হাদীসে জিবরীল নামে প্রসিদ্ধ হাদীস। তিনি যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বলেন,
যে সকল ভিত্তির ওপর ঈমান প্রতিষ্ঠিত তার সংখ্যা মোট ছয়টি বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে,
“ঈমান হলো, আল্লাহর তা‘আলার ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবী-রসূলগণ, আখিরাতের দিনের ওপর ঈমান আনয়ন এবং ঈমান আনয়ন করা তাকদীরের ওপর, যার ভালো-মন্দ আল্লাহ তা‘আলার হতেই নির্ধারিত হয়ে আছে তার ওপর”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯)
প্রমাণ:
কিতাবসমূহের ওপর ঈমান:
দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তার মাখলুকের হিদায়াতের জন্য রহমতস্বরূপ তার রাসূলদের ওপর যে সব কিতাব নাযিল করেছেন সে সব কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস করা।কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য এমন সব কিতাব, যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং যা আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকূলের প্রতি রহমত ও পরকালে তাদের জন্য নাজাত ও কল্যাণস্বরূপ জিবরীলের মাধ্যমে রাসূলদের ওপর অবতীর্ণ করেছেন।
কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনার অর্থ:
১। এমন বিশ্বাস পোষণ করা যে, সকল কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আলোকবর্তিকা, হিদায়াতের আকর হিসেবে, সত্য ধর্ম নিয়ে।
২। বিশ্বাস করা যে এ হলো আল্লাহর কালাম বা কথা। কোনো সৃষ্টির কালাম নয়। জিবরীল আল্লাহর নিকট থেকে শ্রবণ করেছেন আর রাসূল শ্রবণ করেছেন জিবরীল থেকে।
৩। বিশ্বাস করা যে, সকল কিতাবে বর্ণিত যাবতীয় বিধি-বিধান ঐ জাতির জন্য অবশ্যই পালনীয় ছিল, যাদের ওপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে।
৪। বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর সকল কিতাব একটি অপরটিকে সত্যায়ন করে। পরস্পর কোনো বিরোধ নেই। তবে বিধি বিধানের ক্ষেত্রে ভিন্নতা তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ কোনো কারণে হয়ে থাকে, যা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
৫। কিতাবসমূহ হতে যেগুলোর নাম আমারা জানি সেগুলো বিশ্বাস করা।এছাড়া সাধারণভাবে ঐ সকল আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস করা যার নাম আমাদের জানা নেই।
৬। বিশ্বাস করা আসমানী সকল কিতাব এবং তার বিধান রহিত হয়েছে কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের মাধ্যমে। রহিত সে কিতাবগুলোর বিধান অনুসারে আমল কারো জন্য বৈধ নয়; বরং সকলের প্রতি কুরআনের অনুকরণ, অনুসরণ ফরয। এ একমাত্র কিতাব, যার কার্যকারিতা কিয়ামত অবধি অব্যাহত থাকবে। অন্য কোনো কিতাব কুরআনুল কারীমের বিধানকে রহিত করতে পারবে না।
৭। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত অন্যান্য ঐশী গ্রন্থগুলো বাণী-বক্তব্যের সত্যতার প্রতি কুরআনের মতো-ই বিশ্বাস স্থাপন করা।
৮।এ মত পোষণ করা যে পূর্বের সকল কিতাবে পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটেছে। কেননা যে জাতির নিকট কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, রক্ষার দায়িত্বও তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কুরআনুল কারীম যাবতীয় বিকৃতি থেকে সুরক্ষিত। কেননা এর রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ আপন দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিশ্চয় আমরা এ কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই তার সংরক্ষক।
[সুরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনার দাবীসমূহ:
এক- আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
দুই- যে সব আসমানি কিতাবের নাম সম্পর্কে আমরা জানি সে সব নামের প্রতি ঈমান আনা। যেমন, কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাওরাত মুসা আলাইহিস সালাম-এর ওপর অবতীর্ণ।
তিন- কিতাবসমূহের সংবাদগুলি বিশ্বাস করা। যেমন, কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং পূর্বের কিতাবসমূহের অবিকৃত সংবাদসমূহ।
চার- কিতাবসমূহের যেসব বিধান রহিত হয় নি তার হিকমত বা কারণ বুঝি বা না বুঝি তার ওপর আমল করা, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা ও তা মেনে নেওয়া। পূর্বে সকল কিতাব কুরআন দ্বারা রহিত হয়েছে এ কথা বিশ্বাস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর ওপর তদারককারীরূপে”।
[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৮]