কোনো দম্পতি যদি এক বছর চেষ্টা করার পরও সন্তান লাভে ব্যর্থ হন, তা হলে তাদের বন্ধ্যত্ব সমস্যা আছে বলে ধারণা করা হয়। সন্তান ধারণে ব্যর্থতার জন্য আমাদের সমাজে সাধারণত মহিলাকেই বেশি দায়ী করা হলেও বন্ধ্যত্ব সমস্যার জন্য ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের সমস্যা থাকে। তবে দিন দিন পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যা বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। আর পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যার জন্য প্রধান কারণ হচ্ছে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম, নির্ধারিত মাত্রায় শুক্রাণুর নড়াচড়া না থাকা, শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটি ইত্যাদি। কোনো দম্পতির বন্ধ্যত্ব সমস্যার কারণ চিহ্নিত করার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই পরীক্ষার দরকার হয়। পুরুষের যে পরীক্ষাটি করা হয় তাকে সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষা বলা হয়। পরীক্ষাটি করতে কম খরচ ও সহজ হওয়ায় প্রথমেই চিকিৎসক এই পরীক্ষাটি করিয়ে থাকেন।
কীভাবে করতে হয়?
তিন থেকে পাঁচ দিন মেলামেশা বন্ধ রাখা বীর্য পরীক্ষার পূর্বশর্ত। যতেœর সাথে পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করতে হয় বলে ভালো ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পরীক্ষাটি করা উচিত।
বীর্য পরীক্ষার রিপোর্টে কি কি দেখা হয়?
শুক্রাণুর সংখ্যা : প্রতি মিলি বীর্যে কমপক্ষে ১৫ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকতে হবে। এর কম হলে তাকে Oligospermia বলে।
শুক্রাণুর নড়াচড়ার গতি : কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শুক্রাণুর নড়াচড়ার গতি থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শুক্রাণুর অতি দ্রুত গতিতে নড়াচড়া প্রয়োজন। শুক্রাণুর নড়াচড়া কম হলে তাকে Asthenozoospermia বলে।
শুক্রাণুর গঠন : কমপক্ষে ৪০ শতাংশ শুক্রাণু গঠনগত দিক দিয়ে ঠিক থাকতে হবে। শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটিকে Teratozoospermia বলা হয়।
এ ছাড়াও বীর্যের পরিমাণ, বীর্যে ইনফেকশন ইত্যাদি দেখা হয়। আর বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান সব কিছু ঠিক থাকলে তাকে Normozoospermia
বলা হয়।
কি কি কারণে এ সমস্যা হয়?
আমাদের অ-কোষ বা টেসটিস থেকে শুক্রাণু তৈরি হয়। সেখানে রক্ত চলাচলের সমস্যা বা ইনফেকশন থাকলে শুক্রাণুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। তা ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের কারণে শুক্রাণুর সমস্যার সাথে সাথে পুরুষের শারীরিক অক্ষমতাও হতে পারে। অন্যদিকে খাদ্যে ভেজাল অর্থাৎ ফরমালিন, সিসা, বিষাক্ত রং পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যাকে বাড়ায়। অধিক ওজনের কারণে পুরুষের শরীরে হরমোনের তারতম্য হলে বন্ধ্যত্ব সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া অনেকক্ষণ সাইকেল চালানো, টাইট জিন্স বা আঁটসাট পোশাক পরা, কিছু কিছু ওষুধ, এমনকি অনেকক্ষণ মোবাইলে কথা বলার কারণেও পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যাগত ও গুণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারণ নির্ণয়ে কি কি পরীক্ষা করা হয়?
প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রক্তের সিবিসি, রক্তের সুগার, কোলেস্টেরল, ভিডিআরএল, থায়রয়েড ও প্রোল্যাকটিন হরমোন, অ-কোস বা টেসটিসের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি করা হয়ে থাকে।
তা হলে চিকিৎসা কি?
চিকিৎসার প্রথম শর্তই হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বন্ধ্যত্ব সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করা। কারণ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, পোশাক-আশাক, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যা দূর করা সম্ভব। পুরুষের সমস্যা দূর না করে শুধু স্ত্রীকে ওষুধ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। মনে রাখতে হবেÑ বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা, শুক্রাণুর নড়াচড়ার গতি বা গঠনগত ত্রুটি ইত্যাদির যে কোনোটির তারতম্য ঘটলে পুরুষের বন্ধ্যত্ব সমস্যা হতে পারে। উন্নত বিশ্বে বিয়ের আগে বা বিবাহিত জীবনে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের আগে পুরুষদের বীর্য পরীক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়