শক্তিশালী পাসওয়ার্ড:
আপনার যেকোন অনলাইন অ্যাকাউন্টের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তার জিনিসটি হলো পাসওয়ার্ড যা শুধু আপনিই জানেন। এই পাসওয়ার্ডটা হওয়া চাই খুবই শক্তিশালী। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য এমন একটি পাসওয়ার্ড দিন; যা কমপক্ষে ৮-১০টি অক্ষরের হয়। পাসওয়ার্ডটি আরো বেশি নিরাপদ করতে ক্যাপিটাল এবং স্মল লেটার এর পাশাপাশি বিশেষ চিহ্ন (#%্*!<) গুলো ব্যবহার করুন। আপনার পাসওয়ার্ড যত বড় ও জটিল হবে অন্যদের তা অনুমান করতে তত কঠিন হবে। যেমন আপনার পাসওয়ার্ডটা এমন হতে পারে- “me&she=we@2016*2″। অনেকেই সহজে পাসওয়ার্ড মনে রাখতে 13572468 বা 987654321 বা সহজ টাইপের নম্বর, মোবাইল / ফোন নম্বর, লাইসেন্স নম্বর, জন্মদিন ইত্যাদি ব্যবহার করে, যা একেবারেই ঠিক না।
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি যে কাছের পরিচিত কেউ হ্যাক করবে না তার গ্যারান্টি কি, এরকম সহজ পাসওয়ার্ড দিলে তার পক্ষে এ তথ্য ব্যবহার করে হ্যাক করাটা অনেক সহজ হবে।
# পাসওয়ার্ড কখনোই ৮ বর্ণের নিচে দিবেন না।
# সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড দিবেন।
# সম্ভব হলে কিছুদিন পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
মনে রাখবেন আপনার পাসওয়ার্ড নিরাপদ তো আপনার ফেসবুক নিরাপদ অর্থাৎ আপনিও নিরাপদ।
ফেসবুক সিকিউরিটি প্রশ্ন:
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একসেস নেয়ার জন্য এটি বহুল ব্যবহৃত একটি পন্থা…
ধরুন আপনি ফেসবুক খোলার প্রথম দিকে বুঝে না বুঝে সিকিউরিটি প্রশ্ন এড করেছিলেন এবং সেটার উত্তর মোটামোটি ভাবে আপনার শত্রুও আন্দাজ করে বের করে পারে। ফলে উক্ত ব্যাক্তি ইচ্ছা করলেই আপনার একাউন্ট এর একসেস নিয়ে নিতে পারবে। ফেসবুকে এই সিকিউরিটি প্রশ্ন এর উত্তর একবার আপডেট করলে পরবর্তী তে আপডেট করার ও উপায় নেই।
প্রশ্ন গুলা ও সাধারনত এরকম হয়, আপনার মায়ের নাম কি? আপনার প্রিয় বন্ধু কে? ইত্যাদি।
# সিকিউরিটি প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন মূল উত্তর থেকে ভিন্ন দিতে পারেন, যেমন প্রশ্ন ছিলো “আপনার মায়ের নাম কি?” আর আপনি উত্তর দিলেন আপনার কোন সিক্রেট নম্বর বা সিক্রেট নাম। তাহলে এটা কারোরই পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হবে না।
সেফ ব্রাউজিং:
একদম ব্যক্তিগত ডিভাইস ছাড়া অন্যকোন ডিভাইস থেকে ফেসবুক ব্রাউজ করলে লগইন করবেন না।
# একান্তই প্রয়োজন হলে “Remember This Password” এরকম পপ-আপ মেসেজ আসে। সব সময় “NO” অপশনটা বেছে নিন। কারণ “Yes” দিলে আপনার পাসওয়ার্ড ব্রাউজারে সেভ হয়ে যাবে। ফলে পরবর্তীতে কেউ ব্রাউজার থেকে সহজেই আপনার আইডি পাসওয়ার্ড জানতে পারবে।
# অন্য কোন কম্পিউটার বা ফোনের ব্রাউজার দিয়ে যদি ব্রাউজ করতেই হয় তাহলে প্রত্যেক ব্রাউজারের প্রাইভেট ব্রাউজিং বলে একটা অপশন থাকে। এভাবে ব্রাউজ করলে একটা নতুন প্রাইভেট উইন্ডো তৈরি হয় এবং ঐ সময় আপনি যাই ব্রাউজ করুন না কেন ব্রাউজার হিস্ট্রিতে কিছুই সেভ হবে না।
# অন্যের পিসি বা ফোন দিয়ে ফেসবুকে লগইন করার সময় দেখে নিন “Keep me loged in” অপশনের টিক মার্ক উঠানো আছে কিনা। এবং ব্রাউজ শেষে লগআউট করতে কখনো ভুলবেন না।
# সম্ভব হলে লগআউটের পরে ব্রাউজারের ক্যাশ মুছে দিবেন।
ফেসবুক সিকিউরিটি সেটিংস:
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য কতগুলো অপশন তৈরি করেছে সেগুলোর অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
Login Alerts: কেউ যদি নতুন ডিভাইস বা ব্রাউজার দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টটিতে প্রবেশ করে অথবা আপনিও করেন তবে ফেসবুক আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে বা মেইলে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করে দেবে। ফলে অনাকাঙ্খিত কোন লগইন হলে আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেবন।
Login Approvals: এটি ফেইসবুকের ২ ফেকটর অথিনটিকেশন (2FA) যা আপনার অ্যাকাউন্টটিকে অধিক নিরাপত্তা দিবে, অনেকেই এসএমএস এর বিরক্তিতে এটা বন্ধ রাখা যা একে বারেই ঠিক না। এই অপশনটি আপনি যদি এই অপশনটি চালু রাখেন তাহলে আপনি বা অন্য কেউ যদি নিয়মিত ব্রাউজার বা অ্যাপ ব্যতিত অন্য কোন ব্রাউজার দ্বারা লগইন করতে চায় তাহলে তাকে পাসওয়ার্ড দেবার পরে অতিরিক্ত একটি কোড ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটিতে প্রবেশ করা যাবে। এই কোডটি আপনি পাবেন অ্যাপসের Code generator এ অথবা মোবাইল এসএমএস আসবে।
Login approbals অন কারার জন্য ফেইবুকের প্রফাইলে আপনার ফোন নাম্বারটি এড করে নিন, পরে settings & privacy > security > login approvals on. enable > start setup > continue ক্লিক করলে ফোন নাম্বারে একটি কোড আসবে, কোডটি দিয়ে continue ক্লিক করুন। পরে, No thanks, require a code right away রেডিও বাটনে চেক দিয়ে close ক্লিক করুন, কাজ শেষ. আর এখন থেকে আপনি নিরাপদ।
Choose Trusted Contacts: কিছু বন্ধুকে এখানে অ্যাড করে রাখুন যাতে কখনো যদি কোনো কারণে আইডিতে লগইন করতে সমস্যা হয় তাহলে তাদের সাহায্যে আইডিতে প্রবেশ করতে পারবেন।
ইমেইল সুরক্ষিত করা:
অনেক সময় ইমেইল হ্যাক হলে উক্ত মেইলের মাধ্যমে খোলা ফেসবুকসহ অনান্য অ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে। অর্থাৎ ফেসবুকের পাসওয়ার্ড রিসেট করে ফেলতে পারে ইমেইল ব্যবহার করে। তাই ফেসবুকের মত ইমেইলর পাসওয়ার্ডও হওয়া চাই শক্তিশালী। ইমেইলে সবসময় মোবাইল ভেরিফিকেশন চালু করে রাখবেন।
# পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করেও বা পাসওয়ার্ড না জেনেও ফেইবুকে লগইন করা যায় যদি ইমেইল বা মোবাইলের অ্যাকসেসে থাকে। সুতারাং আপনার ইমেইল বা মোবাইল যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে তাহলে সে চাইল আপনার অজান্তেই ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবে।
লগইনের ঠিকানা:
অনেক সময় ব্যবহারকারী কোন লিংক বা অ্যাপেসে ক্লিক করার পরে আবার ফেসবুকে লগইন করতে বলে, এমন হলে কখনোই লগইন করবেন না, মনে রাখবেন ব্রাউজার থেকে লগইনের সময় অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই
https://www.facebook.com থেকে লগইন করবেন।
আরো টিপস:
# অনেকেই ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। অ্যাপস ব্যবহার সময় দেখবেন অ্যাপটিকে আপনি কি কি পারমিশন দিচ্ছেন।
# ধরুন আপনি একটি ভিডিও লিংকে ক্লিক করলেন তখন অ্যাপটি কিছু পারমিশন চাইলো (পোষ্ট করা, মেইল ঠিকানা নেওয়া ইত্যাদি) আপনি দিলেন, ফলে উক্ত অ্যাপের (একসেস টোকেন) মাধ্যমে আপনার ফেইবুকে সয়ংক্রিয় পোষ্ট বা শেয়ার হতে পারে।
# অপ্রয়োজনীয় কাজে অ্যাপ ব্যবহার করবেন না।
# ফেসবুক স্ট্যাটাসে বা মেসেজে আক্রমণাত্মক এমন কিছু লিখবেন না, যেটা পড়ে মনে হয় আপনি কাউকে হুমকি দিচ্ছেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে রিপোর্ট করে, তাহলে আপনি কিন্তু ব্লক হতে পারেন। সেজন্য কাউকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
# ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধু বাড়ানোর জন্য ১ দিনে একাধিক জনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো মোটেও ঠিক নয়। এক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে। তাই অনাকাক্সিক্ষত ব্লক হওয়া থেকে বাঁচতে অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না।
# একই দিনে যদি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে একই মেসেজ লিখে একাধিকবার মেসেজ পাঠানো হয়; তাহলেও আপনার অ্যাকাউন্ট ব্লক হতে পারে। এক্ষেত্রে একই ধরনের বক্তব্য ভাষা পরিবর্তন করে কিছুটা ভিন্নতা এনে মেসেজ পাঠান। এতে অন্য বন্ধুরা বিরক্ত হবে না। আবার আপনি যদি আপনার ফেসবুক ওয়ালে একই পোস্ট একাধিকবার দেন তাহলেও সেটাকে ফেসবুক স্প্যাম ভেবে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে।
# প্রতিদিন একাধিক ফেসবুক ফ্যান পেজে লাইক দিবেন না। বেশি লাইক দিলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রথমে সতর্কবার্তা দেবে। এরপরও আপনি যদি কাজটি চালিয়ে যান, তাহলে কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে। অনেকেই অভিযোগ করেন তাদের ফেসবুক আইডিতে লগইন করতে পারছেন না, আবার অনেকেই অভিযোগ করেন তাদের ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধুদের মাঝে অনেক সময় আজেবাজে কিছু ছবি শেয়ার করা হয়, যা কি না তারা নিজেরা করেন না। হ্যাকিং করে অন্যের ফেসবুক আইডিতে প্রবেশ করে হ্যাকাররা কাজটি করে। আপনার ফেসবুক আইডি নিরাপদে রাখতে হলে ফেসবুকের প্রাইভেসি এবং সেটিংস ঠিকমতো রাখার পাশাপাশি সতর্কতামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। অবশ্যই ফেসবুকের নীতিমালা মেনে ফেসবুক ব্রাউজ করবেন।