শিল্প মানেই সৃষ্টি অর্থাৎ শিল্প প্রকৃতির পদত্ত সম্পদ বা কাঁচামাল সংগ্রহ করে মানুষের ব্যবহারের উপযাগী পণ্য সৃষ্টি করে। তাহলে আমরা বলতে পারি, প্রকৃতির পদত্ত সম্পদকে রুপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকেই শিল্প বলে। যেমন: তুলা থেকে কাপড় তৈরি। শিল্পকে উৎপাদনের বাহন বলা হয়। শিল্প পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। শিল্প প্রকৃতির হতে কাঁচামাল সংগ্রহ করে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ শিল্পের প্রকিয়াকরণের মাধ্যমে রুপগত পরিবর্তন হয় যা নতুন পণ্য সৃষ্টি করে। যেমন: কাঠ থেকে চেয়ার, টেবিল, খাট ইত্যাদি আসবাবপত্র তৈরি করা। অর্থাৎ কাঠের রুপগত পরিবর্তন করে নতুন উপযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেমন: চেয়ার, টেবিল, খাট। শিল্প প্রধানত পাঁচ প্রকার: প্রজনন শিল্প নিষ্কাশন শিল্প নির্মাণ শিল্প উৎপাদন শিল্প সেবা শিল্প ১. প্রজনন শিল্প: যে শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে। অর্থাৎ প্রজনন প্রকিয়ায় সম্পদ সৃষ্টি করাকেই প্রজনন শিল্প বলা হয়। যেমন: হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন, রেশম চাষ, পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা ইত্যাদি। ২. নিষ্কাশন শিল্প: প্রকৃতির বিভিন্ন উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বা উত্তোলন করাকেই নিষ্কাশন শিল্প বলে। অর্থাৎ নিষ্কাশন শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি হতে সম্পদ আহরণ করে এদের উপযোগীতা বৃদ্ধি করে ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিনত করা। যেমন: খনি থেকে কয়লা আহরণ, ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা, বন থেকে মধু সংগ্রহ ইত্যাদি। ৩. নির্মাণ শিল্প: যে শিল্পের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ ও দালানকোঠা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলা হয়। নির্মাণ শিল্প সমগ্র বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক উদীয়মান শিল্প। যে কোনও বিদ্যমান বিল্ডিং মেরামত করা বা নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন করাও নির্মাণ শিল্পের আওতায় আসে। যেমন: বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, ডকইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি। ৪. উৎপাদন শিল্প: যে প্রক্রিয়ায় শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহার করে কৃষিজাত পন্য বা প্রাকৃতিক সম্পদ রুপান্তরের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী পণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে উৎপাদন শিল্প বলা হয়। যেমন: গার্মেন্টস কারখানা, সাবান কারখানা, চিনি উৎপাদন ইত্যাদি। ৫. সেবা শিল্প: যে শিল্পের মাধ্যমে মানুষের সেবা পবিবেশন করা হয় বা সেবা পরিবেশনের কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে সেবা শিল্প বলে। এ শিল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে প্রয়োজনী সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করা। যেমন: পরিবহণ, চিকিৎসা পরিষেবা, শিক্ষা, ব্যাংকিং, বীমা, বর্জ্য নিষ্কাশন, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ইত্যাদি। আকার অনুযায়ী শিল্প তিন প্রকার: বৃহৎ শিল্প মাঝারি শিল্প ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প বৃহৎ শিল্ল: বৃহৎ শিল্পে অধিক মূলধন, অনেক শ্রমিক ও প্রচুর পরিমানে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। যে শিল্পে ২৩০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে তাকে বৃহৎ শিল্প বলে। এ শিল্পের মধ্যে রয়েছে পাট, বস্ত্র, সিমেন্ট, কাগজ, সার ইত্যাদি। মাঝারি শিল্প: যে শিল্পে ২০-২৩০ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে তাকে মাঝারি শিল্প বলে। যেমন: চামড়া শিল্প, সাবান শিল্প, দিয়াশলাই শিল্প ইত্যাদি। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প: যে শিল্পে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে। আর কুটির শিল্প মূলত পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়।