খলিফা হযরত আবু বকর রা.
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর রা. উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ও সম্মানিত। হজরত মুহাম্মাদ সা. এর মৃত্যুর পর তিনি ইসলামি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন।
তিনি রাসুল সা. -এর জীবদ্দশাতেও তাঁর সাথে বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ এবং উহুদের যুদ্ধে আবু বাকর রা. অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও তিনি অংশ নিয়েছিলেন বনু নাদির অভিযানে, খন্দকের যুদ্ধে, বনু কুরাইজা অভিযানে।
খন্দকের যুদ্ধে তিনি একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন এবং বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধিতে উপস্থিত ছিলেন, অংশ নিয়েছিলেন খায়বারের যুদ্ধে এবং মক্কা বিজয়েও। হুনাইনের যুদ্ধ এবং তাইফ অবরোধেও অংশ নিয়েছিলেন।
রাসুল সা. এর নির্দেশে আবু বকর রা. এর নেতৃত্বে নজদে একটি অভিযান সংঘটিত হয় যা ‘আবু বাকর সিদ্দিকের অভিযান’ নামে পরিচিত।
রাসুল সা. এর ইন্তেকালের পর তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হন। তার শাসনামলে রিদ্দার যুদ্ধ, বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেন।
খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে সম্ভবত সবচাইতে ক্যারিশম্যাটিক রাষ্ট্রনায়ক ও খলিফা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তিনি একই সাথে বহু গুণের অধিকারী ছিলেন এবং ছিলেন একজন বীরযোদ্ধা।
রাসুুল সা. এর শাসনামলে তিনি বদর, উহুদ, খন্দক, খায়বার, হুনাইনের যুদ্ধ, বনু নাদির ও বনু কুরাইজার অভিযান এবং মক্কা বিজয়ে অংশ নেন। খলিফা আবু বাকর রা. এর শাসনামলে বিভিন্ন অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আবু বাকর রা. এর ইন্তেকালের পর তিনি খলিফা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। তিনি তার বিশাল সাম্রাজ্যকে সুষ্ঠু শৃঙ্খলে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আর্মেনিয়া, মিশর, উত্তর আফ্রিকা, ইরাক, ইস্পাহান, তাবারিস্তান, ফারস, কিরমান, মাকরান, সিস্তান, আজারবাইজান, খোরাসানসহ বহু অঞ্চল জয় করেন।
তার অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা তাকে এনে দেয়া অনন্য খ্যাতি, যাকে অর্ধ জাহানের খলিফা বলেও জানা হয়ে থাকে।
খলিফা উসমান ইবনে আফফান রা.
খলিফা ওমর রা. এর ইন্তেকালের পর খলিফা উসমান রা. শাসনভার গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে বহু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
তার শাসনামলে মিশর, উত্তর আফ্রিকা, আইবেরিয়ান পেনিনসুলা, নুবিয়া, ভূমধ্যসাগরের দ্বীপপুঞ্জ, সিরিয়া, আনাতোলিয়া, ফারস, সিস্তান, তাবারিস্তান, খোরাসান, ট্রান্স-অক্সানিয়া, মাকরান, বালুচিস্তান, সিন্ধসহ বহু অঞ্চলের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এসব যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন।
খলিফা আলী ইবনে আবু তালিব রা.
ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী রা. একজন মহাবীর হিসেবে সপরিচিত। রাসুল সা. তাকে খাইবার যুদ্ধে কামূস দুর্গ জয় করার কারণে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ উপাধী দিয়েছিলেন।
বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য নবীজি সা. এর ‘যুলফিকার’ নামের তরবারিটি হযরত আলী রা. কে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধের সাক্ষী। বহু যুদ্ধে পালন করেছেন সেনাপতির দায়িত্ব।
যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা.
জুবাইর ইবনুল আওয়ামের মূল নাম জুবাইর এবং ডাক নাম আবু আবদিল্লাহ। তার উপাধি ছিল হাওয়ারিয়্যু রাসূলিল্লাহ। হাদীসের ভাষ্যমতে রাসুল সা. যে ১০ জন সাহাবীকে জীবিত অবস্থায়ই বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। অর্থাৎ তিনি আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত।
তিনি বদর, উহুদ, খন্দক, খায়বার, মক্কা বিজয়সহ বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। রিদ্দার যুদ্ধ, মিশর বিজয়, ইয়ারমুকের যুদ্ধসহ বহু যুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি রাশিদুন খিলাফতের রাজনৈতিক অঙ্গনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রা.
তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আটজন ব্যক্তির অন্যতম। মুহাম্মদ সা. এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবি। তিনি একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। উহুদের যুদ্ধ এবং জঙ্গে জামালে অংশ নেয়ার জন্য সুপরিচিত।
রিদ্দার যুদ্ধে মদিনা সুরক্ষার জন্য গঠিত বাহিনীর এক তৃতীয়াংশের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.
তিনি বদর, উহুদসহ বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধের সাক্ষী। তিনি একজন বীর ব্যক্তি ছিলেন। রাশিদুন খিলাফাতের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি খিলাফাহ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রা.
তিনি বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, একজন যোদ্ধা সাহাবী ছিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি অভিযান ‘আবু উবাইদাহ’র অভিযান’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.
তিনি ইসলামের ইতিহাসের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনা নায়ক হিসেবে পরিচিত। তার বীরত্বের কারণে তিনি সাইফুল্লাহ উপাধী পেয়েছিলেন। তিনি বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। অন্যান্য সাহাবাদের চাইতে তিনি সবচেয়ে বেশি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব রা.
ইসলামের ইতিহাসে তিনি মহাবীর হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকেন। নবী মুহাম্মাদ সা. তাকে সায়্যিদুশ শুহাদা (শহীদদের নেতা) উপাধি দিয়েছিলেন। বহু যুদ্ধে তিনি সেনানায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।