বিয়ে মানবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। এ বাঁধনে দুটো হৃদয় জড়িয়ে পড়ে। দুজনার হাতে হাত রেখে কাটে জীবনের একটি বড় অংশ। কাজেই এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে চিন্তে নেওয়াই শ্রেয়, বিশেষ করে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে। বিভিন্ন দেশে বিয়ের আগেই পাত্রপাত্রীরা জেনে নেন তাঁর হবু জীবন সঙ্গী কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত কি না। আমাদের দেশের জনগণ এ ব্যাপারে সচেতন না হলেও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। আসুন জেনে নিই কী ধরনের পরীক্ষাগুলো বিয়ের আগে করানো দরকার।
রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা
প্রথমে আসি রক্তের গ্রুপ সংক্রান্ত জটিলতায়। রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। যেমন – A, B, AB ও O। আবার আছে পজেটিভ বা নেগেটিভ। যেমন – বি পজেটিভ,ও নেগেটিভ। যে কোনো গ্রুপের রক্তের যে কেউ, অন্য যেকোন গ্রুপের ব্যক্তিকে বিয়ে করে সংসার বাঁধতে পারেন।
তবে পজেটিভ-নেগেটিভের মিলনে ঘটতে পারে বিস্ফোরণ- বিশেষ করে হবু স্ত্রী যদি নেগেটিভ গ্রুপের আর স্বামী যদি পজেটিভ গ্রুপের হন। এমন ব্যক্তিদের সন্তান হতে পারে নেগেটিভ বা পজেটিভ রক্তের গ্রুপের। সন্তান নেগেটিভ গ্রুপের হলে সমস্যা নেই, তবে সন্তান পজেটিভ গ্রুপের হলেই বিপদ। যদিও প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কম। সন্তান প্রসবের সময় সন্তানের রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে। ফলে মায়ের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ এন্টিবডি মায়ের শরীরে বাসা বাঁধে। পরের যে কোনো সময়ের সন্তান যদি পজেটিভ গ্রুপের হয় তাহলে এ এন্টিবডিগুলো অমরা বা প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রুণে প্রবেশ করে তার রক্তকণিকাগুলো ধ্বংস করে ফেলে। গর্ভস্থ শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে বা জন্মের পর মারাত্মক জন্ডিস দেখা দিতে পারে, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কি চিন্তায় পড়ে গেলেন? এত দিনের প্রেয়সীকে বিদায় জানানোর কথা ভাবছেন? এত সহজে হার মানবেন কেন? আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে ছাড়তে হবে না কাউকে, তবে আপনাকে হতে হবে সচেতন। যদি এমনটি হয়েই থাকে তাহলে হবু স্ত্রী আগে কাউকে রক্ত দিয়েছে কি না তা জেনে নিন। সে রেকর্ড থেকে জানতে পারবেন রক্ত পজিটিভ না নেগেটিভ। যদি এমনটি না হয় তাহলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। জন্মের পর সন্তানের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করুন। যদি সন্তান পজেটিভ হয় তাহলে মায়ের শরীরে এন্টি-ডি ইনজেকশন দিতে ভুলবেন না। এটি মায়ের শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডিগুলোকে ধ্বংস করে পরের সন্তানকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। যদি গর্ভপাত হয়,গর্ভের সময় রক্তক্ষরণ হয় তাহলেও এটি দিতে ভুলবেন না।
এইডস
দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও ঝুঁকি থাকছেই। কারণ অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারে এইডস দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হতে পারে সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি,সি,গনোরিয়াসহ নানাবিধ রোগবালাই। হবু স্বামী বা স্ত্রী আপনার দেহে ছড়াতে পারে এই মারাত্মক রোগগুলো। তো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এর রিপোর্ট চাইলে কি খুব ক্ষতি হবে?
মানসিক রোগ
মানসিক রোগকে আমরা সবাই অবজ্ঞা করি। আমাদের মধ্যে তো একটি কথা চালু আছে যে মানসিক রোগীকে বিয়ে দিয়ে দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে। এটি খুবই মারাত্মক ভাবনা। বিয়ে করালে মানসিক রোগ ভালো হয় না বরং বাড়ে। বিয়ে মানে শুধু একসাথে থাকা নয়, অনেক দায়িত্বও কাঁধে নেওয়া। এগুলো সামলাতে গিয়ে রোগ আরো বাড়ে। তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ না করে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন না। রোগ আগে থেকে লুকাবেন না। হবু সঙ্গীর সাথে আগে থেকেই আলাপ করে নিন। দেখবেন হবু সঙ্গীর সহযোগিতায় অনেক সমস্যা মিটে যাবে।
সিমেন পরীক্ষা
সন্তান না থাকলে ঘর খালি খালি লাগে। মেয়েদের যেমন হতে পারে বন্ধ্যাত্ব, পুরুষেরও এটি হতে পারে। হিসেবে প্রায় অর্ধেক অর্ধেক। তাই হবু স্বামীর সিমেন বা বীর্য পরীক্ষা করার পাশাপাশি দুজনেরই রক্তের হরমোন যেমন এফএসএইচ, টিএইচএস, টেস্টেটেরোন, ইস্ট্রোজেন, প্রোল্যাকটিন পরীক্ষা করতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাম জরুরি, এটি পরবর্তীকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিতে সহায়তা করবে।
তবে এত ভেবে চিন্তে তো আর বিয়ে হয় না। বিয়ের আগে সম্ভব না হলেও বিয়ের পরে নিজেদের সন্তানের কথা ভেবে পরীক্ষাগুলো করুন। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।