নিউজিল্যান্ডের কান্ট্রিসাইডে টোকোরোয়া যেন এক কথায় শিল্পীর ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা জলছবি। মনোরম আবহাওয়া। ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট। দূষণ প্রায় নেই। ফুলের গাছে চারদিক রঙিন। পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম। এহেন টোকোরোয়ায় তীব্র অভাব ডাক্তারের। গোটা গ্রামে মাত্র একজন ডাক্তার।
এ অবস্থায় বার্ষিক ১ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২ কোটি টাকা) বেতনেও পাওয়া যাচ্ছে না কর্মী। খুব সামান্য খরচে থাকার বন্দোবস্তও রয়েছে। সপ্তাহে ৪ দিন ডিউটি। বছরে ১২ সপ্তাহ ছুটি। কোনো নাইট ডিউটি নেই। সপ্তাহান্তে কাজ করতে হবে না। সদ্য এমবিবিএস পাস করে উচ্চ বেতনের চাকরি খুঁজছেন?
নিউজিল্যান্ডের ছবির মতো গ্রাম টোকোরোয়ায় তাহলে আপনাকে লুফে নেবে। কারণ সোনার মতো এই চাকরিতেও কেউ আবেদন করতে চাইছেন না। গত ৪ মাস ধরে একটিও আবেদনপত্র জমা পড়েনি। একজন জুনিয়র ডাক্তারও টোকোরোয়ায় চাকরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এদিকে ৬১ বছর বয়সি অ্যালান কেনির পক্ষে অত রোগী একা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারের বড় প্রয়োজন।
অ্যালানের কথায়, 'এক এক দিনে প্রায় ৫০ জন রোগী দেখতে হয়'। প্রায় ৬ হাজার রোগীর চাপ। মাঝে মাঝে তো সকাল সাড়ে ৮টা থেকে টানা সন্ধে ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখি। খাওয়ারও সময় পাই না। আরেকজন ডাক্তার থাকলে খুব ভালো হয়। এত ভালো অফারেও কোনও ছাত্র আবেদনই করছেন না। আমি কয়েকদিন যে ছুটি নেব, তারও উপায় নেই।' কেন এই অবস্থা?
অ্যালান জানাচ্ছেন, মূলত খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যই কোনও ছাত্র আধুনিক জীবন ছেড়ে টোকোরোয়ায় আসতে চাইছেন না। এখান থেকে সবচেয়ে অসুবিধে হল, বড় শহর অনেকটাই দূরে। টোকোরোয় মোট সাড়ে ১৩ হাজার লোকের বসবাস। গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাদের সবাইকেই অকল্যান্ড যেতে হয়। অকল্যান্ড এখান থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার। স্রেফ এই কারণেই প্রচুর অর্থ ও ছুটি থাকা সত্ত্বেও কোনও জুনিয়র ডাক্তার চাকরির আবেদন করছেন না।
অ্যালান বলছেন, 'আমি আমার কাজকে খুবই ভালোবাসি। আমি থাকতেও চাই এখানে। এই মনোরম পরিবেশে থাকতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু আমারও তো ছুটি দরকার হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা এই আকর্ষণীয় চাকরিতে আসুক।'