পুরাকালে কঠোর সাধনা করে নাকি বর মিলত অমরত্বের। অমরত্ব না হলেও দীর্ঘজীবন পাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমাদের স্বাভাবিক আয়ুকে আরও ১০ থেকে ২০ বছর বাড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি প্রায় বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। এখন শুধু আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দীর্ঘজীবনের দাওয়াই বাজারে ছাড়তে চান বিশেষজ্ঞরা। তবে একটু ধৈর্য ধরুন, সবরকম পরীক্ষার পর এর ফলাফল সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে একে বাজারে ছাড়তে আরও বেশ কয়েক দশক লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে মানব শরীরে জিএসকে-৩ নামে এক ধরনের প্রোটিন মলিকিউলস থাকে। এই প্রোটিনের কারসাজিতেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুড়িয়ে যাই। এই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে! বয়য় হলেও বুড়িয়ে যাবে না শরীর-মন। পাশাপাশি মানুষের জীবনের গড় স্বাভাবিক আয়ু ৭০-৮০ থেকে বেড়ে ১১০-১২০ হবে। বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে লিথিয়াম ড্রাগ নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করে মানব শরীরে জিএসকে-৩ এর ক্রিয়াকলাপ অনেকটাই দমানো যাবে। এই ড্রাগ জিএসকে-৩ কে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় করে দেয়। লিথিয়াম ড্রাগ ট্যাবলেটে পরিণত করা যায়। তাই মানুষ সহজেই এই ড্রাগ খেতে পারবেন। সাধারণত লিথিয়াম বায়োপলার ডিজঅর্ডার নামে এক ধরনের মানুসিক অসুখের চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয়। এর কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। যেমন - এই ড্রাগ নিয়মিত ব্যবহার করলে ক্লান্তি ও অবসন্নতা গ্রাস করে। তাই লিথিয়ামের বিকল্প কিছু খোঁজার চেষ্টায় এখন রয়েছেন বৈজ্ঞানিকরা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, জিএসকে-৩ কে শরীরে নিষ্ক্রিয় করে দিলে শুধু দীর্ঘজীবন নয়, বয়সের সঙ্গে যে সব অসুখ আমাদের গ্রাস করে সে সব থেকেও দূরে থাকা সম্ভব। যেমন- অ্যালঝাইমার্স, ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং পারকিনসন্স ডিজিজ থেকে আমাদের রক্ষা করবে লিথিয়াম। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও গবেষক দলের প্রধান ডঃ জর্জ ইভান জানাচ্ছেন, 'দীর্ঘজীবন সত্যিই মানুষের প্রয়োজন কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু সুস্থ জীবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। আমরা বেশিরভাগই ১১০ বা ১২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে চাই না। কিন্তু আমরা সবাই সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই। এই আবিস্কার আমাদের সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।