কেবল ভালোবাসা দিয়ে কোনো একটি সম্পর্ককে চিরস্থায়ী করা যায় না। সম্পর্ক টিকে থাকে কিছু বাস্তব উপাত্তের ওপর। সেই উপাত্তগুলোকে বোঝাতে আমার নিজের তৈরি একটি শব্দ আছে। ওটা দিয়েই বরং সম্পর্কের হিসাব-নিকাশ কষি। ‘ফুস’ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় আছে কম-বেশি আমাদের সবার। তুচ্ছ বা অসার অর্থে ব্যবহার করে থাকি এই অর্থহীন শব্দটি। কিন্তু তা যদি ইংরেজিতে লেখা হয়, তবে কী দাঁড়ায়? FUSH. আপাতদৃষ্টিতে এ শব্দটিও অর্থহীন মনে হতে পারে। এটিকে ভেঙে বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবো- F-তে Faith (বিশ্বাস বা আস্থা) + U-তে Understanding (বোঝাপড়া বা মতের মিল) + S-তে Sharing (ভাগাভাগি বা অংশগ্রহণ) + H-তে Honor (শ্রদ্ধাবোধ)। একটি খাট কিংবা টেবিলের যেমন চারটি পা থাকে, তেমনি একটি সম্পর্কের চারটি পা আমার কাছে এই শব্দ-চতুষ্কোণ। যদি কোনো কারণে খাটের বা টেবিলের চার পায়া’র একটি ভেঙে যায় বা ক্ষয়ে যায়, তবে মুহূর্তেই কাৎ হয়ে পড়ে পুরো শরীর। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই। আমার কাছে ভালোবাসা হলো স্রেফ খাটের ওপর বিছানো সুদৃশ্য বেড-কভার, কিংবা টেবিলের ওপর রাখা সুন্দর টেবিল-ক্লথের বৈ কিছু নয়। ওটা সম্পর্কের শরীরকে ঢেকে রাখে। ময়লা হলে ধুতে হয়, পুরোনো হলে ফেলে দিয়ে নতুন কিছু পাততে হয়। মানে ভালোবাসায় আনতে হয় বৈচিত্র্য, অভিমানকে ঝেরে ফেলে থাকতে হয় পাশে। বেড-কভার বা টেবিল ক্লথের মতো ভালোবাসার কাজ হলো সৌন্দর্য বাড়ানো; স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখা নয়। আবেগীয় ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্ক বেশি দূর এগুনো যায় না। ভালোবাসা একসময় আটকে থাকে ভালোবাসাতেই। এটি ছাড়া সম্পর্কটিতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সম্পর্কের মধ্যে স্পেস একটা বড় বিষয়। নয়তো একসময় হাঁসফাঁস হয়ে ওঠে সব কিছু। ফলে অন্তরালে তাই সম্পর্কের শরীর ক্ষয়ে যায় ঘুণে, ভালোবাসার চাদরে তা ঢেকে রাখা হয় মাত্র; যা কেবলই লোক-দেখানো। সে আর কত দিন? বাতাস এলে উড়িয়ে দেয় চাদর, বসতে গেলে বা কিছু রাখতে গেলে ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে সব। ভালোবাসাকে যারা ভালোবাসে, তারা তাদের সম্পর্কটিকে টিকিকে রাখার স্বার্থে আমার এ কথাগুলো ভেবে দেখতে পারেন। আর যারা তুমুল ভালোবেসেও টেকাতে পারছে না বা পারেনি তাদের সম্পর্ক, তাদের প্রতিও রইল একই আহ্বান। একবার হিসেব কষে দেখুন তো, মিলে কিনা?