159 বার প্রদর্শিত
"সাধারণ" বিভাগে করেছেন Level 6

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন Level 6
পৃথিবীতে যত খাবার রয়েছে সব খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা একটি তালিকা করি, তবে সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। মানবদেহের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই হতে পরিত্রান পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান জনপ্রিয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায় মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত)"


মধু কি?
মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।



মধুর উপাদান:
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

খাটি মধুর বৈশিষ্ট্যঃ

খাটি মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকে না।
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো বিষাক্ত উপাদান প্রাকৃতিক গাছে থাকলেও তার প্রভাব মধুতে থাকে না।
মধু সংরক্ষণে কোনো পৃজারভেটিভ ব্যবহৃত হয় না। কারণ মধু নিজেই পৃজারভেটিভ গুণাগুণ সম্পন্ন পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্য।
মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, নিষ্কাশন, সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের সময় অন্য কোনো পদার্থের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয় না।
খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছাড়লে তা সরাসরি ড্রপ অবস্থায়ই গ্লাসের নিচে চলে যায়।
খাটি মধুর সহজ পরীক্ষাঃ
স্বচ্ছ কাচের গ্লাসের পানিতে খাটি মধু ঢেলে দিলে সহজে পানির সঙ্গে না মিশে গ্লাসের তলায় তলানি হিসেবে বসে থাকে। এ অবস্থা দুই-তিন ঘণ্টা স্থায়ী থাকে। কারণ মধুর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে চার-পাচ গুণ ভারি। আর যদি ভেজাল হয় তবে সহজে পানির সঙ্গে মিশে যাবে।

মধুর উপকারিতাঃ

বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সিনা তাঁর বিশ্বখ্যাত- Medical Test book The canon of medicine গ্রন্হে বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মধু ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, মধু আপনাকে সুখী করে, পরিপাকে সহায়তা করে, ঠান্ডার উপশম করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও তীক্ষ্ম করে, জিহ্বা স্পষ্ট করে এবং যৌবন রক্ষা করে। নিম্নে মধুর কয়েকটি উপকারিতা পত্রস্থ করা হলো।মধু সর্দি, কাশি, জ্বর, হাপানি, হৃদরোগ, পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে। এছাড়া মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল,


 

যৌনশক্তি বৃদ্ধির মহৌষধ খাটি মধু : যৌন শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখার শ্রেষ্ঠ উপাদান হল মধু। সকালে খালি পেটে জিহ্বা দ্বারা মধু চেটে খেলে কফ দূর হয়, পাকস্থলী পরিস্কার হয়, দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়, গ্রন্থ খুলে দেয়, পাকস্থলী স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিস্ক শক্তি লাভ করে, স্বাভাবিক তাপে শক্তি আসে, রতি শক্তি বৃদ্ধি হয়, মূত্রথলির পাথর দূর করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়, গ্যাস নির্গত হয় ও ক্ষুধা বাড়ায়। প্যারালাইসিসের জন্যও মধু উপকারী। মধু হাজারো রকম ফুল ও দানার নির্যাস।

শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।


হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।


 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।


রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।


ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাস কষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীর ভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাস কষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।


অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।


পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।


পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।


দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।


রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।

ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

3 টি উত্তর
17 ডিসেম্বর 2018 "যৌন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md:Parvej Mahamud Level 2
1 উত্তর
18 অক্টোবর 2018 "পড়াশোনা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Ran Ran Ran Level 7
2 টি উত্তর
24 ফেব্রুয়ারি 2018 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন zarjijul Level 2
1 উত্তর
12 সেপ্টেম্বর 2019 "খাবার" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন তুহিন Level 7
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...