129 বার প্রদর্শিত
"ধর্ম ও বিশ্বাস" বিভাগে করেছেন Level 4

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন Level 4
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে – কৃষ্ণবাঞ্ছা-পূর্তি হেতু করে আরাধনে। অতএব রাধিকা নাম পুরাণে বাখানে।। পুরাণে বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হয়ে সহসা তার শ্রীপাদপদ্ম সেবার জন্য যিনি ধাবিত হয়ে পুস্পচয়ন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রথম আরাধনার বিধান করলেন তিনি হচ্ছেন রাধা। শ্রীমতী রাধারাণী সম্বন্ধে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন - মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী। সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি।। অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সীগণের শিরোমণি।” গোলকে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা নিত্য কান্ত ও কান্তারূপে বিরাজমান । সেই কথা শ্রীব্রহ্মা ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৭ শ্লোকে) বর্ণনা করেছেন, “পরম আনন্দদায়িনী শ্রীমতী রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতী রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপীরা যার নিত্য লীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি ।” ভগবানের ভক্ত পার্ষদগণ কত সুন্দরভাবেই শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সেই সব সুন্দর সরল কথাগুলি জেনেও ‘সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসী’ বলে চিন্তাকরতে থাকেন । জটিল আর কুটিল মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরাই রাধারাণীকে কৃষ্ণের মামী বলে ব্যাখ্যা করতেই পারেন । কারণ আপন লাম্পট্য ভাবধারা দিয়ে ভগবানের চরিত্র ব্যাখ্যা করে তারা আমোদ পেতে খুবই আগ্রহী । ষড় গোস্বামীর গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে তারা কখনও অনর্থক কথাগুলি বলতে পারেন না । শ্রী রাধারাণী হচ্ছেন কৃষ্ণপ্রিয়া আর শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন রাধানাথ। রাধা কৃষ্ণের দিব্য সম্পর্ক কি ?? রাধা কৃষ্ণের দিব্য সম্পর্ক সম্মন্ধে জানতে হলে আগে জানতে হবে রাধা রানী কে এবং তাঁর এই রাধা নামের কারন কি?? রাধারানী রাস মন্ডলে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে ‘রা’ এবং পরমেশ্বর ভগবানকে আরাধনার জন্য পুষ্প সহ ধাবিত হয়েছিলেন বলে ‘ধা’ এভাবেই তিনি হলেন রাধা।। (পরমেশ্বর ভগবানের লীলা রহস্য) একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শ্রী ভগবান যখন দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনের জন্য ধরাধামে অবতার হয়ে আসেন তখন তিনি কিন্তু একা আসেন না।। আসেন তাঁর পারিষদ সহ, তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তি সহ।। যেমন ত্রেতা যুগে রাম এবং সীতা, কলিযুগে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু এবং মা বিষ্ণুপ্রিয়া। একই ভাবে দ্বাপর যুগের শেষে আসলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা রানী। ভগবান ধরাধামে এলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই লীলা করেন। দেবকীর গর্ভে আসলেন কৃষ্ণ এবং রাজা বৃষভানুর ঘরে আসলেন রাধারানী। এবার একটু বেদের দিকে তাকাই। বেদে লক্ষ্মী নারায়নের কথা বলা আছে। স্বামী নারায়ন নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছেন এবং তাঁকে কেউই সৃষ্টি করেন নি। আবার শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, আমিই সমগ্র বেদের কৃষ্ণ। অর্থাৎ আমাদের এই শ্রীকৃষ্ণই হলেন সমগ্র বেদের নারায়ন। অর্থাৎ সবই এক। তাই স্বামী নারায়নের সাথে সার্বক্ষণিক সেবারত অবস্থায় যে লক্ষ্মীকে মাতাকে দেখি প্রকৃত অর্থে তিনিই রাধারানী। (চৈতন্য ব্রাদারহুড) সুতরাং, রাধারানী কৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি যে শক্তির প্রভাবে তিনি সৃষ্টি করেন। ‘মহাভাব স্বরুপা শ্রী রাধা ঠাকুরানী সর্বগুণ খনি কৃষ্ণ কান্তা শিরোমনি।’ আবার এক অর্থে রাধা কৃষ্ণের কোন ভেদ নেই। তাঁরা অভেদ, তাঁরা একাত্মা। আর তাইতো, ‘রাধা পূর্ণ শক্তি, কৃষ্ণ পূর্ণ শক্তিমান। দুই বস্তু ভেদে নাই, শাস্ত্রের প্রমান।।’ এই সমস্ত কথার সারমর্ম হচ্ছে, রাধা কৃষ্ণের সম্পর্ক শুধু দ্বাপর যুগের বৃন্দাবন লীলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই সম্পর্কিত। এই অন্তরঙ্গা বা হ্লাদিনী শক্তির দ্বারাই তিনি সৃষ্টি করেন। সুতরাং যারা এই সম্পর্ককে কলুষিত করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দেয় তারা ভন্ড। ....জয় শ্রীরাধে....

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...