275 বার প্রদর্শিত
"নিত্যনতুন সমস্যা" বিভাগে করেছেন Level 5

1 উত্তর

0 টি ভোট
করেছেন Level 5
জৈবিক দিক থেকে নারী পরকীয়ার কি ব্যাখ্যা?
নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই লংটার্ম বা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক করার মনোবাসনা যেমন আছে, তেমনি সুযোগ এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় উঠে আসে শর্টটার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের মনোবাঞ্ছাও। পুরুষের মধ্যে বহুগামিতা বেশি, কারণ অতীতের শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে শক্তিশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা যেভাবে নারীর দখল নিত, সেটার পর্যাক্রমিক ছাপ এখনো ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করলে পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীরা পরকীয়া করে না, কিংবা তাদের মধ্যে বহুগামিতা নেই। প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাশালী পুরুষেরা যেমন পরকীয়া করতে উন্মুখ থাকে, তেমনি, ক্ষমতাশালী কিংবা প্রভাবশালী পুরুষের স্ট্যাটাস আবার নারীর কাছে পছন্দনীয়। কোন নারীর বর্তমান সঙ্গির চেয়ে যদি তার প্রেমিকের পদমর্যাদা বা স্ট্যাটাস ভাল হয়, কিংবা প্রেমিক দেখতে শুনতে অধিকতর সুদর্শন হয়, কিংবা যে সমস্যাগুলো নিয়ে একটি নারী তার পার্টনার কিংবা স্বামীর সাথে অসুন্তুষ্ট, সেগুলোর সমাধান যদি তার প্রেমিকের মধ্যে খুঁজে পায়, নারী পরকীয়া করে। তাই আমেরিকায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, নিউট গিংরিচ, বিল ক্লিন্টন কিংবা বাংলাদেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কিংবা হুমায়ূন আহমেদ যখন পরকীয়া করতে চেয়েছে, তারা সেটা করতে পেরেছে, কারণ নারীরাও তাদের মত যশস্বী কিংবা ‘হাই স্ট্যাটাসের’ কেউকেটাদের সাথে সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ হয়েছে। নারীর আগ্রহ, অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে পরকীয়া করা সম্ভব নয়, এটা বলাই বাহুল্য। তাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের চোখে নারীর একগামিতার ব্যাপারটি এক ধরণের ‘মিথ’ বই কিছু নয়, অনেকটা নীচের ছবিটার মতো -


আগেই বলেছি লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই এটি নারী পরকীয়া করতে পারে, আগ্রহী হতে পারে বহুগামিতায়। নারীর পরকীয়ার এবং বহুগামিতার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস প্রস্তাব করেছেন বিজ্ঞানীরা, এর মধ্যে রয়েছে – রিসোর্স হাইপোথিসিস, জেনেটিক হাইপোথিসিস, মেট সুইচিং হাইপোথিসিস, মেট স্কিল একুজেশন হাইপোথিসিস, মেট ম্যানুপুলেশন হাইপথিসিস ইত্যাদি। দু একটি বিষয় এখানে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

জৈবিক কারণেই অসতর্ক কিংবা অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে (casual sex) নারীরা পুরুষদের মত প্রজননগত উপযোগিতা পায় না (এ নিয়ে আগে আলোচনা করেছিলাম এখানে)। তারপরেও নারীরা পরকীয়া করে, কিংবা হতে পারে বহুগামী, কারণ নারীদের ক্ষেত্রে বহুগামিতার একটি অন্যতম উপযোগিতা হতে পারে, সম্পদের তাৎক্ষনিক যোগান। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, খাদ্যের বিনিময়ে তারা পুরুষ শিম্পাঞ্জিকে যৌনতা প্রদান করে থাকে। গবেষকেরা লক্ষ্য করেছেন, নারী শিম্পাঞ্জিরা সেই সব পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের প্রতিই যৌনতার ব্যাপারে থাকে সর্বাধিক উদার যারা খাদ্য যোগানের ব্যাপারে কোন কৃপণতা করে না। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে কোন কিছু সত্য হলে মানব সমাজেও সেটা সত্য হবে, এমন কোন কথা নেই অবশ্য। কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানীরা আমাজনের মেহিনাকু (Mehinaku) কিংবা ট্রোব্রিয়াণ্ড দ্বীপপুঞ্জের (Trobriand Island) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, সেখানেও পুরুষেরা নারীদের জন্য (অনেকটা শিম্পাঞ্জিদের সমাজের মতোই) রকমারী খাদ্য, তামাক, বাদাম, শঙ্খের মালা, বাহুবন্ধনী প্রভৃতি উপঢৌকন সংগ্রহ করে নিয়ে আসে, আর বিনিময়ে নারীরা যৌনতার অধিকার বিনিময় করে। যদি কারো কাছ থেকে উপঢৌকনের যোগান বন্ধ হয়ে যায়, তবে নারীরাও সে সমস্ত পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্ক বন্ধ করে দেয়। সম্পদের যোগানের সাথে যে নারীর যৌনতা প্রদানের একটা অলিখিত সম্পর্ক আছে, তা জানার জন্য অবশ্য আদিম সমাজে যাওয়ার দরকার নেই। আধুনিক সমাজেও সেটা লক্ষ্য করলে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে চরম উদাহরণটির কথা আমরা সবাই জানি -পতিতাবৃত্তি। নারী যৌনকর্মীরা অর্থসম্পদের বিনিময়ে যৌনতার সুযোগ করে দেয় পুরুষদের – এটা সব সমাজেই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা থেকে পুরুষদের বহুগামী চরিত্রটি যেমন স্পষ্ট হয়, তেমনি হয় আর্থিক লাভের জন্য নারীর যৌনতা বিক্রির সম্পর্কটিও। যৌনকর্মী শুধু নয়, আমেরিকায় সাধারণ মেয়েদের মধ্যে গবেষণা করেও দেখা গেছে, যে সমস্ত নারীরা শর্ট টার্ম বা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক, তারা আশা করে যে, তার প্রেমিক অর্থ কড়ির দিক থেকে কোন কৃপণতা দেখাবে না, অনেক ধরণের দামী উপহার সামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে আসবে, বিলাসবহুল জীবন যাত্রায় অভ্যস্থ হবে, নিয়মিতভাবে ভাল ভাল রেস্টুরেন্টে তাকে আপ্যায়ন করবে, এবং সর্বোপরি যে কোন ধরণের সম্পদের বিনিয়োগে থাকবে উদার। কৃপণ স্বামীকে যাও বা মেয়েরা কিছুটা হলেও সহ্য করে, অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ায় আগ্রহী কৃপণ যৌনসঙ্গিকে কখনোই নয়। অ্যাফেয়ার বা পরকীয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের কৃপণতা মেয়েদের কাছে গ্রহণীয় কিংবা পছন্দনীয় নয়, কারণ তারা সঙ্কেত পেতে শুরু করে যে, তার সঙ্গিটি হয়তো ভবিষ্যতেও তার জন্য সম্পদ বিনিয়োগে সে রকমভাবে আগ্রহী নয়। এই মানসিক অভিরুচিগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, সম্পদের তাৎক্ষণিক আহরণ নারীদের ক্ষেত্রে এক ধরণের অভিযোজন জনিত উপযোগিতা দিয়েছে, যা নারীরা অনেক সময় পরকীয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চায়।

নারীদের পরকীয়ার ব্যাপারে আরো একটি লক্ষ্যনীয় প্যাটার্ন পাওয়া গিয়েছে, যেটা পুরুষদের থেকে কিছুটা আলাদা। বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নতুন সঙ্গির সাথে অপরিকল্পিত যৌনসম্পর্কের (casual sex) মাধ্যমে নারীরা সঙ্গিটিকে ভবিষ্যৎ স্বামী হিসেবে মূল্যায়ন করে নিতে চায়। সে জন্যই এমনকি স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বহুগামী, বোহেমিয়ান ধরণের ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে নারীরা প্রাথমিকভাবে অনিচ্ছুক থাকে; অতীতে যদি পুরুষটির বহু নারীর সাথে সম্পর্ক কিংবা আসক্তি থেকে থাকে, তা নারীটির কাছে তা এক ধরণের অনাকাংক্ষিত সংকেত নিয়ে উপস্থিত হয়। এর কারণ, স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কে জড়ালেও তার অবচেতন মনে থাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের আকাংক্ষা, যার নিরিখেই সে সাধারণতঃ উপরোক্ত বৈশিষ্টগুলো বিচার করে থাকে। তার সঙ্গির বহুগামিতা কিংবা অতীতে বহু নারীর প্রতি আসক্তির অর্থ তার চোখে হয়ে উঠে তার সাথে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার নিয়ামক। অর্থাৎ, সে ধরে নেয় এ ধরণের পুরুষেরা ‘ভবিষ্যৎ স্বামী’ হিসেবে উপযুক্ত নয়। মোটা দাগে, ভবিষ্যৎ স্বামীর মধ্যে যে গুণাবলীগুলো প্রত্যাশা করে, ঠিক সেগুলোই একটি নারী তার যৌনসঙ্গির মধ্যে খুঁজতে চায়। দুটি ক্ষেত্রেই মেয়েরা চায় তার পুরুষ সঙ্গি হবে দয়ালু, রোমান্টিক, সমঝদার, দুর্দান্ত, স্বাস্থ্যবান, রসিক, বিশ্বস্ত এবং সম্পদের বিনয়গের ব্যাপারে থাকবে উদার। সেজন্যই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ডেভিড বাস তার ‘বাসনার বিবর্তন’ (The Evolution Of Desire) বইয়ে বলেন,

উভয় ক্ষেত্রেই মেয়েদের অভিরুচির এই অপরিবর্তনীয়তা ইঙ্গিত করে যে, নারীরা অনিয়মিত যৌনসঙ্গিকে হবু স্বামী হিসবেই দেখে এবং সেজন্য দুইক্ষেত্রেই বেশি পদপর্যাদা আরোপ করে। বহু সমাজে আবার দেখা গেছে, যে সমস্ত সমাজে সহিংসতা খুব বেশি, নারীরা বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক করে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারটা চিন্তা করে। স্বামীর বাইরে গোত্রের অন্য কোন পুরুষের সাথে যদি নারীর কোন ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ গড়ে উঠে তবে সে স্বামী বাইরে থাকলে বা অন্য কোন সময়ে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ব্যাপারটা সাধারণভাবে প্রানীজগতের মধ্যে প্রচলিত আছে। যেমন, সাভানা বেবুনদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বারবারা স্মুটস সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, এই ধরনের বেবুনদের সমাজে একটি নারী বেবুনের সাথে প্রাথমিক বা মূল সঙ্গির বাইরেও একজন বা দু’জন সঙ্গির সাথে ‘বিশেষ ধরনের’ সম্পর্ক গড়ে উঠে, এবং সেই সঙ্গি বা সঙ্গিরা অন্য বেবুনদের উত্যক্ত করার হাত থেকে নারী বেবুনটিকে রক্ষা করে। ‘পর-পুরুষের’ সাথে যৌনতার বিনিময়ে মূলতঃ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নারী বেবুনটি। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী রবার্ট স্মিথ তার একটি গবেষণাপত্রে বলেন -

‘প্রাথমিক সঙ্গিটি সবসময় নারী বেবুন কিংবা তার সন্তানের পাশে থেকে থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে না। তার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন পুরুষের সাথে নারীটির ‘বিশেষ কোন সম্পর্ক’ থাকলে তা তার বেঁচে থাকায় বাড়তি উপযোগিতা নিয়ে আসে। এভাবে নারীটি অন্য কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে নিজের এবং নিজের সঙ্গির জিন রক্ষা করার ক্ষেত্রে এক ধরণের স্ট্র্যাটিজি তৈরি করে’।
এ ধরণের স্ট্র্যাটিজি মানব সমাজে বর্তমানে খুব বেশি দৃশ্যমান না হলেও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আদিম শিকারী সংগ্রাহক কিছু সমাজে যেখানে নারীদের উপর পুরুষালী সহিংসতা, আগ্রাসন, ধর্ষণ খুবই বেশি, সেখানে নারীরা এ ধরণের ‘অতিরিক্ত যুগল বন্ধনের’ মাধ্যমে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।




‘এমন কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই যে মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে লাজুক ছিলো কিংবা তারা গোপন যৌন অভিযান এড়িয়ে চলে। বরং পুরুষ ও নারী উভয়েই এক মিশ্র প্রজনন কৌশল প্রদর্শন করে; একগামিতা এবং বহুগামিতা দুটোই আমাদের স্বভাবজাত অভ্যাস’।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
28 অক্টোবর 2018 "যৌন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Younus Matubber Level 8
1 উত্তর
26 ডিসেম্বর 2018 "যৌন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Abinashray Level 5
1 উত্তর
22 নভেম্বর 2018 "সাধারণ" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Md. Khairul Level 5
1 উত্তর
28 অক্টোবর 2018 "যৌন" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন Younus Matubber Level 8
1 উত্তর
03 সেপ্টেম্বর 2020 "নিত্যনতুন সমস্যা" বিভাগে জিজ্ঞাসা করেছেন mdmuhibbullah Level 1
নির্বিক এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি আপনার প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন এবং পাশাপাশি অন্য কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তাদের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
...