বাকি মাত্র সাত মাস। এ বছরের ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র তার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। আসন্ন এই নির্বাচন নিয়ে দেশটির রাজনীতির মাঠ এখন রীতিমতো গরম।
ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দল থেকে কোন দুই প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ ও জল্পনা-কল্পনা। প্রার্থীরাও রাত-দিন এক করে চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। সম্ভাব্য প্রত্যেক প্রার্থী প্রকাশ করেছেন তাদের প্রাথমিক নির্বাচনী ইশতেহার। এর মাধ্যমে কে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবেন, ক্ষমতায় গেলে কী করবেন, কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন- তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
প্রত্যেকের ইশতেহারে রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। পুঁজিবাদের তীর্থস্থান মার্কিন মুল্লুকের নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রার্থীরা দেশের জন্য বৈচিত্র্যময় কিছু করতে চাইবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে মার্কিন ধনকুবের মাইক্রোসফটের কর্ণধার বিল গেটস মনে করেন, এই বৈচিত্র্যে মধ্যে সব প্রার্থীকে একটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে একমত হয়ে তার ওপর জোর দিতে হবে। আর সেটা হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিস্তারে অধিক মনোযোগী হওয়া।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। আমরা প্রায় দুই শতাব্দী পৃথিবীকে উদ্ভাবনী বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। টমাস আলভা এডিসন, মার্গারেট নাইট, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের মতো বিখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানীদের এক একটি আবিষ্কার গোটা বিশ্বকে এক একটি শতাব্দী সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ভাবন ও আবিষ্কার খাতে সরকারের বিনিয়োগ শুধু মার্কিন জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয় না। তা গোটা মানব জাতির জন্য ব্যয় হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু তার নাগরিকদের নয় গোটা বিশ্ববাসীকে সেবা করে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, নিজ দেশে মার্কিন সরকারের উদ্ভাবনী খাতে বিনিয়োগ কীভাবে বিশ্ববাসীর সেবা করে? এ প্রশ্নেরও বিশ্লেষণাত্মক ব্যাখ্যা বিল গেটস তার সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে কম্পিউটার, স্বাস্থ্যসেবা, বিকল্প জ্বালানি, মোটরগাড়ি শিল্প, বিমান শিল্প, ইলেট্রিক ও ইলেকট্রনিকস এবং ওষুধ শিল্পে মার্কিন সরকার ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করে আসছে। ফল মিলেছে হাতে হাতেই। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে এসব পণ্য সারা বিশ্বেই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিনিয়োগ ছাড়া তা কখনোই এতটা সহজলভ্য হতো না।
বিল গেটস রয়টর্সকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ষাটের দশকে কম্পিউটার যখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে তখন যুক্তারাষ্ট্র সরকার কম্পিউটার শিল্পে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ শুরু করে। ব্যাপক এ বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার শিল্পের বিকাশ ঘটে, আবিষ্কৃত হয় মাইক্রোচিপ, গঠিত হয় মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, ওই সময়ে যদি সরকার কম্পিউটার শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতা না করত, তাহলে হয়তো মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানি হতো না। আর পৃথিবীতে কম্পিউটারও এত সহজলভ্য হতো না।
কম্পিউটারের পরই তিনি তার সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্য খাতে মার্কিন সরকারের বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিনিয়োগের ফলে যুক্তারাষ্ট্রে বিখ্যাত সব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বায়োটেক কোম্পানি ও গবেষণাগার গড়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ দেশে যেমন সেবা দিচ্ছে পাশাপাশি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ে সারা বিশ্বের সঙ্গে কাজ করছে।
বিল গেটসের মতে, গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে ক্যানসার, ইবোলা, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, জিকা ও পোলিওর মতো প্রাণঘাতী রোগ নিরাময়ে যে গবেষণা হয়েছে, তার বেশির ভাগ কৃতিত্বের দাবিদার মার্কিন গবেষণাগারগুলো, যা প্রকারান্তে মার্কিন সরকারেরই সফলতা। তেল এবং কয়লার বাইরে আজকের দিনে যে বিকল্প জ্বালানি অর্থাৎ সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুবিদ্যুতের কথা ভাবা হচ্ছে তা প্রথম দিকে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে বিকাশ লাভ করেছিল। তিনি বলেন, ১৯৭৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মার্কিন সরকার বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবন গবেষণায় প্রায় ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিকল্প জ্বালানিতে বিনিয়োগ সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে তিনি বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার ভিশন অনুযায়ী তার মিশন পরিচালনা করবেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন- যিনিই নির্বাচিত হবেন তিনি অবশ্যই উদ্ভাবনী খাতে অন্যান্য প্রেসিডেন্টের মতো তার বিশেষ নজর রাখবেন। কারণ উদ্ভাবনী শক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার গোপন অস্ত্র।