হস্তমৈথুন বা স্বমেহন (Masturbation) একরূপ যৌনক্রিয়া যাতে একজন ব্যক্তি কোনো সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকেই যৌনসুখ অর্জনের চেষ্টা করে। আত্মমৈথুন ও স্বকাম এর সমার্থক শব্দ। এ যৌনক্রিয়াই প্রধানত হাতের সাহায্যে পুরুষ তার লিঙ্গ এবং নারী তার যোনী ঘর্ষণ করে বলে একে সচরাচর হস্তমৈথুন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
স্বমেহন হচ্ছে নিজের জননাঙ্গে যৌন উদ্দীপনা প্রদান যার মাধ্যমে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয় বা অন্যান্য যৌন সন্তুষ্টি লাভ হয়, সাধারণত রাগমোচন লাভ পর্যন্তই এটি চালিয়ে যাওয়া হয়।এই উদ্দীপনায় হাত, আঙ্গুল, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বস্তু, যৌনখেলনা যেমন ভাইব্রেটর, বা এগুলোর মিলিত ব্যবহার করা হতে পারে।সঙ্গীর দ্বারা মানব নিয়ন্ত্রিত উদ্দীপনা যেমন অঙ্গুলিসঞ্চালন, হ্যান্ডজব বা পারস্পরিক স্বমেহন হচ্ছে সাধারণ যৌন ক্রিয়া, এবং এগুলো ভেদনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, স্বমেহন সকল লিঙ্গ, সকল বয়সেই দেখা যায় যদিও এদের স্বমেহনের হারে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্যকর যৌনক্রিয়ার অনেক চিকিৎসাসংক্রান্ত এবং মানসিক উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে, যার মধ্যে স্বমেহনও রয়েছে। স্বমেহন ও কোন মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক পাওয়া যায় নি।
স্বমেহনকে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বিভিন্ন সময়ে শৈল্পিকভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে, এবং অনেক প্রাচীন রচনাতেও এর কথা উঠে এসেছে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে কিছু ইউরোপীয় ধর্মতাত্ত্বিক এবং চিকিৎসকগণ স্বমেহনকে জঘন্য, শোচনীয় এবং ভয়ঙ্কর হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু বিংশ শতকে এই ট্যাবুগুলো সর্বত্রই কমে আসে। শিল্প, জনপ্রিয় সঙ্গীত, টিভি, চলচ্চিত্র, সাহিত্য প্রভৃতিতে স্বমেহন সংক্রান্ত বিষয়াদির উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধর্মে স্বমেহন সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম মতামত দেখা যায়। কোন কোন ধর্ম অনুসারে, স্বমেহন আধ্যাত্মিকভাবেই একটি ক্ষতিকারক চর্চা, আবার কোন কোন ধর্ম এটিকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকারক বলে মনে করে না। আবার অনেক ধর্ম আছে যাদের কাছে স্বমেহন এর নীতি-নৈতিকতা পরিস্থিতি নির্ভর। স্বমেহন নিয়ে আইনগত অবস্থাও ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ছিল, এবং বর্তমানে বেশিরভাগ দেশেই প্রকাশ্যে স্বমেহন অবৈধ।
পাশ্চাত্যে ব্যক্তিগত স্থানে স্বমেহন করা, অথবা সঙ্গীর সাথে স্বমেহন করাকে সাধারণত স্বাভাবিক ও যৌন উপভোগের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হিসেবেই দেখা হয়। হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনকর্ম নাকি যৌনবিকৃতি কি-না এই বিষয়ে দীর্ঘকাল থেকে বিতর্ক চলমান ছিল, কিন্তু এখন একে আধুনিক চিকিৎস্যা শাস্ত্রে হস্তমৈথুনকে একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক মানসিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।অনেক স্থানেই প্রাণীর স্বমেহনকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই স্বমেহন পাওয়া গেছে।
হস্তমৈথুন একটি কামোদ্দীপক প্রক্রিয়া যার চূড়ান্ত পরিণতিতে সাধারণত পুরুষের বীর্যপাত হয়ে থাকে। তবে বীর্যপাতের আগেই হস্তমৈথুন পর্ব শেষ হতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য অর্থাৎ হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নারীর রাগমোচন হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। হস্তমৈথুন নিজেই একটি সুখপ্রদায়ী প্রক্রিয়া। এটি আসক্তিজনক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যাসংকুল হতে পারে।