বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল এক শতাব্দীরও আগে। সর্বপ্রথম ১৮৮৫ সালে হিন্দু নেতা মহন্ত রঘুবীর দাস বাবরী মসজিদ প্রাঙ্গনে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ফৈজাবাদ আদালতে মামলা করে। কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। দেশভাগের দুই বছর পর ১৯৪৯ সালে মসজিদের পাশে এক জায়গায় আটদিনব্যাপী রামনাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয় এবং বলা হয় শেষদিন রামের আবির্ভাব হবে। ঠিকই ২২/২৩ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে অভিরাম দাস নামক এক হিন্দু কুলাঙ্গার মসজিদের ভেতর কথিত রামের শিশুমূর্তি রেখে আসে। তখন স্থানীয় মুসলিমরা এই কুচক্রীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর (অভিযোগ) দায়ের করলেও সেটাকে আমলে নেয়নি প্রশাসন। এদিকে হিন্দুত্ববাদীরা চারদিকে ছড়িয়ে দেয় যে, রাম নিজেই মসজিদে আভির্ভূত হয়েছেন। একথা শুনে বিভিন্নস্থান থেকে হাজারো হিন্দু মসজিদ প্রাঙ্গনে পূজা করতে ছুটে আসে। ততকালীন প্রশাসন এসব বন্ধ না করে সংঘাতের আশংকার কথা বলে নামায বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই থেকে ১৯৯২ সালে আরএসএস, শিবসেনা, বজরংদল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও অন্যন্য উগ্রহিন্দুত্ববাদী কতৃক মসজিদের শাহাদাত পর্যন্ত নামায আদায়ের অনুমতি পায়নি মুসলিমরা।
.
মসজিদ ধ্বংস ও দাঙ্গা-
১৯৮৪ সালে বিশ্বহিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রধান বানানো হয় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকে। এই কমিটি গঠনের পর মন্দির নির্মাণের ষড়যন্ত্র আরো জোরদার হয়। এর দুবছর পর ১৯৮৬ সালে ফৈজাবাদ আদালতের জজ কে এম পান্ডে মসজিদের তালা খুলে হিন্দুদের পূজা আর্চনার অনুমতি দেয়। এরপর ১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন করে এবং ১৯৯০ সালে মসজিদের আংশিক ক্ষতি করে। এই ঘটনার দুই বছর পর ১৯৯২ সালে সম্মিলিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী আক্রমন করে পুরো মসজিদকে শহীদ করে দেয়। ঐ সময় পরিকল্পিত দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন। এর ঠিক দশ বছর পর ২০০২ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদ প্রাঙ্গনে মন্দির নির্মাণের জন্য হাজার হাজার সমর্থক জড়ো করে। এখান থেকে ট্রেনে করে ফেরার পথে নিজেদের মধ্যকার ঝগড়ার জেরে দেয়া আগুনে অর্ধশতাধিক করসেবক পুড়ে মারা যায়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের নাম জড়িয়ে 'গুজরাটের কসাই' খ্যাত মোদির নেতৃত্বে গুজরাতে মুসলিম গণহত্যা শুরু হয়। এতে দশ সহস্রাধিক মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন।
.
বিজেপির উত্থান-
১৯৮৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ২টি আসন লাভ করে, তখন তারা রামমন্দির ইস্যুকে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। এই ইস্যুকে জিইয়ে রাখার জন্য তারা সভা সেমিনার/রথযাত্রা ইত্যাদির আয়োজন করে। এতে তারা সফলও হয়। মাত্র পাঁচ বছরে তাদের সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৬ তে। ১৯৯০ সালে আদভানীর নেতৃত্বে রথযাত্রা শুরু হয়, একে রথযাত্রা না বলে রক্তযাত্রা বলাটাই মনে হয় বেশি শ্রেয় হবে। সে সময় হিন্দুরা জায়গায় জায়গায় মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে এবং বাড়িঘরে আগুন লাগায়। এই ঘটনায় অনেক মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন। এরপর ১৯৯২ সালে এই আদভানীর নেতৃত্বেই বাবরী মসজিদ শহীদ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ২৮২ আসন নিয়ে 'গুজরাটের কসাই' খ্যাত মোদীর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে।
.
মন্দির নির্মানের রায় ও উদ্বোধন-
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মসজিদের জায়গা তিনভাগ করে এক ভাগ মুসলিম পক্ষকে আরেকভাগ নির্মোহী আখড়াকে এবং বাকি অংশকে হিন্দুদের দেয়ার রায় দেয়। কিন্তু উভয়পক্ষ এই রায়ের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ওই স্থানে মসজিদের নিচে মন্দিরের কোন অবকাঠামো না পাওয়া স্বত্ত্বেও হিন্দুদের খুশি করার জন্য তাদের পক্ষে রায় দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় মন্দির নির্মাণের। শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। গত ২২শে জানুয়ারী কসাই মোদী মহাসাড়ম্বরে মসজিদের স্থানে মন্দিরের উদ্বোধন করে মুসলিমদের বুকে ছুরিকাঘাত করে।
.
মসজিদের কান্না-
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আমরা হয়তো এক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাসই জানি। কিন্তু ভারতে এমন ঐতিহাসিক কয়েক হাজার মসজিদ আছে। যেগুলোকে মুশরিকরা মন্দিরে রুপান্তর করার পরিকল্পনা করেছে। উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা সহ অনেক রাজ্যে এমন হাজারো মসজিদ এখন একজন মাহমুদ গজনবীর মত বীরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
.
আল্লাহর এসব ঘর আমাদের ডেকে ডেকে বলছে; হে মুসলিম উম্মাহ! আমাদের যেই মিনার হতে শত শত বছর ধরে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষনা হয়েছে সেই মিনারে আজ শিরকের পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। যেই জমিন সিজদার জন্য সর্বদা পবিত্র রাখা হতো সেই জমিন আজ পূজা করে নাপাক বানানোর পায়তারা চলছে। যেই মেহরাবে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব নামায পড়াতেন এবং মানুষকে হেদায়াতের বাণী শোনাতেন সেই মেহরাব আজ কুফর শিরকের আখড়া বানানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে।
.
আমাদের এই অবস্থা দেখে কি তোমাদের একটুও মন কাদেনা? আমাদের উদ্ধারে তোমরা কি মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও মাহমুদ গজনবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারোনা? আমাদের উদ্ধারে কবে আসবে তোমরা? কবে আমাদের জমিনে পুনরায় এক আল্লাহকে সিজদা করে শত বছরের জমানো ব্যাথা দূর করবে?
...তোমরা আসবে এই অপেক্ষায়!