আপনার এই সমস্যাটি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এমন ফাটা চামড়া বা স্ট্রেচ মার্কের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। আমাদের শরীরের ত্বকে বিভিন্ন অংশে এই ফাটা দাগগুলো দেখা যায়। মূলত এই সমস্যা বাড়তি ওজনের জন্য হয়। শরীরের আয়তন যখন বেড়ে যায়, ত্বক তখন স্ট্রেচ করে বাড়তি আয়তনকে ঢাকতে। ফলে তৈরি হয় এই দাগ। আবার গর্ভ পরবর্তী সময়ে নারীদের তলপেটে চামড়ার টানজনিত কারণে এই ধরনের দাগ হয়ে থাকে। এটি ত্বকের উপরে দৃশ্যমান লাইনের মত দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন- পেটের প্রাচীর, কোমর, হাত, ঘাড়, হাটুর পেছনে, উরু এমনকি বুকেও দেখা যায়। স্থুলতা তো অবশ্যই, সাথে গর্ভ ধারণের মত শারীরিক ধকল এবং শরীরে পানি ঘাটতির কারণেও হতে পারে এ ধরনের সমস্যা।
জেনে নিন এই ফাটা ত্বকের হাত থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে।১. গ্লাইকলিক অ্যাসিডযুক্ত বিভিন্ন বিউটি পণ্য যেমন টোনার, ক্লিনজার ও ময়শ্চারাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করুন। এই অ্যাসিড ফাটা দাগ নির্মূলে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
২. ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন। দিনে ৩ বার ফাটা দাগের উপর ম্যাসেজ করুন। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম না পেলে সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টটি দিনে ৩ বার খেতে হবে।
৩. প্রতিদিন ৩ বার ফাটা স্থানের উপর ডিমের সাদা অংশ ৫-১০ মিনিটের জন্য ম্যাসেজ করুন। যতদিন দাগটি নির্মূল না হয় ততদিন এই পদ্ধতিটি করে যাবেন।
৪. শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলে লেবুর একটি টুকরা নিয়ে দাগের উপর ১৫ মিনিট ধরে ম্যাসেজ করুন। এতে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
৫. ফাটা দাগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরণের তেল মিশিয়ে দাগের উপর প্রতিদিন ১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন। উপকার পাওয়া যাবে।
৬. চিনি, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে তা প্রতিদিন ফাটা দাগের উপর প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন।
৭. এর জন্য আরেকটি প্রসেজ এ্যাপ্লাই করতে পারেন। এটি হল একটি আলু নিয়ে তা মোটা করে ২ টুকরা করে ফাটা দাগের উপওে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করুন। এর রস ভালো মত লাগলে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন স্থানটি।
৮. ঘৃতকুমারির পাতা নিয়ে এর ভেতর থেকে জেলী সদৃশ অংশটি বের করে দাগের উপরে লাগিয়ে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৯. এপ্রিকট ফলের বিচি ফেলে দিয়ে এর পেস্ট বানিয়ে দাগের উপর ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন প্রতিদিন ২ বার।
১০. প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, ডিমের সাদা অংশ, দই, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, তরমুজের বীজ খাবেন। এগুলো আপনার ত্বককে জলযোয়িত রাখবে। শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলে সহায়তা করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমোনের পরিবর্তন, বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা এবং বিশেষ হরমোন থেরাপি ইত্যাদি কারণে শরীরে ফাটা দাগ পড়তে পারে। মূলত স্তন, উরু, পশ্চাৎদেশ, পেট, হাঁটু ইত্যাদি অংশেই ফাটা দাগ বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
কোনো লোশন, ক্রিম বা তেল ব্যবহারের মাধ্যমে এই ফাটা দাগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। তবে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের যে কোনো ফাটা সমস্যারই মূল কারণই হল শুষ্কতা। আর্দ্রতার অভাবে ত্বক ফাটতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রেও ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। আর বাহ্যিকভাবে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সারা বছরই ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চারাইজার।
হঠাৎ যেন ওজন বেড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার, প্রচুর সবজি ও ফল খেতে হবে নিয়মিত। সুস্থ ত্বকের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আর তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি।