বেকিং সোডা কার্যত সব কিছুর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি বিভিন্ন কাজেই নির্বিশেষে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- খাবার তৈরিতে, বাহ্যিক ভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে, গোসলের ক্ষেত্রে বা দেহের অভ্যন্তরে কোলন পরিষ্কারের ক্ষেত্রে। এছাড়া এসব নিরাময়ক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও বেকিং সোডা বিভিন্ন গৃহস্থালী কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদি কোন রোগের চিকিৎসায় বা স্বাস্থ্যগত কারনে ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তাহলে ঔষধের দোকানে প্রাপ্ত ফার্মাসিউটিকেল বেকিং সোডা আর গৃহস্থালী কাজের জন্য সাধারণ বেকিং পাউডার ব্যবহার করাটাই সবচাইতে ভালো। তাই কী কী ক্ষেত্রে এই জাদুকরী উপাদানটি ব্যবহার করা যায় চলুন জেনে নেই।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেকিং সোডার ব্যবহারঃ
সকালে ঝরঝরে অনুভব করতেঃ
দিনে দুইবার বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে পান করলে, বিশেষ করে সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তা কোন ক্ষতি করে না বরং তা পরেরদিন সকালের জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক হয়।
বমি বমি ভাবের চিকিৎসাঃ
বেকিং সোডা ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড একসাথে মিশিয়ে বমি বমি ভাবের চিকিৎসায়, যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় বা রোগে যেমন হৃদ রোগ, স্নায়ুবিক রোগ, ক্যান্সার ও ফ্লু এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। এই দুইটি উপাদান একসাথে মিশে দেহের কোষ, কলা এবং অঙ্গ থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও এসিড বের করে দিয়ে এদের সংযোগকে শক্তিশালী করে।
শক্তিশালী পানীয় তৈরিতেঃ
আপেল সিডার ভিনেগার বা লেবুর রসের সাথে মিশালে বেকিং সোডার কার্যক্ষমতা আরো শক্তিশালী হয়। আধা চা চামচ বেকিং সোডা তে ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার বা লেবুর রস মিশালে অনেক ফেনা তৈরি হবে মিশ্রণটিতে। ফেনা কমে গেলে তাতে সামান্য পানি যোগ করে খেতে হবে।
ক্যান্সার সহ কিছু গুরুত্বর রোগের চিকিৎসায়ঃ
বেকিং সোডা ঝোলা গুর,ম্যাপল সিরাপ বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ক্যান্সার সহ বেশ কিছু গুরুত্বর রোগের মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে ১৪ দিনের বেশি একটানা খাওয়া উচিত নয়। ১ চা চামচ তরল ঝোলা গুঁড়ের সাথে ১ চা চামচ বেকিং সোডা ভালো করে মিশিয়ে মিশিয়ে দিনে একবার করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ম্যাপল সিরাপ এবং বেকিং সোডা ৩:১ অনুপাতে মিশিয়ে অল্প আঁচে চুলায় দিয়ে নাড়তে হবে এবং কিছুক্ষন পর মানিয়ে মিশ্রণের থেকে ফেনা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে সেটা প্রতিদিন ১ চামচ করে একবার খেতে হবে। ম্যাপল সিরাপের মতো ঠিক একই নিয়মে মধু বেকিং পাউডারের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
গোসলের ক্ষেত্রে বেকিং সোডার ব্যবহারঃ
দেহের পেশীতে টান পরা, ক্লান্তি ও ত্বকের মরা কোষ থেকে রক্ষা পেতে গোসলের পানিতে ১ কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে গোছল করলে ত্বক হবে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
ভাইরাস জনিত ত্বকের প্রদাহের চিকিৎসায়ঃ
ত্বকের প্রদাহ থেকে রক্ষা পেতে কিছু বেকিং সোডা নিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে মৃদু মালিশ করতে হবে। ঠিক এভাবে যতদিন ভালো না হয় ততদিন লাগাতে হবে।
গৃহস্থালি কাজে বেকিং সোডার ব্যবহারঃ
পোকার কামড়ে বা পুড়ে গেলেঃ
বেকিং সোডার সাথে পানি দিয়ে ঘন করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ঈষ্ট হিসেবেঃ
বেকিং সোডা ও সমপরিমান ভিটামিন সি পাউডার মিশিয়ে ডো তৈরি করলে তা খুব দ্রুত ফুলে উঠে।
ফল ও সবজি পরিষ্কারেঃ
বেশি গভীরতার একটি বোলে বেশি করে পানি নিয়ে তাতে ২-৩ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ফল বা সবজি গুলো বেশ কিছুক্ষন রেখে পরে ভালো করে ধুয়ে নিলে ভালো পরিষ্কার হয় এবং বিষাক্ততা দূর হয়।
ওয়াশিং মেশিন পরিস্কারেঃ
বেশ কয়েকবার ব্যবহারের ফলে ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে ময়লা জমে যায়। আধা কাপ বেকিং সোডা দিয়ে খালি ওয়াশিং মেশিন কিছুক্ষণ ’rinse mode’ এ চালিয়ে রাখলে মেশিন ঝকঝকে হয়ে যাবে।
আটকে যাওয়া ড্রেন খোলার জন্যঃ
বেসিন বা কোন পাইপে ময়লা জমে প্রায়ই আটকে যায়। তখন এক কাপ বেকিং সোডা ও এক কাপ সিরকা একসাথে মিশিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেনে ঢেলে দিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।তারপর সেখানে বেশি করে গরম পানি ঢেলে দিলেই ম্যাজিকের মতো কাজ হবে।
ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ
ফ্রিজে অনেক সময়ই বাজে গন্ধ হয়ে যায় সেটা দূর করার জন্য এখন আর ফ্রিজ ফ্রেশনার কিনতে হবে না। আধা কাপ বেকিং সোডা রেখে দিন।
মগ থেকে চা/কফির দাগ দূর করতেঃ
অনেক দিন ব্যবহারের ফলে মগ বা চায়ের কাপে দাগ হয়ে যায়। পানির সাথে কিছু বেকিং সোডা মিশিয়ে মগ বা কাপ ঘষে ধুয়ে ফেললেই নিমিষেই দাগ উঠে যাবে।
হাঁড়ি/কড়াই এর পোড়া দাগ তুলতেঃ
রান্না করতে গেলে কড়াই বা হাড়ি পোড়ার অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই আছে। কিন্তু এই পোড়া দাগ তোলা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। সিরকার সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই মিশ্রণ পাতিল বা কড়াই এ বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে বা খুব বেশি পোড়া হলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে ঘষে তুলে ফেলুন। খুব সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কাটিং বোর্ডের দাগ তুলতেঃ
ছুদিন ব্যবহার করলেই ফল ও সবজি কাটার কাটিং বোর্ডে দাগ পরে যায়। ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা, ১ টেবিল চামচ লবন এবং ১ টেবিল চামচ পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে কাটিং বোর্ড ঘষে ঘুয়ে ফেলে দেখুন জাদু।
চুলের ব্রাশ চিরুণি জীবাণুমুক্ত করণে?
বেকিং সোডার সাথে পানি মিশিয়ে চুলের ব্রাশ, চিরুণি ইত্যাদি ধুয়ে নিয়মিত ভাবে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
প্লেট বাটি ধোয়ার ক্ষেত্রেঃ
ডিটারজেন্ট এর সাথে ৩ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ধুয়ে নিলে প্লেট বাটি দাগহীন ঝকঝকে হয়ে যায় এবং হাতও কোমল ও মসৃণ হয়।
হাতের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ
মাছ, মাংস কাটার পর হাতের বাজে গন্ধ সহজেই দূর করতে হলে বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিলে খুব দ্রুত গন্ধ চলে যায়।..