টরেন্ট কি? কিভাবে ব্যাবহার করতে হয়?
টরেন্ট কি তা জানার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক সাধারন ডাউনলোড প্রসেস কীভাবে কাজ করে। মনে করুন আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে কোন ওয়েব অ্যাড্রেস প্রবেশ করিয়ে গো করলেন। তখন সেই ওয়েবসাইটের সার্ভার থেকে তথ্য এসে আপনার ব্রাউজারে সাইটটি প্রদর্শিত হয়। এভাবেই আপনি যখন কোন ফাইল ডাউনলোড করেন তখন সেটি যে সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে সেখান থেকে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে চলে আসে। তো এটি ছিল একটি ইউজারের কথা। কিন্তু একসাথে যখন হাজার হাজার ইউজার ঐ ওয়েবসাইটটি বা কোন ফাইল একসাথে অ্যাক্সেস করার চেষ্টা করে তখন সেই ওয়েব সার্ভারকে অনেক শক্তিশালি হওয়ার প্রয়োজন পরে। এবং সাথেই ঐ সার্ভারকে অনেক বেশি গতির ইন্টারনেট সমর্থন করার প্রয়োজন পরে। তাছাড়া সকল ইউজার ঠিক মতো ওয়েবপেজ দেখতে পারবে না, বা সাইট লোড হতে অনেক বেশি সময় লাগবে। তো এই অবস্থায় আপনি যদি চান যে আপনার সাইট একসাথে হাজার হাজার ইউজার দেখতে পায় বা আপনার ফাইল একসাথে হাজার বার ডাউনলোড করা সম্ভব হয় তবে আপনাকে অনেক শক্তিশালী সার্ভার ব্যবহার করতে হবে।
তো এতো ছিল সাধারন ডাউনলোড প্রসেস। চলুন এবার কথা বলি টরেন্ট ডাউনলোড প্রসেস নিয়ে। যেমন সাধারন ডাউনলোড প্রসেসে আপনি যদি কোন ফাইল ডাউনলোড করার জন্য শেয়ার করতে চান তবে সেটাকে আগে ইন্টারনেট সার্ভারে আপলোড করতে হয়। কিন্তু টরেন্ট এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সার্ভার থাকে না। মনে করুন আমি যে ফাইলটি শেয়ার করতে চাই সেটি আমার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সেভ হয়ে আছে। এখন আমি কোন একটি টরেন্ট ওয়েবসাইটে যাব এবং ফাইলটির একটি টরেন্ট সেখানে তৈরি করে রাখবো। এখন আপনাদের মধ্যে কেউ যদি সেই টরেন্ট ডাউনলোড করে যেকোনো টরেন্ট ক্লাইন্টে অ্যাড করে নেন, তবে টরেন্ট ক্লাইন্ট আমার কাছ থেকে আপনার কাছে ফাইলটি ধিরেধিরে পৌছাতে শুরু করে দেবে। যেটা আমার ইন্টারনেট স্পীড এবং যে স্পীডে ফাইল আপলোড হচ্ছে এবং যেটি আপনার ইন্টারনেট স্পীড সে অনুসারে আপনার কাছে ফাইলটি পৌঁছে যাবে।
যদি আপনি সেই টরেন্টটি ডাউনলোড করতে করতে অন্য কেউ তা ডাউনলোড করতে শুরু করে তবে ঐ ইউজারটি দুই জায়গা থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করার সুবিধা পাবে। এক তো আমার কাছে থেকে ডাউনলোড করতে পারবে কেনোনা আমি প্রথম থেকেই আপলোড করছি এবং দ্বিতীয়ত সে আপনার কাছ থেকেও ডাউনলোড করতে পারবে। ঠিক এমনভাবেই ঐ ইউজার যখন ডাউনলোড করা শুরু করে দেবে তখন সেও ঐ ফাইলের একটি নতুন সোর্স হিসেবে পরিনিত হবে। এবং ফাইলটির সোর্স হয়ে যাবে ৩ টি। এভাবেই যখন আরো কোন নতুন ইউজার প্রবেশ করবে তখন সে ৩ জায়গা থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবে। তো টরেন্ট এমন এক জাল তৈরি করে ওয়ান টু ওয়ান নেটওয়ার্কের, যার মাধ্যমে একই ফাইল একসাথে অনেক জায়গায় পৌঁছে যায় এবং অনেক সোর্স থেকে একসাথে ডাউনলোড হতে থাকে ও আপলোডও হতে থাকে।
এখন আপনি হয়তো ভাবছেন যে আমার কাছে কেবল ফাইল পৌঁছালো মাত্র ২ শতাংশ, তো আমি কোনটা আপলোড করছি আর কোনটা ডাউনলোড করছি? তো দেখুন টরেন্ট সবসময় আপনার ফাইল অনেকগুলো টুকরো আকারে ডাউনলোড করে থাকে। টরেন্ট যেখান থেকে যে ফাইলের যে টুকরো টুকু পায় সেটিই ডাউনলোড করতে এবং সাথে আপলোড করতেও শুরু করে। এবং শেষে সব সোর্স থেকে সব টুকরো একত্রিত করে আপনাকে একটি পরিপূর্ণ ফাইল দিয়ে থাকে। টরেন্ট কাজ করে থাকে মূলত দুটি প্রধান টার্মের উপর, সীডার্স এবং লীচার্স।
সীডার্স (Seeders) এবং লীচার্স (Leechers)
দেখুন টরেন্টে সীডার্স হলো সে সমস্ত ইউজার যারা টরেন্টটি ডাউনলোড করার সাথে সাথে আপলোডও করছে। যখনই আপনি কোন টরেন্ট ডাউনলোড করেন তখন আপনাকে দেখানো হয় যে সেখানে কতগুলো সীডার্স রয়েছে। এবং সীডার্স বেশি থাকলে অর্থাৎ একসাথে ফাইলটি অনেকে আপলোড করে থাকলে সেটি একটি হেলদি টরেন্ট হয়ে থাকে।
তারপরে আসে লীচার্স এর কথা। লীচার্সকে পীরস (Peers) ও বলা হয়ে থাকে। তো বন্ধুরা লীচার্স বা পীরস ঐ সমস্ত ইউজারদের বলা হয়ে থাকে যারা ঐ মুহূর্তে টরেন্টটি ডাউনলোড করছে। মনে করুন আপনি একটি টরেন্ট ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন যার সীডার্স দশ হাজার এবং লীচার্স বারো হাজার। মানে ঐ ফাইলটি দশ হাজার ইউজার আপলোড করছে এবং বারো হাজার ইউজার ডাউনলোড করছে। এই অবস্থায় আপনি যদি ফাইলটি ডাউনলোড করতে শুরু করে দেন তবে আপনি খুব ভালো ডাউনলোড স্পীড পাবেন। কারন একসাথে অনেক আপলোড হওয়ার কারণে আপনি অনেকগুলো সোর্স থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন। আবার মনে করুন একটি টরেন্টের সীডার্স মাত্র ২ জন এবং লীচার্স ২,০০০ জন। এই অবস্থায় আপনি যদি ফাইলটি ডাউনলোড করতে লাগিয়ে দেন তবে খুব কম ডাউনলোড স্পীড পাবেন। কেনোনা ফাইলটি মাত্র দুজন ইউজার আপলোড করছে এবং সেটি ২,০০০ ইউজারের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে।এরপর আরেকটি বিষয় থাকে তাকে বলা হয়ে থাকে অ্যাক্টিভ সীডার্স (Active Seeders)। অ্যাক্টিভ সীডার্স সে সমস্ত ইউজাররা হয়ে থাকে যারা ফাইলটি একবারতো ডাউনলোড করে নেয় ক্লাইন্ট এর সাহায্যে কিন্তু ডাউনলোড সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও টরেন্ট ক্লাইন্টে ফাইলটি রেখে দেয়। ফলে সে হয়তো ফাইলটি এখনো ডাউনলোড করছে না, কিন্তু সে তার আপলোড স্পীড অনুসারে ফাইলটিকে লাগাতার আপলোড করেই চলেছে। এবং সে বাঁকি সকল ইউজারদের ডাউনলোড স্পীড বাড়াতে সাহায্য করছে।কিছু কিছু ইউজার রয়েছে যারা টরেন্ট ডাউনলোড করার সময় আপলোড স্পীড একদম কম করে রেখে দেয়। টরেন্ট ক্লাইন্টে আপলোড স্পীড নিয়ন্ত্রন রাখার অপশন থাকে। ফলে সে শুধু মাত্র বলার জন্য একজন সীডার্স তো হয়ে থাকে, কিন্তু সে যে গতিতে আপলোড করে মানে ২-৩ কিলোবাইট প্রতি সেকেন্ডে তাতে সে টরেন্টটি তেমন হেলদি হতে পারে না।ম্যাগনেট লিঙ্ক (Magnet Link)
টরেন্টের দুনিয়ায় এক নতুন প্রযুক্তির নাম হলো ম্যাগনেট লিঙ্ক। দেখুন ম্যাগনেট লিঙ্কের সাথে একটি হ্যাস টেবিল যুক্ত করা থাকে। এবং এটি হ্যাস টেবিলের সাহায্যে তার আশেপাশে থাকা নোডস এর অবস্থান নির্ণয় করে এবং ট্র্যাক করে যে ফাইল কোথা থেকে আপলোড এবং কোথায় ডাউনলোড হচ্ছে। তারপর সে সীডার্সের সাথে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করে এবং ধিরেধিরে সকল নোডস কানেক্ট করে ফাইল ডাউনলোড করতে শুরু করে দেয়। কিছু টরেন্ট ক্লাইন্ট আপলোড খুঁজতে ট্র্যাকার ব্যবহার করে আবার কিছু টরেন্ট ক্লাইন্ট ম্যাগনেট লিঙ্ক ব্যবহার করে ।
হাই স্পীড টরেন্ট ডাউনলোড করতে কি করবেন?
যদি আপনার কখনো কোন টরেন্ট ডাউনলোড করার প্রয়োজন পরে তবে প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে টরেন্টির সীডার্স কতগুলো তার উপর। সীডার্স যতো বেশি হবে ততো বেশি ভালো হবে। সীডার্স এবং লীচার্স এর অনুপাতও ঠিকঠাক হওয়ার প্রয়োজন পরে। কেনোনা মনে করু একটি টরেন্টের সীডার্স ১০ হাজার কিন্তু লীচার্স ১ লক্ষ্য। তবে টরেন্টটি অবশ্যই হেলদি হবে না, এবং আপনি ডাউনলোডে তেমন ভালো স্পীড পাবেন না। তাই সীডার্স এবং লীচার্স এর অনুপাত ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজনীয়।
source-internet