আবু লাহাবের আসল নাম ছিল আব্দুল উয্যা। গৌরবর্ণের কারণে তার ডাক নাম হয় আবু লাহাব। কারণ “লাহাব” বলা হয় আগুনের লেলিহান শিখাকে, যার রং গৌরবর্ণ। সে অনুসারে আবু লাহাব অর্থ গৌরবর্ণ বিশিষ্ট। এছাড়া আবু লাহাবের ডাক নামের সঙ্গে জাহান্নামের বেশ মিলও রয়েছে। কারণ সে রাসূল (সা.)- এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল। সে নানাভাবে রাসূল (সা.)কে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করত।
রাবী’আ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অন্ধকার যুগে যুল-মাআ’জ বাজারে দেখলাম। তিনি বলছিলেন, হে মানব সম্প্রদায় ! তোমরা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বলো সফলকাম হবে। আর মানুষ তাঁর চতুর্পাশে ভিড় জমাচ্ছিল। তাঁর পেছনে এক গৌরবর্ণ, ট্যারা চোখবিশিষ্ট সুন্দর চেহারার লোক বলছিল, এ লোকটি ধর্মত্যাগী, মিথ্যেবাদী।
রাসূল (সা.) যেখানে যেখানে যেতেন এ লোকটি সেখানেই পিছনে পিছনে যেত। তার পর আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলে লোকেরা বলল, এ লোকটি তাঁরই সহোদর চাচা। (মুসনাদে আহমদ- ৪/৩১, তাফসীর ইবনে মাসীর- ১৮/৩১০-৩১১)
আপনি প্রশ্ন করেছিলেন আবু লাহাবের সম্পর্কে। কিন্তু সুরা লাহাবে তার স্ত্রীর কথাও আছে। তাই তার সম্পর্কে ও বলি-
আবু লাহাবের স্ত্রীর নাম ছিল “আরওয়া”। সে ছিল হারব ইবনে উমাইরার কন্যা। তাকে “উম্মে জামীল” বলা হতো। আবু লাহাবের মতো তার স্ত্রী রাসূল (সা.) এর প্রতি বিদ্বেষী ছিল। সে এ ব্যাপারে তার স্বামীকে সাহায্য করত। আরবের বাক পদ্ধতিতে পশ্চাতে নিন্দাকারীকে “হাত্বাব” বা খড়ি বাহক বলা হতো।
শুষ্ক কাঠ একত্রিত করে যেমন অগ্নি সংযোগের ব্যবস্থা করে, পরোক্ষ নিন্দাকার্যটিও তেমনি ব্যক্তিবর্গ ও পরিবারের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
এই নারী বন থেকে কাঁটাযুক্ত খড়ি এনে রাসূল (সা.)কে কষ্ট দেওয়ার জন্য তাঁর পথে বিছিয়ে দিত। তার এই নীচ ও হীন কাজকে কুরআনে “হাম্মা লাতাল হাত্বাব” বা সে “খড়ি বহনকারী” বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। তার এই অবস্থানটি জাহান্নামেও হবে।
সে জাহান্নামে খড়ি এনে তার জাহান্নামী স্বামীর ওপর নিক্ষেপ করবে, যাতে আগুন আরও প্রজ্বলিত হয়ে উঠে। যেমন দুনিয়াতেও সে তার স্বামীকে কুফুর ও জুলুমের কাজে ইন্ধন যোগাত। পরিণামে আল্লাহ তাআলা এ মহিলাকে “খড়ি বহনকারী” বলে অপমানজনক উপাধী দিয়ে উপহাস করেছেন। (তাফসীরে তাবারী- ২৪/৬৮১, তাফসীর ইবনে কাসীর- ১৮/৩১২-৩১৩)