প্রথমত,আমদের মূল সংবিধানের আগে আরও দুইটা অস্থায়ী সংবিধান ছিল। কাজেই আপনি যখন জিজ্ঞেস করবেন বাংলাদেশের সংবিধান কে প্রনয়ন/রচনা করেন?-- তখন তা একবারে উত্তর দেয়া যাবে না যে ডক্টর কামাল হোসেন তা প্রনয়ন/রচনা করেছেন। আপনাকে স্পেসিফিক্যালি আস্ক করতে হবে, উল্লেখ করতে হবে কোন সংবিধানের কথা আপনি জানতে চাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সংবিধানের ক্ষেত্রে গণপরিষদ এর ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কয়জন জানি গণপরিষদ নিয়ে? গণপরিষদ এর একটা সাব কমিটির সভাপতি ছিলেন ডক্টর কামাল হোসেন । ১৯৭১ এর ২৬ শে মার্চ থেকে আমরা স্বাধীন। কিন্তু সেই স্বাধীন দেশটাকে পরিচালনা করার জন্য সংবিধান আমাদের দরকার তা আমরা পাই ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। মাঝখানের এই পৌনে দুইবছর আমাদের আরও দুইটা অস্থায়ী সংবিধান ছিল। ১ম অস্থায়ী সংবিধান দেয়া হয় ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল। এর নাম ছিল "স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র" (proclamation of independence). আর ২য় অস্থায়ী সংবিধান দেয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারি। এর নাম ছিল "provisional constitution of Bangladesh order 1972". এখন আসি গণপরিষদ এর ব্যাপারে। কোন দেশ স্বাধীন হবার পর কিংবা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন হবার পর ঐ দেশের স্থায়ী সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যে অস্থায়ী আইনসভা গঠিত হয় তাকে গণপরিষদ বলে। গণপরিষদের গঠন সংক্রান্ত আদেশ জারি হয় ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ। গণপরিষদের সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। স্পিকার ছিলেন শাহ আব্দুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। এই গণপরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে ৩৪ জনকে নিয়ে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয় , যার সভাপতি ছিলেন ডক্টর কামাল হোসেন। এই প্রথম ডক্টর কামাল হোসেন এলেন। কাজেই বাংলাদেশের সংবিধান মানেই একা "ডক্টর কামাল হোসেন" না। এই খসড়া সংবিধান গনপরিষদে উত্থাপিত হয় ১৯৭২ এর ১২ই অক্টোবর। পাশ হয় ৪ ঠা নভেম্বর (বাংলাদেশের সংবিধান দিবস) এবং কার্যকর হয় ১৯৭২ এর ১৬ই ডিসেম্বর। এই হচ্ছে আমাদের সংবিধানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। কাজেই বাংলাদেশের সংবিধান মানেই একা "ডক্টর কামাল হোসেন" এই উত্তর কতখানি যৌক্তিক-- তা ভাবার বিষয়। সংবিধানের ব্যাপারে যারা জড়িত তাদের সবার কৃতিত্ব স্বীকার করা উচিৎ।