সুন্দর হাতের লেখার কদর সবার কাছেই আছে। বিশেষ করে যাদের হাতের লেখা খুব একটা সুন্দর নয়, তারা সারাটা জীবনই আফসোস করেন নিজের হাতের লেখা নিয়ে। অবশ্য যারা আফসোস করেন, তারা নিজেরা হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কখনও চেষ্টা করেননি। কেবল সহপাঠীর সুন্দর লেখা দেখে হিংসায় জ্বলেছেন আর মনে মনে বলেছেন–একদিন আমিও দেখিয়ে দেবো! সেই একদিন হয়তো কারো কারো জীবনে এসেছে। যারা চেষ্টা করেছেন, তারা সত্যিই দেখিয়ে দিতে পেরেছেন। আর যারা চেষ্টা করেননি, তারা আজ অবধি আফসোসই করেন কেবল। অথচ চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। সবচেয়ে খারাপ হাতের লেখাকে সবচেয়ে সুন্দর হাতের লেখায় পরিণত করা কেবল সময়ের ব্যাপার। এজন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর সাধনা। এই যেমন আমার হাতের লেখাটাও ছিল আর দশজনের মতো। কেমন একটা বাঁকা বাঁকা হতো লেখাগুলো। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমার হাতের লেখা ছিল কোনোরকম আর কি! হাতের লেখা সুন্দর করা দরকার, এই ভাবনা থেকেই লেখা সুন্দর করার চেষ্টা শুরু। একপর্যায়ে হাতের লেখা কিছুটা সুন্দর হলো। এই যেমন পরীক্ষার সময় হলের পরীক্ষক পাশে দাঁড়িয়ে থেকে হাতের লেখাটাই দেখতেন দীর্ঘ সময়। আমারও ভাবতে ভালো লাগত বিষয়টি। যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। হাতের লেখা সুন্দর করার বিষয়টি এখানে মুখ্য। সুন্দর হাতের লেখার জন্য পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই একশ’ খাতার ভেতরে যেটার হাতের লেখা সুন্দর, শিক্ষক সেটির দিকে একটু অন্যভাবে নজর দেবেন! তা ছাড়া বন্ধুদের মাঝে সুন্দর হাতের লেখার জন্য সুনামও কুড়ানো যায়। এমনকি বড় ভাইদের প্রেমিকার কাছে চিঠি লিখতেও ডাক পড়ে তার, যার হাতের লেখা সুন্দর! হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কোনো বয়সের প্রয়োজন নেই। অনেকেই বলেন, আমি তো কলেজে পড়ি কিংবা ভার্সিটিতে পড়ি, এখন আর হাতের লেখা সুন্দর করা সম্ভব নয়। কিন্তু ধারণাটি ভুল ছাড়া আর কিছু নয়। হাতের লেখা যেমন অনেক ছোট থাকতে সুন্দর করা যায়, তেমনই বুড়ো বয়সেও সুন্দর করে লেখা যায়। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি। হাতের লেখা সুন্দর করতে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখবে। প্রথমেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন–‘হাতের লেখা সুন্দর করব।’ ইচ্ছা অনুযায়ী এবার নিজেকে সেই কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। এজন্য একটি সুন্দর হাতের লেখা বাছাই করুন। যে লেখা অনুসরণ করে প্রতিদিন আপনাকে অনুশীলন করতে হবে। কাছাকাছি এমন কাউকে খুঁজে বের করুন, যার হাতের লেখা সুন্দর। এরপর তার কাছে একটি পৃষ্ঠা হাতে লিখে নিন। মোটামুটি এক পৃষ্ঠায় বাংলা বর্ণমালার সব অক্ষরই থাকে। আর না থাকলেও সমস্যা নেই। আর কাছে কাউকে না পাওয়া গেলে অন্য কোনোভাবে একটি সুন্দর হাতের লেখা সংগ্রহ করুন। সুন্দর হাতের লেখা তো সংগ্রহ হলো। এবার সেই লেখাটি ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী হাতের লেখা লিখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অক্ষরকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রথম দিকে আস্তে আস্তে লিখতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রয়োজনে যত সময় লাগে লাগুক, কিন্তু অনুসরণ করা লেখাটির মতো হুবহু সুন্দর করে লেখার চেষ্টা করুন। লেখা বাঁকা হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথমে দাগ কাটা (দাগ টানা) খাতায় লিখুন। এতে হাতের লেখাটা সোজা হবে, বাঁকা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্টেশনারিতে দাগ কাটা দিস্তা খাতা কিনতে পাওয়া যায়। লেখার সময় দেখতে হবে, কোনো অক্ষর যেন অন্যটির চেয়ে ছোট-বড় না হয়। প্রতিটি অক্ষর সমান উচ্চতা ও স্পেস নিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কম করে হলেও পাঁচ পৃষ্ঠা লিখুন। একদিন দশ পৃষ্ঠা লিখে অন্যদিন লিখবেন না, এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিতভাবে লিখতে হবে। যত বেশি লেখা যায়। তবে পাঁচ পৃষ্ঠার কম যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা শুরুর পর সব ধরনের লেখাকে সে অনুযায়ী (নতুন পদ্ধতি) লিখতে হবে। ক্লাসের পড়া হোক, ক্লাসের বাইরে খেলতে গিয়ে ক্রিকেট স্কোর হোক আর বাজারের লিস্ট-ই হোক, লিখতে হবে অনুসরণ করা লেখাটির মতো করেই। পুরাতন পদ্ধতির লেখার অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। একই ধরনের কলম দিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। জেল পেন (জেল কলম) পরিহার করে বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করুন। বাজারে এখন পাঁচ টাকা মূল্যের অনেক ভালো কলম পাওয়া যায়। হাতের লেখা সুন্দর না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ধৈর্য্য হারালে চলবে না। যতদিন হাতের লেখা হুবহু সুন্দর না হচ্ছে, ততদিন চেষ্টা চালাতে হবে। তবে দুই থেকে তিন মাস নিয়মিত লিখলে হাতের লেখা সুন্দর হতে বাধ্য। হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার পর লেখার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আগে তো আস্তে আস্তে সুন্দর করে লিখতেন। এবার তার থেকে কম সময়ে লেখাটি শেষ করার চেষ্টা করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, দ্রুত লিখতে গিয়ে যেন লেখার সৌন্দর্য কমে না যায়। এভাবে কিছুদিন চেষ্টা করলে দেখা যাবে, হাতের লেখা সুন্দরও হচ্ছে এবং অনেক দ্রুততার সঙ্গেই লেখা সম্ভব হচ্ছে। চেষ্টা করলে সম্ভব নয়, এমন কাজ খুব কমই আছে পৃথিবীতে। আর হাতের লেখা তো চেষ্টা আর সময়ের ব্যাপার। সুন্দর হাতের লেখা তিন আঙুলের হস্তশিল্পও বটে। এই কারিশমা আয়ত্ব করতে তবে আর দেরি কেন? এখনই বসে পড়ুন কাগজ-কলম হাতে। আর তাক লাগিয়ে দিন আপনার পরিচিতজনদের।