স্যার আইজ্যাক নিউটন (ইংরেজি : Sir Isaac Newton) (জন্ম : জানুয়ারি ৪, ১৬৪৩ – মৃত্যু : মার্চ ৩১, ১৭২৭) প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৬৮৭ সনে তার বিশ্ব নন্দিত গ্রন্থ ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয় যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে, আর তার গবেষণার ফলে উদ্ভূত এই চিরায়ত বলবিজ্ঞান পরবর্তী তিন শতক জুড়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জগৎে একক আধিপত্য করেছে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রের সাথে নিজের মহাকর্ষ তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণার পেছনে সামান্যতম সন্দেহও দূরীভূত হয় বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়। বলবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন নিউটন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি এই ভিত্তি রচনা করেন। আলোকবিজ্ঞানের কথায় আসলে তার হাতে তৈরি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা এসে যায়। একই সাথে তিনি আলোর বর্ণের উপরএকটি তত্ত্ব দাড় করান যা একটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণটি ছিল ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণের উপর যার মাধ্যমে দৃশ্যমান বর্ণালির সৃষ্টি হয়েছিল। শব্দের দ্রুতি এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বিষয়েও তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন যা থেকে নিউটনের শীতলীকরণ সূত্র এসেছে। গণিতের জগৎেও নিউটনের জুড়ি মেলা ভার। নিউটন এবং লাইবনিজ যৌথভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। এই নতুন শাখাটিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগৎে বিপ্লব সাধনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া নিউটন সাধারণীকৃত দ্বিপদী উপপাদ্য প্রদর্শন করেন, একটি ফাংশনের শূন্যগুলোর আপাতকরণের জন্য তথাকথিত নিউটনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং পাওয়ার সিরিজের অধ্যয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২০০৫ সনে রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি এ প্রশ্ন নিয়ে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করে। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে নিউটন আইনস্টাইনের চেয়েও অধিক প্রভাবশালী। জীবনের শেষ ৩০ বছর নিউটন গাণিতিক মূলনীতিসমূহের উপর খুব কমই মৌলিক অবদান রাখতে পেরেছেন। এ বিষয়ে তার উৎসাহ এবং দক্ষতার কোন অভাব তখনও ছিল না। ১৬৯৬ সালে তিনি এক রাতে একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। এই সমস্যাটি বার্নোলি একটি প্রতিযোগিতায় প্রস্তাব করেছিলেন এবং এর সমাধানের সময় বরাদ্দ ছিল ৬ মাস। আবার ১৭১৬ সনে তিনি মাত্র কয়েক ঘন্টায় একটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। বিজ্ঞানী লিবনিজ এই সমস্যাটিকে ইংরেজ বিশেষজ্ঞদের জন্য রোমহর্ষক এবং দুঃসাধ্য বলে উল্লেখ করেছিলেন। এ সময় দুইটি বিষয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। একটি হল তার কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার জ্যোতির্বিজ্ঞানী রয়েলের পর্যবেক্ষণের সাথে খাপ খায়নি। এ নিয়ে একটি বিতর্ক ছিল। অন্যটি হল ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে লিবনিজের সাথে বিতর্ক ও বিরোধ। তিনি প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থটিকে পুনরায় সংশোধন করে ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন। নিউটনের বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহ তাকে প্রভূত সম্মান এনে দিয়েছিল। তিনি ইংল্যান্ডের বিচারালয়ে একজন জনপ্রিয় পরিদর্শক ছিলেন। ১৭০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। সমগ্র মহাদেশ থেকেই তার জন্য বিভিন্ন সম্মাননা এসেছিল। তখনকার নেতৃস্থানীয় সকল বিজ্ঞানীর সাথেই তার যোগাযোগ ছিল। তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এতো অধিক সংখ্যক বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান ছাত্রের আগমন ঘটতো যে তিনি বিরক্ত হয়ে যেতেন। এতো সম্মান পেয়েও নিউটন এক সময় বিনয় প্রকাশ করেছেন। মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে তিনি বলেছিলেন: “আমি জানিনা বিশ্বের কাছে আমি কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক যে কেবল সমুদ্র উপত্যকায় খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্র নুড়ি বা ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল।” ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দের পর নিউটনের স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটে। এর ফলে একজন ডেপুটি মিন্টে তার কাজ মওকুফ করার ব্যবস্থা করে দেন। ১৭২৭ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেষবারের মত রয়েল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন। ১৭০৩ সাল থেকেই তিনি এই সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে-তে সমাধিস্থ করা হয়। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।