১। তার পূর্ণনাম “লিওনেল আন্দ্রেস মেসি”।
২। মেসি ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
৩। মেসি যেখানে জন্মছেন, সেখানে বিখ্যাত আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারা জন্মগ্রহণ করেছেন।
৪। তার পরিবার ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। তার বাবা জর্জ একজন স্টিলশ্রমিক ছিলেন। যিনি নিজেও স্থানীয় যুব ফুটবল টিমের কোচ ছিলেন।
৫। মেসি শৈশবে তার আশেপাশের অন্যান্য ছেলেদের মতো স্বাস্থ্যবান ছিলেন না। তিনি গ্রোথ হরমোনজনিত অসুখে ভুগেছিলেন। যা তার বৃদ্ধি ১১ বছর বয়সে থামিয়ে দেয়। তার পরিবারের তার চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিল না। যেখানে তার চিকিৎসার জন্য মাসে ৯০০ ডলারের প্রয়োজন ছিল।
৬। আরেকটি আশ্চর্য খবর হলো, মেসির সাথে বার্সার প্রথম চুক্তি একটি নেপকিন পেপারে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কারণ বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রিক্সাচ তার খেলায় এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাকে সাথে সাথে চুক্তিবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আশেপাশে তখন কোন কাগজ না থাকায় সেই নেপকিন পেপারে চুক্তি করা হয়।
৭। বার্সেলোনা তার খেলার এতই মুগ্ধ ছিল যে, তারা মেসির যাবতীয় চিকিৎসার ভার নিজের কাঁধে তুলে নেয় এবং তার পরিবারকে স্পেনে নিয়ে আসে। আর মেসির বয়স তখন ছিল মাত্র ১৩ বছর। আর এ হতেই বোঝা যায় নেপকিনে কেন তার প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
৮। ২০০৫-০৬ সিজনে মেসি প্রথম শ্রেণির প্লেয়ার হিসেবে প্রথম অর্থ প্রদান করা হয়।
৯। মেসি দুটি দেশের পাসপোর্টের অধিকারী। একটি হলো তার জন্মভূমি আর্জেন্টিনার আর দ্বিতীয়টি হলো স্পেনের। তিনি ২০০৫ সাল হতে স্পেনের নাগরিকত্ব পান।
১০। ২০০৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার প্রথম অভিষেক ঘটে RCD Espnyol এর বিপক্ষে এবং তিনি ছিলেন বার্সার তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ প্লেয়ার। সে সময়ে তিনি ছিলেন বার্সার সর্বকনিষ্ঠ গোল স্কোরার।
১১। তার অভিষেক সুখকর হয়নি। রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মাঠে নামার মাত্র ৪৭ সেকেন্ডের মধ্যে লালকার্ড খেয়ে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়।
১২। মেসি স্পেনিশ ফার্স্ট ডিভিশন লিগেও তার অভিষেক ঘটান। সেখানে ১৭টি ম্যাচে তিনি ৬টি গোল করেন। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৬ ম্যাচে ১টি গোল করেন।
১৩। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক জয় করেন। আর স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।
১৪। মেসি তার ১০ নম্বর জার্সিটি আরেক বার্সা কিংবদন্তি রোনালদিনহোর কাছ থেকে পান।
১৫। ২০০৯ সালে তিনি প্রথম ফিফা ব্যালন ডি’অর লাভ করেন। আর এরপরতো ইতিহাস। ২০০৯ হতে ২০১২ পর্যন্ত টানা ৪ বারের মতো তিনি এই মর্যাদা লাভ করেন। যা কিনা এখন পর্যন্ত রেকর্ড।
১৬। মেসি রাতে ঘুমালে উনার নাকের শব্দে আসে পাসের মানুষ ঘুমাতে পারেনা।তবে থিয়াগো ও ভাবির হবু হয়ে গেছে
১৭। ইংল্যান্ডের ভিভিয়ান উডওয়ার্ডের সাথে যৌথভাবে (যিনি কিনা ১৯০০ সালের দিকে তার খেলা সমাপ্ত করেছিলেন।) এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে জাতীয় দল ও ক্লাব উভয়ের হয়ে কমপক্ষে ২৫ গোল করেন।
১৮। তিনি স্পেনের হয়ে খেলার জন্য ডাক পেয়েছিলেন। যা কিনা তিনি বিনয়ের সহিত প্রত্যাখ্যান করেন। (হেটারস্রা বলে মেসির নাকি দেশপ্রেমের অভাব।)
১৯। মেসি বিশ্বকাপের ৬ষ্ঠ কনিষ্ঠ গোল স্কোরার।
২০। মেসিকে “দা ফ্লিয়া” নামেও ডাকা হয়। কারণ তিনি মাছির মতোই ক্ষিপ্র ও দ্রুতগতিসম্পন্ন।
২১। তার বংশেই রয়েছে ফুটবল। তার কাজিন ইমানুয়েল এবং মেক্সি বিয়ানচুচ্চি উভয়ই দক্ষিণ আমেরিকার প্রভাবশালী ক্লাবের হয়ে খেলেন। যদিও তার এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার ক্লাব বা জাতীয় দলের হয়ে খেলেন নি।
২২। যদিও কখনো বার্সা মেসির সাথে চুক্তি শেষ করতে চায় তাহলে তাদের ৩৩০ মিলিয়ন!!!!!! ডলারের খেসারত দিতে হবে।
২৩। মেসি যে দুটি ধারার গান পছন্দ করেন তা হলো, সাম্বা ও কুম্বি।
২৪। বর্তমানে লিওনেল মেসি বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে ধনী ফুটবল প্লেয়ার।
২৫। প্রতিদিন মেসির ইনকাম কমপক্ষে ১২৮,০০০ ডলার!!!! প্রতিদিন।
২৬। প্রো এভোলুশন সকার ভিডিও গেমে ২০০৯ ও ২০১১ সালে মেসিকে কভারে ফিচার করা হয়। তিনি ফার্নান্দো তোরেসের সাথে এর ট্রেলর ও মোশনেও কাজ করেন।
২৭। মেসি শুধু একজন ভালো প্লেয়ারই নন তিনি একজন উত্তম মানুষও। মেসি লিও মেসি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, যা কিনা শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য কাজ করে থাকে। তার ফাউন্ডেশন হতে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করা হয়ে থাকে।
২৮। মেসি ইউনিসেফের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডারও।
২৯। তিনি ফ্রাজিল এক্স সিনড্রোমে( যা অটিজমের সাথে সম্পৃক্ত ) আক্রান্ত মানুষের জন্যেও কাজ করেন।
৩০। মার্চ, ২০১৩ তারিখে মেসি তার জন্মস্থান রোজারিওতে শিশুদের জন্য একটি হাসপাতালের পুনঃনির্মাণে প্রায় ৮,১২০০০ ডলার দান করেন। এমনকি তিনি ডাক্তারদের বার্সেলোনাতে এসে ট্রেনিং নেয়ার জন্যও অর্থ পরিশোধ করে থাকেন।
৩১। মেসির খেলার ধরনকে মেরাডোনার সাথে তুলনা করা হয়। যিনি নিজেই কিনা তাকে “সাকসেসর” নামে অভিহিত করেছেন।
৩২। মেরাডোনা নয়, কিন্তু মেসি প্রথম আর্জেন্টাইন হিসেবে ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার হিসেবে ভূষিত হন। যদিও এই পুরস্কারটি ১৯৯১ সাল থেকে চালু করা হয়েছে।
৩৩। ২০১২ সালে মেসি একটি জাপানি ফেশওয়াশ স্কেল্পের বিজ্ঞাপন করেন।
৩৪। ২০১২ সালে মেসি তুর্কি বিমানের গ্লোবাল ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডার হন। এবং তিনি এনবিএ স্টার কোবে ব্রায়ান্টের সাথে একটি বিজ্ঞাপনও করেন।
৩৫। মেসি আগে লুসিয়ানা সালজার নামের একজন আর্জেন্টাইন মডেলের সাথে সম্পর্ক রাখতেন।
৩৬। তিনি আর্জেন্টিনায় জন্ম নেয়া আন্তোলিয়া রোকুজ্জোর সাথে ২০০৯ সাল থেকে সম্পর্কে জড়িত।
৩৭। তার পুত্রসন্তান থিয়াগো, ২০১২ সালের ২ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করে। সেদিন মেসি তার ফেসবুক পেজে লিখেন “আজ আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ, আমার পুত্র জন্মেছে আর ঈশ্বরকে এই উপহারের জন্য ধন্যবাদ।”
৩৮। তার ছেলে ইতোমধ্যেই নিউওয়েল্স ওল্ড বয়েজ সাপোর্টার ক্লাবের সদস্য। যা কিনা মেসি আসল ক্লাব ছিল। মেসির পুত্রের বয়স যখন ৭২ ঘন্টা তখন তারা এই চুক্তি স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হয়।
৩৯। মেসি তার বাম পায়ে তার ছেলের নাম ও ছবি ট্যাটু করিয়েছেন।
৪০। মেসি রোমান ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি ২০১৩ সালে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের সাথে দেখা করেন। আর এ সম্বন্ধে মেসি বলেছেন, “আজ নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন। আমাদের সব জায়গার ভালো হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”
৪১। লিওনেল মেসি বেশিরভাগ ফুটবল বোদ্ধাদের নিকট তাদের জেনারেশনের সেরা প্লেয়ার বলে মনোনীত হয়েছেন।
৪২। মেসি ২০১৩ সালে স্পোর্টস প্রো মেগাজিনের মতে নেইমারের পরেই দ্বিতীয় জন হিসেবে বিশ্বের সেরা মার্কেটেবল অ্যাথলেট হিসেবে নির্বাচিত হন।
৪৩। লিওনেল মেসি একমাত্র প্লেয়ার হিসেবে চারবার যাকিনা টানা জিতেছিলেন, এবং তিনবার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কার জয়ী প্লেয়ার।
৪৪। মেসির উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। (১.৬৯ মিটার)
৪৫। মেসি শৈশব হতেই খুবই লাজুক মানুষ। তিনি ফোনে কথা বলার চেয়ে এসএমএসের মাধ্যমেই কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
৪৬। গোল করার পর মেসি খুবই বিনয়ের সহিত উদ্যাপন করেন। সাধারণত তিনি তার হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে তার দাদিকে স্মরণ করেন, যিনি কিনা মেসির ১০ বছর বয়সেই মারা যান। মেসি বিশ্বাস করেন তার দাদি তার খেলা উপর হতে দেখছেন। আর তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি এভাবে উদ্যাপন করেন।
৪৭। তিনি তার অবসর সময় তার গার্লফ্রেন্ড ও পুত্রের সাথেই কাটাতে বেশি পছন্দ করেন। এছাড়া মেসি প্লেস্টেশনের ভক্ত।
৪৮। মেসি তার নিজের সম্বন্ধে কোন প্রশংসা শুনতে পছন্দ করেন না।
৪৯। জাপানিজ জুয়েলার ‘গিঞ্জা টাকানা’ মেসির বাঁ পায়ের সোনা নির্মিত একটি রেপ্লিকা তৈরি করে। যার ওজন ২৫ কেজি। এটি ২০১৩ সালে নিলামে তোলা হয় আর ৫.২৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রিত হয়। এই অর্থ ২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামি আক্রান্ত মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়।
৫০। মেসি হলেন এমন একজন প্লেয়ার যিনি তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর উন্নতিতেও খুশি হন। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ গত ব্যালন ডি’অর তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পাওয়ার পর তার মুখের অমলিন হাসি।