পুরুষের শুক্রণু বা বীর্য হল বীর্যস্থলনের সময পুংলিঙ্গের ভিতর থেকে প্রবাহিত মুত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে বাহিরে নির্গত হওয়া অসচ্ছ, সাদা রঙের শাররীক তরল পর্দাথ। এর অধিকাংশই যৌন অনুভুতির সময় পুরুষ প্রজননতন্ত্রের ক্ষরন/নিঃসরন হতে সৃষ্ট। এর ৬৫% বীর্য-তরল ধাতুগত গুটিকা দ্বারা উৎপাদিত, ৩০% থেকে ৩৫% মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থিবিশেষ থেকে সরবরাহকৃত এবং ৫% শুক্রাশয় ও অন্ডকোষের বঢ়রফরফুসবং নামক অংশ হতে।
বীর্যে যেসব রাসায়নিক পর্দাথ থাকে :
ফ্রি এ্যামিনো এসিড, ফ্রাকটোস, সাইট্রিক এসিড, এনজাইম, পসপোহ্রিলকোলিন, প্রোষ্টাগ্লেন্ডিন, পটাশিয়াম এবং জিংক। প্রতি বীর্যস্থলনে উৎপাদিত বীর্যের পরিমান ২ থেকে ৫ মিঃলিঃ। বীর্যের পরিমান এবং পুর্বের বীর্যপাতের সময় ব্যবধানের হিসাব অনুযায়ী বীর্যের ঘনত্বের তারতম্য এবং প্রতিবার বীর্যের সাথে শুক্রানুর সংখ্যা ৪ কোটি থেকে ৬০ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। বীর্যে শতকরা ২০ ভাগ শুক্রানু জীবিত না হলে সে পরুষ বন্ধা অর্থাৎ সন্তান জন্মদানে অক্ষম।
সাধারন বীর্য দেখতে যেমন হয় :
বীর্য সাধারনত দেখতে মেঘলা সাদা অথবা কিছুটা ধুসর তরল। বীর্যস্থলেনের সাথে সাথে এটি দেখতে গাঢ় এবং জেলীর মত ইষৎ শক্ত হয়। তবে পরবর্তি ৩০ মিনিটের মধ্যে বীর্য তরল এবং পানির মত পাতলা হয়ে যায়। বীর্যের পুরু এবং তরলীকরণ প্রজনন তথা সন্তান জন্ম দেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়।
গন্ধ ও স্বাদ :
বীর্যে ক্লোরিন এর মত একপ্রকার স্বাভাবিক গন্ধ থাকে। অধিক মাত্রায় ফলশর্করা থাকার কারনে এটি কিছুটা মিষ্টি স্বাদযুক্ত। তবে ব্যাক্তিবেধে বীর্যের স্বাদের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি খাদ্যাভ্যাসের পার্থক্য থেকে বীর্যের স্বাদের পরিবর্তন হতে পারে।
অস্বাভাবিক বীর্য :
বীর্যস্থলনে বীর্যের পরিমান কম হবার কারন হতে পারে ধাতুগত গুটিকা অথবা বীর্য নিঃসরন নালীর প্রতিবন্ধকতা।
অল্প পরিমান বীর্যরস নির্গত হওয়া হয়তো বিপরিতগামী বীর্যস্থলনের কারনেও হতে পারে, যদি বীর্য নিঃসরনের সময় বীর্যের প্রবাহ মুত্রনালী দিয়ে বাহিরের দিকে না হয়ে উল্টোপথে মুত্রথলির দিকে প্রবাহিত হয় সে অবস্থায় এমনটি হতে পারে। বীর্যের এই বিপরিতমুখীতা মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থির সংক্রমন, পুর্বের কোন মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থিও অস্ত্রপ্রচার, ডায়াবেটিস এবং অনেক ঔষধের পাশ্বাপ্রতিক্রিয়ায়ও হতে পারে।
অতিরিক্ত গাঢ় এবং পিন্ডাকার বীর্য :
আপনার শরীরে পানিশুন্যতার কারনে বীর্য হয়তো অস্বাভাবিক গাঢ় হতে পারে, তবে এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা। গাঢ় / পিন্ডাকার বীর্যের একটু ভয়ানক কারন হল শুক্রাশয় এর নিন্মমুখী স্তর। যদি আপনার বীর্য একনাগাড়ে দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ রকম আস্বাভাবিক দেখা যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরার্মশ নেয়া উচিত।
লাল অথবা বাদামী রঙের বীর্য :
আপনার যদি বীর্য লাল অথবা বাদামী রঙের দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মূত্রস্থলীর গ্রীবা সংলগ্ন গ্রন্থি তে হয়তো বিস্ফোরিত রক্তপ্রবাহ হচ্ছে। এটি সাধারন বীর্যস্থলনের সময়ও দেখা যেতে পারে। এবং সাধারনত এক কিংবা দুই দিনে বীর্য তার স্বাভাবিক রঙে ফিরে আসতে পারে। যদি বীর্যের এই রঙ পরিবর্তন একটানা কয়েকদিন থেকে দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিন। অবিরাম বীর্যের মধ্যে রক্তের উপস্থিতি হয়তো কোন প্রকার সংক্রমন, মানসিক আঘাত জনিত কারনে, এবং বিরল ক্ষেত্রে ক্যন্সারের কারনে দেখা যেতে পারে।
হলুদ কিংবা সবুজ রঙের বীর্য :
বীর্য সাধারনত ধুসর সাদা কিংবা ইষৎ হলুদ বনর্চ্ছটা থাকতে পারে। হলুদ কিংবা সবুজ রঙের বীর্য রোগ সংক্রমনতা নির্দেশ করে, হতে পারে এটি যৌনবাহিত রোগ “গনেরিয়া’র” লক্ষন। এক্ষেত্রে যৌন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উচিত। যদি বীর্যের এই বিবর্নতা গনেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে তাহলে উপযুক্ত এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধে চিকিৎসা সম্ভব।