যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ছারপোকাদের কীটনাশক সহ্য করার ক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সিনসিন্যাটি এবং মিশিগানে ছারপোকার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। বাসাবাড়িতে উপদ্রব করে এমন ২১ প্রজাতির ছারপোকার ওপর গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এদের ধ্বংস করতে হলে আগে যে কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এখন তার শক্তি আগের চেয়ে হাজার গুণ বেশি দরকার হয়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রচলিত কীটনাশক এখন আর ছারপোকা ধ্বংসে কাজ করছে না। কারণ এগুলোর ১৪টি জিনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এসব পরিবর্তনের ফলে এদের চামড়া মোটা হয়ে গেছে। এ কারণে কীটনাশক এসব কীটের শরীরে ঢুকতেই পারে না। জিনগত কিছু পরিবর্তনের ফলে ছারপোকার স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করতে পারছে না কীটনাশক। কোনো কোনো প্রজাতির ছারপোকা আবার কীটনাশক হজম করে ফেলার শক্তিও অর্জন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির পতঙ্গবিশারদ ও সংশ্লিষ্ট গবেষক সুবা পালি জানান, কষ্টসহিষ্ণু ছারপোকাগুলোর শরীরে ঘটে যাওয়া নানা পরিবর্তন এদের কীটনাশক থেকে রক্ষা করছে। তবে ছারপোকার জিনগত পরিবর্তনের ওপর সাম্প্রতিক এই গবেষণা নতুন এবং আরো কার্যকর কোনো কীটনাশক উদ্ভাবনের উপায় বাতলে দেবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে যতদিন না তেমন কোনো কিছু তৈরি করা যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত উপদ্রুত জায়গায় ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ দিয়ে ছারপোকা মারাটাই সবচেয়ে কার্যকর হবে বলে তাঁর অভিমত। তা ছাড়া বাসার আসবাবগুলো রোদে দিয়েও ছারপোকা মারা যায়। কারণ রোদের হাত থেকে বাঁচার উপায় এখনো ‘আবিষ্কার’ করতে পারেনি ছারপোকা-সমাজ!
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং দেশে-বিদেশে মানুষের ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ার ফলে চ্যাপ্টা আকারের ছারপোকা এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশেষভাবে সস্তা হোটেলগুলোতে এর উপদ্রবে মানুষ এখন অতিষ্ঠ। হোটেলের অতিথিরা ঘুমিয়ে পড়ার পর এরা রক্তপান শুরু করে এবং পরের দিন হোটেলের অতিথি জেগে ওঠেন দেহে চুলকানি আর ছোপ ছোপ লাল দাগ নিয়ে।
হোটেল থেকে এখন এরা ছড়িয়ে পড়ছে বাসাবাড়িতে, যেখান থেকে এদের নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, ছারপোকা রক্তপান না করে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আর একটি মেয়ে ছারপোকা পুরো একটি বহুতল ভবনে বাচ্চাকাচ্চা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।