খুলনার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হলো: সুন্দরবন; খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর: খুলনা জেলার শিববাড়ী ট্রাফিক মোড়ের জিয়া পাবলিক হলের পাশেই প্রতিষ্ঠিত খুলনা জাদুঘর। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় জাদুঘরের আওতায় ও প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে জাদুঘরটি পরিচালিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাদুঘর। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন বিশেষ করে ঝিনাইদহের বারবাজার, যশোরের ভরত ভায়ানা এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী সমাধিসৌধ খননের ফলে প্রাপ্ত নানান দুর্লভ নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে। এ জাদুঘরে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য খ্যাত আলোকচিত্র দেখা যাবে, তার মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত ষাটগম্বুজ জামে মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, রনবিজয়পুর মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, সোনা বিবির মসজিদ, সিঙ্গারা মসজিদ, দীদার খার মসজিদ, আনোয়ার খার মসজিদ, আহমদ খার মসজিদ, চিল্লাখানা, খানজাহান আলী (র.) এর বসতভিটা ও দীঘি, কোতয়ালী, কালোদীঘি, বিবি গোগিনীর মসজিদ এবং দশ গম্বুজ মসজিদসহ বৃহত্তর খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর অঞ্চলের। এছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনার আলোকচিত্র দেখা যাবে এখানে। আলোকচিত্র ছাড়া জাদুঘরে দেখা যাবে গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল ও ব্রিটিশ আমলের নানা রকম পুরাকীর্তির নিদর্শন, পোড়ামাটির বিভিন্ন মূর্তি, কষ্টি পাথরের মূর্তি, কালো পাথরের মূর্তি, তামা, লোহা, পিতল, মাটি ও কাচের তৈজসপত্র, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি অস্ত্র, বিভিন্ন খেলনা, নানা রকম ব্যবহার্য সামগ্রী, মোগল আমলের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির হাজার বছরের পুরনো নিদর্শনসমূহ। রেলস্টেশনের কাছে মিস্টার চার্লির কুঠিবাড়ি; দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স: দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান, যা খুলনা শহরের দক্ষিণডিহিতে অবস্থিত। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফুলতলা উপজেলার তিন কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে দক্ষিণডিহি অবস্থিত। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। কলকাতার জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন এই দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকী ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এই গ্রামেরই মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণ ডিহির -ই মেয়ে। তার ভালো নাম ভবতারিণী, বিবাহের পর তার নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। ১৯৮২ পুজার ছুটির সময় জ্ঞানদানন্দিনী দেবী উৎসাহী হয়ে বাস্তভিটা দেখবার অযুহাতে যশোরের নরেন্দ্রপুর যান। উদ্দেশ্য কাছাকাছি পীরালী পরিবারের মধ্য হতে বধু সংগ্রহ জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে কাদম্বী দেবী, বালিকা ইন্দ্রানি, বালক সুরেন্দ্র নাথ ও রবীন্দ্রনাথ আসেন পুরাতন ভিটা দেখতে সে সময় ফুলতলা গ্রামের বিনিমাধব রায় চৌধূরীর কন্যা ভবতারিনীকে তারা দেখেন। যৌবনে কবি কয়েক বার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণে এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা-পিঠাভোগ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে অবস্থিত। পিঠাভোগ গ্রামে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত। পিঠাভোগ গ্রামটি বাংলাদেশের খুলনা জেলার ভৈরব নদের অববাহিকায় অবস্থিত। ইতিহাস থেকে জানা যায় খান জাহান আলীর আগমণের দুই শতাব্দী আগে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী পিঠাভোগের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। পঞ্চানন কুশারীর উত্তরপুরুষ দুর্গানারায়ন এবং গোপীমোহন জমিদারী কিনে জোঁড়াসাকোয় ঠাকুর এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেন। সতীশ্চন্দ্র মিত্র সম্পাদিত যশোর-খুলনা ইতিহাস এর ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে পয়োগ্রাম কসবা অধ্যায়ে বিশ্বকোষের পীরালী বিষয়ক অংশ এবং টি ডব্লিউ ফ্যারেলের দ্যা টেগোর ফ্যামিলি গ্রন্থে পঞ্চানন কুশারীর ইতিহাস উল্লিখিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষদের নির্মিত কারুকার্যখচিত একটি ভবন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী ২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকায় কিনে নেন। এরপর তিনি ভবনটি ভেঙে ফেলেন। একই বছরে দৈনিক ইত্তেফাক এবং আজকের কাগজে কবির আদি পুরুষের বাড়ি নামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের খুলনা জেলা প্রশাসক রবীন্দ্র নাথের পূর্বপুরুষের বসতভিটা সংরক্ষণের উদ্যোগ দেয়। সরকারী উদ্যোগে পিঠাভোগে ৯.৩৫ একর জমির উপরে নির্মিত বসত ভিটার খনন কাজ সম্পর্ন হয়েছে। ভবনটি সমতল ভুমি থেকে চার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এবং ইন্দো ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। ১৯৯৪ সালে ২৪ নভেম্বর পিঠাভোগে রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ২৫ শে বৈশাখ ১৪২২ বংগাব্দ থেকে এই স্মৃতি সংগ্রহশালায় তিনদিন ব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। রাড়ুলী; কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট-সেনহাটি: কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়ার সেনহাটি গ্রামে অবস্থিত বাংলা মংগল কাব্যের অমর কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রতিষ্ঠান। ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি নির্মান করা হয়। খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে অবস্থিত। ১৯১৪ সালে স্থানীয় উদ্যোগে ইনস্টিটিউটটি গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটিতে কিছু বই আছে যা পাঠকদের পড়ার জন্য ধার দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউটের পক্ষ বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। খান জাহান আলী সেতু: খানজাহান আলী সেতু রূপসা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু। এটি রূপসা সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দুই প্রান্তে দুটি করে মোট চারটি সিড়ি রয়েছে যার সাহায্যে মূল সেতুতে উঠা যায়। প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী সেতুটি পরিদর্শন করতে আসেন। খুলনা শহরের রূপসা থেকে ব্রিজের দূরত্ব ৪.৮০ কি.মি। এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার বলা যায় কারণ এই সেতু খুলনার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কি.মি.। সেতুটিতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে। বর্তমানে এটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রাতে সেতুর উপর থেকে খুলনা শহরকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। উৎসবের দিনগুলোতে এই সেতুতে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করেন ও আনন্দ করেন। জাপানী সহায়তায় নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। বকুলতলা; শিরোমণি; বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি সৌধ; চুকনগর; গল্লামারী; খানজাহান আলী কর্তৃক খননকৃত বড় দীঘি; মহিম দাশের বাড়ি; খলিশপুর সত্য আশ্রম; সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক; জাতিসংঘ পার্ক-খুলনা: জাতিসংঘ পার্ক বাংলাদেশের খুলনা জেলার খুলনা শহরে অবস্থিত একটি শিশু পার্ক। এটি নগরীর খানজাহান আলী সড়কের পাশে অবস্থিত। ১৯৯৪ সালে মহানগরী শিশু পার্ক নামে পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পার্কটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাতিসংঘ পার্ক। পার্কটির পূর্বপার্শ্বের জায়গা দিনে দিনে বেদখল হয়ে গড়ে উঠেছে ধর্মীয় উপাসনালয়, তৈরী হয়েছে পীরের মাজার, বহুতল বিশিষ্ট আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার, সিটি কর্পোরেশনের পানি উত্তোলনের পাম্প হাউজ। ধামালিয়া জমিদার বাড়ি: ধামালিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া নামক গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। কবে নাগাদ এবং কার দ্বারা এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়ির সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। এই জমিদার বংশের নাতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতান। তিনি ১৯৫০ সালে এই জমিদার বাড়িতে অর্থাৎ নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।