মানুষের মস্তিষ্ক প্রকৃতির এক রহস্যময় এবং অসাধারণ সৃষ্টি। “নিউরোপ্লাস্টিসিটি” বৈশিষ্ট্যের কারণে নতুন নতুন জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থেকে নিজেই নিজেকে পরিবর্তিত করে ফেলতে পারে সে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শিক্ষার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনে মস্তিষ্ক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মস্তিষ্ক এতো সহজে কি করে শিক্ষা গ্রহণ করে? বিজ্ঞানীরা আগে ভাবতেন, শৈশবের একটি পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মস্তিষ্কের বিকাশ। এখন আমরা জানি, মস্তিষ্ক মধ্যবয়স এমনকি বার্ধক্য পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু এই প্লাস্টিসিটির ব্যাপারে এখনো গবেষণা চলছে। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, আগে নিউরোসায়েন্টিস্টরা যেভাবে ভাবতেন, প্লাস্টিসিটি আসলে সেভাবে কাজ করে না। প্লাস্টিসিটি নিয়ে আগে যেসব গবেষণা করা হয় সেগুলো ল্যাবের বিভিন্ন প্রাণীর ওপরে পরিচালিত ছিলো। কিন্তু এক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক নিয়েই গবেষণা করা হয়। অলিগোডেনড্রোসাইট নামের এক বিশেষ ধরণের কোষ আছে যা তৈরি করে মায়েলিন। মানুষের মস্তিষ্কের এই অলিগোডেনড্রোসাইট ল্যাবের ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি এবং এর কারণেই সম্ভবত মানুষের মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটিও বেশি। প্রক্রিয়াটি আসলে কিভাবে কাজ করে? আমরা যখন নতুন কিছু শিখতে শুরু করি, তখন নার্ভ সেলগুলো মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি করে। এ কারণে মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা রাখার জন্য এসব কোষ জরুরি। মস্তিষ্কে খুব দ্রুত নার্ভ ইমপালস চলাচল করে, আর মায়েলিন এসব স্নায়ুতন্তুকে নিরাপদ রাখে। এ ছাড়াও মায়েলিন নার্ভ ইমপালস দ্রুত করতে সাহায্য করে এবং তাদের কার্যকারিতা বাড়ায়। আমরা যখন শিক্ষা গ্রহণ করছি, তখন মস্তিষ্কের ওই এলাকায় মায়েলিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ল্যবে ব্যবহৃত ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা যায়, যখন নতুন সংযোগ তৈরি করার দরকার পড়ে তখন পুরনো অলিগোডেনড্রোসাইটের বদলে নতুন অলিগোডেনড্রোসাইট উৎপাদন হয়। কিন্তু ৫৫ জন মৃত মানুষের মস্তিষ্কের ওপরে গবেষণা চলাকালীন সময়ে দেখা যায়, পুরনো অলিগোডেনড্রোসাইটগুলোই বরং আরও বেশি করে মায়েলিন উৎপাদন করতে থাকে। সম্ভবত এ কারণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণীর চাইতে অএঙ্ক বেশি দ্রুত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। যেসব স্নায়বিক রোগ বা জটিলতায় মায়েলিন উৎপাদনের ভূমিকা আছে যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, ভবিষ্যতে সেসব ক্ষেত্রে এই তথ্য কাজে লাগতে পারে বলে মনে করেন গবেষকেরা।ধন্যবাদ।