নিতে হয়, যেমন: নৃবিজ্ঞান, প্রাইমেটবিজ্ঞান, জীবাশ্মবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং জিনতত্ত্ব। "মানুষ" বা "হিউম্যান" শব্দটি দ্বারা এখানে প্রকৃতপক্ষে কেবল হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদেরকে বোঝানো হচ্ছে, যদিও মানব বিবর্তন গবেষণা করতে গিয়ে অস্ট্রালোপিথেকাস গণের অনেক প্রজাতি নিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়- স্বভাবত সেগুলোর আলোচনাও এই বিষয়ের অধীনেই হয়। আনুমানিক ২৩ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে হোমো গণটি অস্ট্রালোপিথেকাস গণ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। হোমো গণে অনেক প্রজাতিরই উদ্ভব ঘটেছিল যদিও একমাত্র মানুষ ছাড়া তাদের সবাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ধরণের বিলুপ্ত মানব প্রজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে হোমো ইরেক্টাস যারা এশিয়ায় বাস করতো এবং হোমো নিয়ানডার্টালেনসিস যারা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। আর্কায়িক হোমো স্যাপিয়েন্স-দের উদ্ভব ঘটেছিল আনুমানিক ৪০০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ বছর পূর্বের সময়কালের মধ্যে। আর্কায়িক বলতে হোমো স্যাপিয়েন্সদের প্রাচীনতম সদস্যদের বোঝানো হয় যারা প্রজাতিগত দিক দিয়ে এক হলেও আধুনিক মানুষের চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে পৃথক ছিল। দেহের অভ্যন্তরীন গড়নের দিক থেকে সম্পূর্ণ আধুনিক মানুষের উদ্ভব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অনুকল্প হচ্ছে "আউট অফ আফ্রিকা" বা "আফ্রিকা থেকে বহির্গমন" অনুকল্প যার সারকথা হচ্ছে আমরা আফ্রিকাতে উদ্ভূত হওয়ার পর আনুমানিক ৫০,০০০-১০০,০০০ বছর পূর্বে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছি। আমাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির সময়টাতেই এশিয়া থেকে হোমো ইরেক্টাস (যাদেরকে ইরেক্ট ডাকা হয়) এবং ইউরোপ থেকে নিয়ানডার্টালরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আরেকটি ভিন্ন অনুকল্প হচ্ছে, আনুমানিক ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে ইরেক্ট বা এরগ্যাস্টরা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল, এদের উত্তরপুরুষ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক ভাবেই আমাদের উৎপত্তি ঘটেছে, তবে ভৌগলিকভাবে পৃথক সেসব হোমো-দের মধ্যে অন্তঃপ্রজনন সম্ভব ছিল। প্রতিনিয়তই মানব বিবর্তন সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি আমরা।