১৪৫৮ সালে সর্বপ্রথম ইতালিয়ান প্রকৌশলী জিওভান্নি ফন্টানা মনুষ্যচালিত চাকার যান তৈরি করেন। সেটি ছিল চার চাকার একটি যান।
এর চারশ বছর পর ১৮১৩ সালে জার্মানির কার্ল ভন ড্রাইস চার চাকার মনুষ্যচালিত যান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৮১৭ সালে তিনি দুই চাকার একটি যান উদ্ভাবন করেন।
তার ওই উদ্ভাবন ছিল একটি বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে। ১৮১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার টাম্বোরা পর্বত এর আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার উদীরন হলে সারা পৃথিবীর আকাশে ছাই ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তাপমাত্রা কমে যায়। এর ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। ফলে ঘোড়াসহ অন্যান্য প্রাণী না খেয়ে মরতে থাকে। এসময় কার্ল ভন ড্রাইস এরও প্রিয় ঘোড়াটি মরে যায়।
দুটো কাঠের চাকা দুটো কাঠের ফ্রেমের সঙ্গে যুক্ত করে বানানো হয় প্রথম বাইসাইকেলটি। এতে কোনো গিয়ার বা পেড্যাল ছিল না। পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে চালানো হত সেটি। এর নাম ছিল হবি হর্স।
কার্ল ভন ড্রাইস তার এই আবিষ্কার জার্মানি থেকে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। যেখানে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সেমসময় ব্রিটিশ কোচ নির্মাতা ডেনিস জনসনও তার উদ্ভাবিত বাইসাইকেল বাজারে ছাড়েন। এর নাম ছিল ‘পেডেস্ট্রিয়ান কারিকলস’।
১৮২০ সালের মধ্যে হবি হর্স নিষিদ্ধ করা হয় এই যুক্তিতে যে সেটি পথচারীদের জন্য বিপজ্জনক। ১৮৬০ সালে স্টিলের, চাকা, অপরিবর্তনীয় গিয়ার, পেড্যাল এবং কাঠের কাঠামো সহ ফের বাজারে আসে বাইসাইকেল। এর উদ্ভাবক কে ছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। জার্মানির কার্ল কিচ নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন তিনিই প্রথম ১৮৬২ সাল পেড্যালযুক্ত বাইসাইকেল উদ্ভাবন করেন। কিন্তু এই ধরনের যানের প্রথম প্যাটেন্ট লাভ করেন ফরাসি উদ্ভাবক পিয়েরে লালামেন্ট। ১৮৬৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ছাড়ার জন্য প্যাটেন্ট পান।
১৮৬৪ সালে তিনি তার উদ্ভাবিত বাইসাইকেল প্রদর্শনী করেন। আর সেখান থেকেই প্যারিসের দুই ধনী শিল্পপতির ছেলে অ্যাইমে এবং রেনে অলিভার নিজেরা বাইসাইকেল তৈরি করার ধারণা পান।
এই দুইজন তাদের এক ক্লাসমেট জর্জ ডে লা বৌগলিজে এবং মিচৌক্স নামের একজন কামারকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাইসাইকেল বানানো শুরু করেন। তারা তাদের বাইসাইকেল বাজারে আনেন ১৮৬৭ সালে। তাদের উদ্ভাবন বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপর ১৮৭০ সালের মধ্যেই বাইসাইকেল ফ্রেম কাঠের বদলে ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হতে থাকে।
১৮৭০ সালে ইংরেজ উদ্ভাবক নিরাপদ বাইসাইকেলের ধারণা নিয়ে আসেন। ১৮৭১ সালেই তার বাইসাইকেল বাজারে আসে। ১৮৮৫ সালে তিনি রোভার নামের এক বাইসাইকেল বানান। ব্যবহারিক দিক থেকে এটিই ছিল প্রথম বাস্তব সম্মত ও নিরাপদ দুই চাকার যান।
১৮৮৯ সালে ২ লাখ বাইসাইকেল ব্যবহৃত হত। যা ১৮৯৯ সালে ১০ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে রাস্তাও উন্নত করা হতে থাকে। ঘোড়ার গাড়ি চলার জন্য তৈরি রাস্তার চেয়েও ভালো রাস্তা দরকার হয় বাইসাইকেল চালানোর জন্য।
রেলরোড কম্পানিগুলো এই রাস্তা উন্নয়নের কাজ নেয়। কেননা কৃষকদের সঙ্গে ব্যাবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। বাইসাইকেলই ছিল মোটরগাড়ির পূর্বসুরি।
কিন্তু ১৯০০ সালের মধ্যে মোটরযানের অগ্রগতিতে বাইসাইকেল ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। পরের ৫০ বছর শুধু শিশুরাই তখন সাইকেল ব্যবহার করত। ১৯৬৯ সালের দিকে গিয়ে আবার বাইসাইকেলের প্রতি প্রাপ্তবয়স্কদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। কারণ এটি পরিবেশ দূষণ করে না। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ সাইকেল বানানো হয়। এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের ঘরের বাইরের একটি বিনোদনের উপকরণ হয়ে ওঠে।
এখন প্রতি বছর ১০ কোটি বাইসাইকেল বানানো হয়। আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি বাইসাইকেল ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন বাইসাইকেলে ১ থেকে ৩৩ গিয়ার পর্যন্ত থাকে।