ফ্রি সেক্স, ওপেন সেক্স, প্লে মাই বডি, মাই বডি মাই ডিসেশন, লিভ টুগেদার, ফ্রিডম অফ দ্য ইউটার্স এসব চিত্তাকর্ষণ শ্লোগানে মেতেছে বিশ্ব। পার্কে, ক্লাবে, গাড়িতে, খোলা মাঠে যৌনতার ছড়াছড়ি। ওপেন কিসকে মনে করা হয় শহরের নান্দনিক শোভা। হলিউডের মুভিগুলোতে এসব চিত্র স্বাভাবিক। ফলে এসব দেশ সেক্স ভাইরাস বৃদ্ধির কারণে ধর্ষণের সেঞ্চুরির মতো ঘটনা ঘটছে আমাদের সমাজে।
পশ্চিমা বিশ্বের এ সংস্কৃতির হাওয়া লেগেছে এশিয়ান ভারতীয় উপমহাদেশেও। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব উম্মুক্ত যৌন সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠছে বাংলাদেশি সমাজেও। পশ্চিমাদের নীল নেশায় শিকার আমাদের তরুণরা। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ, ইভটিজিং, অবৈধ সন্তান সংখ্যা। ভোগের লালশায় শিকার হচ্ছে নারীরা। নারীদের শিকারেও বের হচ্ছে নিত্য নতুন কৌশল। তাদের কেউ ভালবাসার টানে, কেউ অর্থের লোভে, কেউ নারী স্বাধীনতার কথা বলে পুরুষের ফাঁদের জালে পা রাখছে। শিকার হচ্ছে নিরব ধর্ষণের। ভোগের খেলনায় শিকার নারীর দেহ-দৌলত। এসব পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কৌশল। তবে এ ক্ষেত্রে নারীদের দায়টাও এড়িয়ে দেওয়া যায় না। নারীরাও সন্তুষ্ট চিত্তে পুরুষের ফাঁদে পা ফেলে বিলিয়ে দিচ্ছে দেহ মন।
সম্প্রতি বিশ্বে দাবি উঠছে, জোরপূর্বক ধর্ষণই ধর্ষণ, সন্তুষ্টচিত্তে ধর্ষণ, ধর্ষণ নয়। সন্তুষ্টচিত্তে যৌন মিলনে লিপ্ত হলে ধর্ষণ কিংবা অপরাধ বলে আখ্যা দেওয়া যাবে না। ধর্ষণ শব্দটা নিয়েও শুরু হয়েছে আজকাল বিতর্ক। জোরপূর্বক ধর্ষণ, ইচ্ছাকৃত ধর্ষণ। এ বিতর্কের পেছেনে রয়েছে নারীরাই। সন্তুষ্ট চিত্তে যৌনমিলনে লিপ্ত হয়ে মাঝপথে বনিবনা না হলেই ঢুকে দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণ মামলা। ফলে ধর্ষণ মামলা থেকে মুক্তি পেতে সন্তুষ্টচিত্তে যৌনমিলন অপরাধ নয় বলে দাবি তোলা হচ্ছে।
যে যেভাবেই যৌনতাকে বৈধতার দেওয়ার দাবি করুক না কেন-এর পরিণতি সমাজকে যে ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহ নেই। অবৈধ যৌনাচার মাববসভ্যতার সুস্থ্য স্বাভাবিক বিকাশেও বিঘœতা ঘটাচ্ছে। অপরদিকে ক্ষুণœ হচ্ছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। ধর্মীয় বিধান মানুষের জীবনের জন্য চিরকল্যাণময়। ধর্ম যেমন মানুষের জীবনের জন্য প্রয়োজন, যৌনতা ও মানুষের প্রয়োজন। তবে ধর্ম মানুষের যৌন চাহিদাকে সীমা রেখা টেনে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্ম।
কোরআনে ফ্রি সেক্সকে ব্যভিচার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোরআনে সেক্সের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ।” [সুরা বনী-ইসরাঈল: ৩২] কোরআনের এ আয়াতটিতে ব্যভিচারে উদ্বোধ্য করে সকল কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যভিচারের ব্যাখ্যায় হাদিসে বলা হয়েছে, “ কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের ব্যভিচার, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার ব্যভিচার, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার, খারাপ কথা শোনা কানের ব্যভিচার আর ব্যভিচার কল্পণা করা ও আকাঙক্ষা করা মনের ব্যভিচার। অতঃপর লজ্জাস্থান তাকে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়”। [সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী]
বর্তমান সমাজচিত্রের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে রাসুল সা. বলেছেন, “কেয়ামতের লক্ষণ হচ্ছে মুসলমান সমাজের মধ্যেই যিনা-ব্যভিচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, এমনকি মানুষ পশুর মতোই প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে”। হাদিসটির বাস্তবতা সমাজে চোখ রাখলে সহজেই অনুমেয়। ফ্রি সেক্সের বিশ্বাস থেকে ফিরে না এলে মানুষকে আরও ভয়বাহ দৃশ্যের কাছে মাথা নত করতে হবে।