বেশির ভাগ পুরুষের বাঁকা লিঙ্গ থাকে আংশিক কিংবা একপাশে হেলে থাকে। প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে প্রায় ৪০০জনের লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় বেঁকে যায়। চিকিৎসক সমাজ ও অবস্থাটির নাম দিয়েছেন পেরোনি’জ ডিজিজ। কখনো কখনো একে ফাইব্রাস কেভারোসাইটিস বলা হয়। এ পরিস্থিতিকে ইরেকটাইল টিস্যুর (কেভারনোসা) স্তরগুলোকে ফাইব্রাস স্কার টিস্যু তৈরি হয়।
এ অবস্থাটি এত বেড়ে যায় যে এটা যৌনসঙ্গমকে যন্ত্রণাদায়ক করে তোলে অথবা স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন পুরোপুরি অসম্ভব করে তোলে। কখনো কখনো এ রোগ উত্থিত লিঙ্গকে J কিংবা Uআকারে বাঁকিয়ে তোলে। আবার কখনো কখনো এটা কর্কস্ক্রু বা ছিপি খোলার যন্ত্রের মতো দেখায়।
কী কারণে পেরোনি’জ ডিজিজ ঘটে?
যদিও পেরোনি’জ ডিজিজের সঠিক কারণ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটা জানা যায়, লিঙ্গের কিছু অংশের স্বাভাবিক ইলাস্টিক টিস্যুর জায়গায় স্কার টিস্যু বা অস্থিস্থাপক টিস্যু তৈরি হলে এ অবস্থাটি ঘটে।
স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে উত্থানের সময় লিঙ্গের ইলাস্টিক টিস্যু বিস্তৃত হয়ে লিঙ্গকে সাজাসুজি উত্থিত করে তোলে। যেহেতু স্কার টিস্যু ইলাস্টিক বা স্থিতিস্থাপক নয় বরং শক্ত সেহেতু লিঙ্গের অন্যান্য অংশ বড় হওয়ার সময় এটা (স্কার টিস্যু) কঠিন থেকে যায়, ফল হিসেবেও লিঙ্গ বেঁকে যায়। যদি স্কার টিস্যু লিঙ্গের চারপাশে বিস্তৃত হয় তা হলে লিঙ্গটা একটা বোতলের গলার মতো দেখায় অথবা লিঙ্গ অনেক ছোট হয়ে যেতে পারে।
এ কথা বিশ্বাস করা হয়, কিছু অনাকাঙিক্ষত কারণে লিঙ্গ বাঁকা হতে পারে। এসব কারণে মধ্যে রয়েছে আঘাত, প্রদাহ কিংবা উত্থিত লিঙ্গে চাপ প্রয়োগ। পেরোনি’জ ডিজিজের অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা।
কিছু রোগের কারণেও পেরোনি’জ ডিজিজ হয়। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে উচ্চরক্তচাপ, ধমনী শক্ত হওয়া কিংবা ডায়াবেটিস। লিঙ্গে আগাত পেলে তা ঠিকমতো সেরে না উঠলেও পেরোনি’জ ডিজিজহয়।
পেরোনি’জ ডিজিজের চিকিৎসায় সার্জারি
যেহেতু পেরোনি’জ ডিজিজ বা বাঁকা লিঙ্গ একেকজনের ক্ষেত্রে একক রকম হয়, তাই এর চিকিৎসাও অনেক ধরনের। কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসা ছাড়া এ রোগ একদু’বছরের মধ্যে ভালো হয়। এমনকি স্কারটিস্যু চলে যেতে পারে। আবার দুঃখজনক ব্যাপার হলো শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ পুরুষের এ সময়ে কোনো পরিবর্তন দেখা দেয় না এবং অন্য ৪০ ভাগ পুরুষের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে সার্জারি হলোযুক্তিযুক্ত চিকিৎসা, যদিও অনেক চিকিৎসা, যদিও অনেক চিকিৎসক অপারেশনের আগে কমপক্ষে এক থেকে দু’বছরঅপেক্ষা করার কথা বলেন। অপেক্ষার এ সময়টুকুতেই অধিকাংশ রোগী প্রথমে অন্য চিকিৎসার মাধ্যমে রোগমুক্তির চেষ্টা করেন, অবশ্য পরে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে দু’ধরনের সার্জারি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একটি হলো নেসবিটপদ্ধতি। পেরোনি’জ ডিজিজে এ অপারেশনটি সবচেয়ে বেশি করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ সচরাচর এক থেকেদু’ইঞ্চি ছোট হয়ে যায়। অন্য আরেকটিপদ্ধতিতে স্কার টিস্যুর জায়গা গ্রাফটেড টিস্যু লাগানো হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেআংশিক বা সম্পূর্ণ পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে।
ঘরোয়া চিকিৎসায় ট্রাকশন ডিভাইস
পেরোনি’জ ডিজিজের আধুনিক চিকিৎসা হিসেবে বর্তমানে এক ধরনের ট্রাকশন ডিভাইস পাওয়া যায়। এটি স্কার টিস্যুর কাঠিন্যকে ঠিক করে দেয় এবং বাঁকা লিঙ্গ সোজা করে। ট্রাকশন ডিভাইস চিকিৎসার সুবিধা হলো এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এবং এটি ঘরে বসেই নেয়া যেতে পারে।