আমাদের শ্রাব্যতার সীমা ২০ থেকে ২০০০০ হার্জ। এর বেশি শব্দতরঙ্গ হলে তাকে বলে আল্ট্রাসাউন্ড। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের শ্রাব্যতার সীমার বাইরের কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের ছবি নিয়ে রোগীর রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা আল্ট্রাসনোগ্রাম বলে। এটি একটি অতি উন্নত রোগ নিরূপণ পদ্ধতি, যা শুধু নিরাপদ শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে করা হয়। কার্ডিওলজিস্ট ড. এডলার এবং ইঞ্জিনিয়ার হার্টজ সিমেন্স ১৯৫৩ সালে প্রথম হার্টের আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। ১৯৫৮ সালে গাইনি বিভাগে আল্ট্রাসাউন্ড নিয়ে আসেন ড. ইয়ান ম্যাকডোনাল্ড। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত যেসব আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছে, সেগুলো ছিল ২ডি। বর্তমানে ৩ডি ও ৪ডি আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক ছবি নেওয়া হলে তাকে বলে ৩ডি। আবার গতিশীল ও চতুর্থ মাত্রা হিসেবে সময় থাকলে তা হয় ৪ডি আল্ট্রাসনোগ্রাম। সাধারণত আল্ট্রাসনোগ্রাফের শব্দতরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১-৬ মেগাহার্টজ (কম ফ্রিকোয়েন্সি) বা ৭-১৮ মেগাহার্টজ (উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি) হয়ে থাকে। রোগীর যে অংশের রোগ নির্ণয় করতে হবে, সে অংশে এই শব্দতরঙ্গ প্রবেশ করানো হয়। এই শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যে নির্দিষ্ট অঙ্গের ছবি কম্পিউটারের মনিটরে দেখতে পাই। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন—লিভার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, কিডনি, পিত্তথলি, চোখ, থাইরয়েড, মূত্রথলিসহ নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের নানাবিধ রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে বাচ্চা ডেলিভারির তারিখ থেকে শুরু করে বাচ্চার গঠনপ্রকৃতি, মায়ের সম্ভাব্য কোনো অসংগতি, যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর, মায়ের পেটের ভেতর বাচ্চার অবস্থান, বাচ্চার নড়াচড়া, যমজ বাচ্চা, বাচ্চা ছেলে না মেয়ে—এসবসহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। এক্স-রের মতো এতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই বলে এখন পর্যন্ত একে নিরাপদ পরীক্ষা বলে মনে করা হয়। তথ্যসূত্রঃ কালের কণ্ঠ