শুধু পৃথিবী নয় চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র—সবই গোল। এতই স্বাভাবিক ব্যাপার যে এ নিয়ে মনে প্রশ্নও জাগে না। প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকেরা বলতেন, মহাজাগতিক বস্তুমাত্রই গোলাকার, আর তাই গোলাকার মাত্রই উৎকৃষ্ট। সুতরাং পৃথিবী গোল না হয়ে যায় কোথায়, কারণ পৃথিবী যে উৎকৃষ্ট বস্তু তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা অবশ্য এ ধরনের দার্শনিক ব্যাখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব না। দেখব বিজ্ঞান কী বলে। পৃথিবী যে গোলাকার তার মূল কারণ হলো মহাকর্ষ বল। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী, যেকোনো বস্তু অপর বস্তুকে আকর্ষণ করে, এবং এই আকর্ষণ বল দুই বস্তুর পদার্থের পরিমাণের গুণফল ও তাদের ভরকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্বের বর্গের বিপরীতের সমানুপাতিক। সুতরাং এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে মহাশূন্যে যেসব বস্তুকণা কাছাকাছি ছিল, সেগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে একীভূত হয়। আবার তাদের ওপর বাইরের কিছু শক্তির প্রভাবে একীভূত বস্তুপিণ্ডগুলো ঘুরতে শুরু করে। বিশেষত, মহাশূন্যে কিছু দূরত্বে অবস্থানরত বস্তুপিণ্ডগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ- বিকর্ষণ কাজ করে। এভাবে মহাশূন্যে ঘূর্ণায়মান গোলাকার বস্তুর উদ্ভব ঘটে। এগুলো ঠিক টেনিস বলের মতো পুরোপুরি গোল নয়। নিজ অক্ষরেখার চারপাশে ঘুরে বলে এর মাঝখানের বিষুবরেখা বরাবর অংশ কিছুটা ফুলে ওঠে ও দুই প্রান্তের অংশ কিছুটা চাপা থাকে। পৃথিবীও যে রকম। এর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কিছুটা চাপা, মাঝখানটা ফোলা, অনেকটা কমলালেবুর মতো। দুই মেরু কতটা চাপা হবে তা নির্ভর করে বস্তুর ভর ও সেটা কত জোরে ঘুরছে তার ওপর। বস্তুত, মহাকাশের গ্রহ- নক্ষত্রগুলোতে পদার্থের পরিমাণ এত বেশি আর সেগুলো এত বেশি জোরে ঘুরে যে অনেক সময় তার মাঝখানটা খুব বেশি ফুলে উঠে তার কিছু অংশ মূল বস্তুপিণ্ড থেকে ছিটকে আলাদা হয়ে ঘুরতে থাকে। এভাবেই চাঁদের জন্ম হয়েছে।