901 বার প্রদর্শিত
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন Level 5

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন Level 5
দাঁতের ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয়। যার এই ব্যথা হয়নি তিনি বুঝবেন না এর কষ্ট কতটা হতে পারে। এই কষ্ট থেকে মুক্তির পথ কী?

প্রশ্নঃ বলা হয়, সন্তান প্রসবের যে বেদনা এর পরে তীব্রতর যে ব্যথা সেটি হচ্ছে দাঁতের ব্যথা। কেউ কেউ আবার একেও এক নম্বর ব্যথা বলে থাকেন। দাঁতের ব্যথা এত তীব্র হওয়ার কারণ কী? এবং এই ব্যথা হয় কেন?

উত্তরঃ আমাদের শরীরের সব ব্যথাই মূলত স্নায়ু বা নার্ভ থেকে আসে। দাঁতের নার্ভটি সম্পূর্ণ একটি শক্ত আবরণের মধ্যে থাকে। যার ফলে এর ভেতরে যদি কোনো প্রদাহ হয় তাহলে ভেতরে চাপসহ প্রদাহের পরিমাণটি এত বেড়ে যায় যে সেটা না বেরিয়ে আসা পর্যন্ত ব্যথা একদম অসহনীয় পর্যায় চলে যায়।

খুব ছোট্ট জায়গার মধ্যে ব্যথাটি হয়। ফুলতে গিয়ে ফুলতে পারছে না, আবদ্ধ থাকছে। তাই ব্যথাটি বেশি হয়।

প্রশ্নঃ ব্যথা হয় কেন?

উত্তরঃ সাধারণত দুটো কারণে দাঁতের ব্যথা হয়। একটি হচ্ছে দাঁতের নিজস্ব ব্যথা। নিজস্ব ব্যথা বলতে দাঁতের ভেতরে যে সরাসরি নার্ভ আছে। দাঁতের একদম ভেতরের স্তরটি। ওই স্তরে যদি কোনো কারণে প্রদাহ বা সংক্রমণ শুরু হয় তাহলে ওই দাঁতে ব্যথা করতে পারে। আরেকটি ব্যথা হচ্ছে দাঁতের ধারক কলা, ধারকলা বলতে বোঝায় দাঁত যে স্থানে শক্তভাবে আটকে থাকে তার চারপাশের যে গঠন সেটিকে। সেখানে যদি কোনো প্রদাহ হয় তাহলে দাঁতে ব্যথা হতে পারে।

প্রশ্নঃ দাঁত অথবা চোয়ালের কোনো সমস্যা নেই, তবু অন্য জায়গায় ব্যথা কি দাঁতে আসতে পারে?

উত্তর : হ্যাঁ, আসতে পারে। যেমন, খুব প্রচলিত একটি বিষয় হলো হার্টের ব্যথা। হার্টের ব্যথা ছড়িয়ে গিয়ে বুকের ওপরে হাড়ে আসতে পারে, চোয়ালে আসতে পারে। আসলে মনে হবে দাঁতের ব্যথা হচ্ছে। অথচ ব্যথা হয় না। যেটা আসলে তৈরি হচ্ছে হার্ট থেকে। এ ছাড়া মাথার সাইনো সাইটিসের সমস্যা থেকে এটা হতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে হতে পারে। কানে ব্যথা থেকে দাঁতে ব্যথা আসতে পারে।

প্রশ্নঃ কী করে নির্ধারণ করেন দাঁতের কোন কারণে ব্যথা হচ্ছে? এবং ব্যথাটি কোন পর্যায়ে আছে?

উত্তর : ইতিহাস এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই আমরা বুঝতে পারি। কামড় দিলে ব্যথা হচ্ছে, না কি এমনি এমনি ব্যথা করছে। ব্যথাটি কখন বাড়ে। রোগী শুলে ব্যথার তীব্রতা বাড়ে কি না। এ ধরনের কিছু ইতিহাস প্রথমে আমরা নিয়ে নিই। এরপর তো কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা রয়েছে। রোগীকে বসিয়ে দেখি দাঁতের কোথায় ব্যথাটি আছে। ওইখানে আমাদের কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। এভাবে আমরা বুঝতে পারি কীভাবে ব্যথা হচ্ছে এবং কোন পর্যায়ে ব্যথা হচ্ছে।

প্রশ্নঃ দাঁতের ব্যথায় অনেক সময় ওষুধ খাওয়ার পরও ব্যথা কেন কমে না? এবং অনেকেই বলে চিকিৎসক ওষুধ দিয়েছে কিন্তু ব্যথা তো কমছে না। এটি কেন?

উত্তর : দাঁতের পুরো সমস্যাটি রয়েছে একটি আবদ্ধ এলাকার মধ্যে। ওষুধ যে রক্তে মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাবে, সেটা হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে না। তা ছাড়া দাঁতের মধ্যে কিছু কোষ রয়েছে যেগুলো ক্লিনিক্যালই মারা গেলেও সেনসেশন তৈরি করে। শরীরের অন্য কোথাও এই ধরনের কোষ পাওয়া যায় না। শুধু দাঁতের মধ্যে আছে। তাই অনেক সময় শুধু ওষুধ দিয়ে দাঁতের ব্যথা কমানো যায় না।

প্রশ্নঃ চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপনারা কী করেন? একসময় দাঁতে ব্যথা হলে ফেলে দেওয়া হতো। এখন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে দাঁতকে আর ফেলতে হয় না। সেগুলো কী পদ্ধতি?

উত্তর : আমাদের দেশের দাঁতের চিকিৎসা নিঃসন্দেহে অনেক আধুনিক। আমরা এখন গর্ব করেই বলতে পারি। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশে অনেক আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে দাঁতের ক্ষেত্রে। আর দাঁত ফেলে দেওয়ার বিষয়টা এখন প্রায় হারিয়েই গেছে বলা যায়। এখন যেকোনো পর্যায়ে রোগী যদি ইচ্ছা করে দাঁত টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেটাকে বলা হয় রুট ক্যানেল চিকিৎসা।

প্রশ্নঃ আমরা জানি, রুট ক্যানেল একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ চিকিৎসা। একটি মানুষের অনেকগুলো দাঁত থাকে। দাঁত ফেলে দিলে ক্ষতি কী? একজন মানুষ কেন এই সময়সাপেক্ষ ব্যয়বহুল চিকিৎসায় যাবেন?

উত্তর : অনেকেই জানে, দাঁত না থাকলে কী কী ক্ষতি হয়। সাধারণ মানুষ জানে দাঁত ফেলে দিলে আমাদের খাবারের অসুবিধা হয়। মুখ ভেঙে যায়। চেহারা নষ্ট হয়ে যায়। কথা বলতে কষ্ট হয় বা কথা স্পষ্ট করে বলা যায় না। আর গবেষকরা এখন বলছেন, দাঁত না থাকলে আমাদের মধ্যে ডিমেনসিয়া তৈরি হয়। এই রোগে মানুষের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। তার কাজ করার প্রবণতা কমে যায়। গবেষকরা এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা যখন খাবার ভালোভাবে চিবাই, তখন মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো হয়। দাঁত না থাকলে চিবানোর অভাবে মস্তিষ্কের রক্তের সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না বলেই নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার চিবিয়ে না খেলে খাদ্য উপাদানের সবকিছুও কাজে আসে না। ফলে পুষ্টিরও নানা রকম সমস্যা হতে পারে।

প্রশ্নঃ রোগী দাঁত ফেলে না দিতে চাইলে আপনারা রুট ক্যানেল করেন। রুট ক্যানেল বিষয়টি কী?

উত্তর : প্রথমেই দাঁতের একটা এক্সরে করে নিই। এক্সরে করে দাঁতের অবস্থা বুঝি। সংক্রমণটি কোন পর্যায়ে আছে দেখি। রুট ক্যানেলের অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এরপরও আমরা বলি ম্যানুয়াল চিকিৎসা ভালো। আমরা একটি হাতযন্ত্রের মাধ্যমে দাঁত মেশিন দিয়ে ছিদ্র করে ভেতরে যেই সংক্রমিত মজ্জাটি রয়েছে সেটাকে বের করে ফেলে জীবাণুমুক্ত অবস্থা তৈরি করি দাঁতটির মধ্যে। এরপর একে সিল করে দিই। সিল করে দেওয়ার পর দাঁতটি ব্যথামুক্ত হয়ে যায়। আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

প্রশ্নঃ এই ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন দাঁতের রুট ক্যানেল করলে তো মজ্জা, নার্ভ সবকিছু তুলে নেওয়া হলো, ফলে দাঁতটি তো মরে গেল। এই দাঁত দিয়ে চিবিয়ে কি খাবারে স্বাদ পাওয়া যাবে?

উত্তর : অবশ্যই পাবে। পাবে এ কারণেই যে দাঁতের ভেতরের নার্ভটি বেরিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু দাঁতের নার্ভটা যে হাড়ের সঙ্গে আটকে থাকে, যাকে ধারক কলা বলি, সেটা ঠিকই আছে। তাই দাঁত কামড় দিয়ে খেয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায় সেটা রোগী ঠিকই পাবে। আর এরপরও দাঁতের যে ভাঙা অংশটি কেটে ফেলি, সেটাকে আমরা আবার প্রতিস্থাপন করে দিচ্ছি, এর ওপর একটি কৃত্রিম মুকুট বা ক্রাউন পরিয়ে।

প্রশ্নঃ অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো রুট ক্যানেল করার পর সেই দাঁতটি ভেঙে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। তাই অনেকে মনে করেন দাঁতের রুট ক্যানেল করে আসলে কোনো লাভ হয় না। বিষয়টি আসলে কী?

উত্তর : হ্যাঁ, অনেকের ক্ষেত্রেই এই ধারণাটি রয়েছে। অনেক রোগীরা এসে বলেন, আপনি যে রুট ক্যানেল করতে বলছেন এটা তো টিকবে না বেশি দিন। এর জন্য অনেক ক্ষেত্রে আসলে রোগীরা বলা যায়। কারণ রুট ক্যানেল করলেই আমরা রোগীকে বলে দিই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যাপ করে নিতে হবে। কারণ একটি দাঁতকে রুট ক্যানেল করা হলে দাঁতের নিজস্ব পানি এবং নমনীয়তার পরিমাণ কমে যায়। ফলে দাঁতটি একটু ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই শক্ত কিছু কামড় লাগলে ভেঙে যেতে পারে। এই জন্য রুট ক্যানেল করা দাঁতকে আমরা বলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কৃত্রিম একটি ক্যাপ যেন লাগিয়ে নেন। এতে দাঁত ভাঙার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই এটাকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। নয়তো দেখা যায় ওই দাঁতে হয়তো ব্যথা না করার জন্য রোগী ইচ্ছে মতো খাচ্ছে। ফলে দেখা যায় শক্ত কিছু কামড় লাগলে, দাঁতটি তখন ভেঙে যায়। রোগীরা তখন এলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।

প্রশ্নঃ সাধারণ দাঁতে যে সংক্রমণ বা সমস্যা হতে পারে। রুট ক্যানেল করা দাঁতেও কি সেই সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : সমস্যা হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের জায়গাগুলো ঢিলা হয়ে যায়, দেখা যায় তখন দাঁতে সেখানে খাবার ঢোকে। সেটা ক্যাপ পরানো দাঁতের ক্ষেত্রেও। রোগী যদি ব্রাশের পাশাপাশি ওই নির্দিষ্ট জায়গাটিকে ঠিক করে না থাকে, বিশেষ করে রাতে একবার ফ্লস ব্যবহার না করে তাহলে সমস্যা হতে পারে। আমরা বলি প্রতিবছর একটু রুট ক্যানেল করা দাঁতটিকে চেকআপ করিয়ে নিয়ে যান। হয়তো কিছু হয়নি তবুও দাঁতের সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটার দেখার জন্য। রোগীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে দেখাতে যেতে হবে।

সারা বিশ্বেই এখন বলা হচ্ছে ছয় মাস পরপর মুখটাকে পরীক্ষা করার জন্য দন্ত্যবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও দাঁতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকে সমস্যা ধরা পড়লে আর ব্যয়টা বাড়ে না।..

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
2 টি উত্তর
1 উত্তর
13 জুন 2018 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন molla Level 5
1 উত্তর
21 ফেব্রুয়ারি 2018 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md tushar Level 6
1 উত্তর
28 জানুয়ারি 2019 "স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন ফারহান Level 8
1 উত্তর
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...