আজকালের ইমাম খতীবরা যতটা না নিজের ইলম ও দ্বীনি বুঝ অনুসারে সমাজকে পরিচালনা করে, তার চেয়ে অধিক নষ্ট সমাজের রীতি নীতি, প্রভাব ও কুসংস্কারে প্রভাবিত হয়ে নিজে পরিচালিত হয়।
.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে যতটা না শরীয়তের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরেন, তার চেয়ে অধিক সমাজ, কমিটি ও শাসক শ্রেণির অন্যায় অপরাধ ঢাকার জন্য শরীয়তের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করেন কিংবা সঠিক ব্যাখ্যা আড়াল করে চলেন।
.
যতটা না আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করেন, তার চেয়ে অধিক ভয় করেন সমাজ, কমিটি, চাকুরিচ্যুতি ও শাসক শ্রেণিকে। দিনশেষে তারা হয় চাকুরি হারিয়ে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হন, না হয় অপমান ও যিল্লতির জিঞ্জিরে আবদ্ধ গোলাম হয়ে চাকুরি করেন। মানুষের অপছন্দ সত্ত্বেও বাহ্যত তাদের ইমামত করেন, আল্লাহর ইবাদত করেন, আড়ালে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য ছেড়ে গুটি কয়েক দুষ্টচক্রের সেবাদাস হিসেবে তাদের ইবাদত ও আনুগত্য করেন।
{وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ} [الأحزاب: 37]
“তুমি মানুষকে ভয় করছ, অথচ আল্লাহই সর্বাধিক উপযুক্ত যে, তুমি তাঁকে ভয় করবে।” –আহযাব: ৩৭
.
আমাদের মনে রাখা দরকার, আমরা কখন কি বলছি, কেন বলছি, কেন বলছি না, কোন চিন্তা ও মানসিকতা থেকে বলছি, প্রতিটি বিন্দু বিসর্গের পাই পাই হিসেব একদিন আল্লাহর সামনে দিতে হবে।
{مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ} [ق: 18]
“সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তার সামনে রয়েছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী।” –ক্বাফ: ১৮
.
অবশ্য ব্যতিক্রম ইমামও আছেন। যারা দ্বীন ও শরীয়ত এবং নিজের আদর্শ অনুযায়ী সমাজকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেন। দুষ্টদের রক্তচক্ষু অপেক্ষা আল্লাহর ভয়কে অগ্রাধিকার দেন। কমিটি তোয়াজ কিংবা চাকুরি হারানোর ভয়কে পরোয়া করেন না। দিনশেষে তাদের চাকুরিই হয় শক্তিশালী ও সম্মানিত। চাকুরি গেলে আরো ভাল চাকুরি তাঁদের আশির্বাদ জানায়। তাঁরা চাকুরি করেন সম্মানের সঙ্গে এবং চাকুরি ছাড়েনও সম্মানের সঙ্গে। চাকুরিচ্যুত হয়েও উসওয়া ও আদর্শে সমাজের ইমামত করেন, অমর ইমাম হয়ে থাকেন মুখে মুখে, হৃদয়ে হৃদয়ে।
.
তবে তাদের সংখ্যাটা নিতান্তই কম। এই সংখ্যাটা যেদিন বড় হবে, সেদিনই সমাজে আলেমদের প্রকৃত ইমামত প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
‘ইমামে’ ‘ইমামে’ ভরা এই সমাজে এমন ইমামের আসনগুলো অধিকাংশই খালি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহারে তরুণ আলেমদের এগিয়ে আসার এখনি সময়।