মনোবিদরা বলছেন, প্রেম হারানো আসলে এক প্রক্রিয়া। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে বেসুরো ঠেকছে, সময় হাতে থাকতেই সে ইঙ্গিত দেয় পুরুষ। কিন্তু তা বুঝতে পারে না নারী। তারা ভাবে, সম্পর্কে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে খুঁত ধরছে সঙ্গী। মনোবিদদের মতে, পুরুষ যেমন নারীকে সঠিক বুঝে উঠতে পারে না, তেমনই পুরুষের মন পড়তে পদে পদে ভুল করে মেয়েরা।
পুরুষ-নারীর মধুর সম্পর্ক নষ্টের জন্য কয়েকটি কারণ খুঁজে বের করেছেন রিলেশনশিপ বিশেষজ্ঞরা। সম্পর্ক ভাঙার জন্য নারীর আচরণের দিকেই কিন্তু গবেষণা রিপোর্টে আঙুল তোলা হয়েছে।
১) অতিরিক্ত আঁকড়ে ধরা
বহু মহিলাই নিজের প্রেমিক অথবা স্বামীকে চোখে হারান। সঙ্গী অনুপস্থিত থাকলে তাঁকে অনবরত ফোন বা মেসেজ করে যোগাযোগ করতে চান। মনের মানুষকে ঘিরেই নিজের জগত্ সৃষ্টি করেন এই মহিলারা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত শুধু তাঁর সান্নিধ্যেই কাটাতে চান। পুরুষ সময় দিতে না পারলে প্রতি নিয়ত তাঁকে অভিযুক্ত করা মেয়েদের দস্তুর। কিছু নারীর দৃষ্টিতে বিষয়টি মধুর মনে হলেও তাতে বিরক্ত হন পুরুষ। ক্রমাগত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা নারীর প্রতি ধীরে ধীরে তিনি আকর্ষণ হারাতে থাকেন। অজান্তেই চিড় ধরে সম্পর্কের ভিতে।
২) অতিনাটকীয় আচরণ
ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা, সরল এই পথের শেষে থাকে বন্ধুত্বের নির্যাস। এই সোজা রাস্তাকে অনর্থক জটিল করে তুললে সম্পর্ক সমস্যাসঙ্কুল হয়। বহু নারী না বুঝে সেই ভুলই করে বসেন। মনে রাখা দরকার, সদর্থক আচরণের টানেই কিন্তু মেয়েদের পছন্দ করেন পুরুষ। তাই কথা বলতে গেলেই নানান অভাব-অভিযোগ সামনে নিয়ে আসার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। খেয়াল রাখা দরকার, পুরুষ যখন অতিনাটকীয়তা সংবরণ করতে বলেন, তা নিছক হুমকি নয়। আসলে নারীর নাটকীয় স্বভাব পুরুষের মনে এক নেতিবাচক ছবি আঁকে। হাসি-ঠাট্টা-আনন্দের সম্পর্ক ধীরে ধীরে বিষিয়ে যায়। অথচ তার বিন্দু-বিসর্গ টের পান না মেয়েরা।
৩) প্রশংসার অভাব
প্রকাশ্যে মানতে না চাইলেও অধিকাংশ পুরুষই হীনমন্যতায় ভোগেন। এই কারণে বেশির ভাগ পুরুষ পছন্দের নারীকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে ভয় পান। আসলে ব্যর্থতার সম্ভাবনা তাঁর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর জন্য অবশ্য সমাজই দায়ী কারণ শৈশব থেকেই ছেলেদের দায়িত্বের জোয়াল বওয়ার পাঠ দেওয়া হয়। পড়াশোনা থেকে কেরিয়ার, পরিবার থেকে প্রফেশন- সব ক্ষেত্রেই তাঁকে সফল হতে হবে, এমনই প্রত্যাশা। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সঙ্গীনির থেকে তাই তারিফ শুনতে চান তাঁরা। কিন্তু তার বদলে যদি সব সময় সঙ্গীনির জীবনের যাবতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁকেই দোষী ঠাহর করা হয়, তাহলে চরম বিরক্তি গ্রাস করে। আর এর জেরেই ধ্বংস হয় প্রেম।
৪) প্রয়োজন মেটানোর ব্যর্থতা
পুরুষ নারীর ভালোবাসা পেতে চান। কিন্তু বেশির ভাগ মেয়ের চোখে পুরুষের না কি মনের অস্তিত্ব নেই, থাকলেও তা খুব অগভীর। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, পুরুষ অতিরিক্ত অনুভূতিশীল। নারীর কাছে তাঁর চাহিদা যৌন সুখ, মানসিক ভরসা ও প্রশংসা। এর কোনোটিতে ঘাটতি থাকলে তার মনে বিতৃষ্ণা জন্মায়।
৫) বেঁধে রাখার চেষ্টা
সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলেই কাঙ্খিত পুরুষটি নারীর কথায় ওঠ-বোস করবেন, এই ধারণা ভুল। প্রেমে পড়ার পর বহু মেয়েই তাঁর পুরুষ সঙ্গীর নানান অভ্যাস সম্পর্কে আপত্তি তুলতে শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে পুরুষ তা মেনে নিলেও ধীরে ধীরে সঙ্গীনির শাসনের পারদ চড়লে তাঁর শ্বাসরোধের উপক্রম হয়। প্রেমে পড়লে বা বিয়ের পর নারীর দাবি থাকে, বন্ধু বা আত্মীয়রা নন পুরুষের মন জুড়ে থাকবেন শুধু তিনি। এই ধারণাই ডেকে আনে সর্বনাশের ইন্ধন।
পুরুষ স্বাধীনচেতা। মনে রাখতে হবে, প্রেমের দোহাই দিয়ে তাঁকে অনুশাসনে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা ভুল। খেয়াল রাখতে হবে তাঁর মানসিক স্থিতি কোনও ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে কি না। সম্পর্কের যত্ন নিলে প্রেম হারানোর ভয়কে চিরদিনের মতো বিদায় জানানো সম্ভব।
সূত্র: এই সময়