প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল বিষয় হলো পরীক্ষা!আর পরীক্ষার মূল হলো প্রশ্নপত্র। সেই প্রশ্নপত্রই যদি উত্তরসহ ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে পরীক্ষাব্যবস্থাই তো ভেঙে পড়ে -- তো শিক্ষাব্যবস্থাই ধসে পড়ার নামান্তর!এখন আমাদের দেশ হয়েছে ডিজিটাল! কিন্তু আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থাটা রয়ে গেছে অ্যানালগ ব্যবস্থায়! অ্যানালগ-ব্যবস্থা দিয়ে ডিজিটাল যুগের সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়! পূর্বতন ব্যবস্থা দিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবিলা করা যায় না! এ জন্য আমাদের উন্নত দেশের পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে!উন্নত দেশগুলো যেভাবে তাদের পরীক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল করেছে, কিন্তু এগিয়ে যেয়েও মূল বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছি ... দু:ক্ষিত!
প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কোন বিষয় নয়! শুরু হয়েছে ২০১৩ -২০১৪ সালের দিকে! শুধু এসএসসি নয়,, ফাঁস হচ্ছে ৩য় শ্রেণী থেকে শুরু করে বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত,,, শুধুইবা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বলি কেন বিভিন্ন সূত্রমতে নামি-দামি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও বিক্রি হচ্ছে মোটা দামে... পুরো শিক্ষা ব্যাবস্থাই যেন এখন রমরমা বাণিজ্যের রূপ নিয়েছে! আর এই বাণিজ্যে কোন পুঁজি ছাড়াই ফেসবুক, ইমো, ভাইবারের মাধ্যমে কিছু সময় ব্যায় করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা বিনিময় আমাদের জন্য তৈরী করছে কতগুলো অশিক্ষিত গাঁধা যাদের কেউ কেউ একদিন এই অসম্ভব সফলতা প্রত্যাশী একটি জাতির হাল ধরবে.... দুর্ভাগ্য আমাদের ..... শুরুতেই যদি এই অপকর্মটিকে শুধুই একটি গুজব না বলে এর মূল উৎপাটন করা যেত তাহলে আজ আর আমায় বেশতোতে এ নিয়ে এতো দীর্ঘ লেখার দরকার ছিলোনা.....
সময় গেলে সাধন হয়না,,, প্রতিটি সমস্যার একটি মূল কারণ থাকে! বিভিন্ন সূত্রমতে সেই ২০১৪ থেকে একটি সুধীমহল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থা বা দপ্তরকে প্রমানসহ অবগত করলেও তারা শুধুই গুজব বলে তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন যা আজকে একটি প্রকট জাতীয় সমস্যার আকার ধারণ করেছে -- তাই আমায় যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করার দায়িত্ব দিতেন তবে আমি যা করতাম:
১. জাতীয় পর্যায়ে কমিটি শিক্ষাবিদ, RAB (তিন বাহিনীর সদস্য), রিটায়ার্ড শিক্ষা ও তথ্য সচিবএর সম্মন্বয়ে একটি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ সেল (কমিটি) গঠন করতাম.... প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করার জন্য আইন - প্রণয়ন সহ (সংসদের অনুমতি ব্যাতিরেকে - লাল নথির দৌরাত্ম ...........) সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার স্বতন্ত্র ক্ষমতা থাকতো তাদের ইচ্ছাধীনে ,,,,,,,.
২. Cmobing operation (চিরুনি তল্লাশি) বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে (COMBING OPERATION) চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে সব অপরাধীকে আইনের কাছে সোপর্দ করার ব্যবস্থা করতাম...
3! নিজের ঘর তিক্ত সব ঠিক: সর্বাগ্রে বিভিন্ন তথ্যের সূত্র ধরে দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতাম, এবং রাষ্ট্রীয় কাজে নিজ দ্বায়িত্ব অবহেলা করে শিক্ষার মত একটি বিষয়কে দুর্বল করে দেয়ার অপরাধে তাদের সকল সুযোগে সুবিধা ব্যাতিত চিরতরে চাকুরিচ্যুত করতাম এবং তাদের পরবর্তী ৩ প্রজন্মকে সরকারি কোনো পদে পদায়ন না করার জন্য ব্যবস্থা নিতাম!!!
4. বহিরাঙ্গন: বাহিরের বিভিন্ন গোষ্ঠী যারা ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত হয়েছে ও এরেস্ট করা হয়েছে (আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি রয়েছে) তাদের জন্য জেল ও বিশাল অংকের আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা করতাম যা অন্যের জন্য পার পাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকতোনা.......
৫..কোচিং বাণিজ্য বন্ধ: কিছু নামি দামি কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতার কথা জানা গেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে! ঢাকা সহ সকল বিভাগীয় শহরের কোচিং সেন্টারগুলোতে ইয়া বড় এক একটা তালা ট্রাম্প এর ইউএস সিকিউরিটি তালা ঝুলিয়ে দিতাম....... অর্থাৎ আইন করে কোচিং বাণিজ্য শেষ ..........
৬. প্রশ্নপত্র বিলি: পরীক্ষার দিন ঠিক আধা ঘন্টা আগে প্রতিটি হলে RAB সক্রিয় সহযোগিতায় পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতাম ....
৭ . ভিজিল্যান্স টিম: প্রতিটি উপজেলায় RABER একটা ভিজিল্যান্স টিম নিয়োগ করতাম যাতে তারা কোন অশুভ পায়তারা রোধ করতে সদা তৎপর থাকতো.....
৮. মোবাইলের অপব্যাবহার রোধ: পরীক্ষার হলের চতুর পাশে কেউ ১ কিলোর মধ্যে মোবাইল নিয়ে ঘোরাঘোরি করার উপর থাকতো কড়া নিষেধাজ্ঞা.............
৯. মোবাইল সীজ: পরীক্ষার ১৫ দিন আগে সব পরীক্ষার্থীর মোবাইলগুলো সীজ করার ব্যবস্থা করতাম ..................
১০. অভিভাবকদের শাস্তির বিধান: লক্ষ লক্ষ অর্থের বিনিময়ে ৩য় শ্রেসনি থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস তথা ভালো বলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সহ সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্দালয়ে পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে ১০-১১-১২ লক্ষ টাকার বিনিময়,,, কোথায় পায় আমাদের দেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরা ---- হলফ করে বলতে পারি তাদের অভিভাবকরা এই অর্থের যোগান দেন .... তাই উপযুক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে তাদের জন্যও ব্যবস্থা করতাম আরো মোটা অংকের আর্থিক জরিমানা সহ লাল দালানের শ্বশুরবাড়িতে জামাই আদরের ব্যবস্থা .....
১১. প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের শাস্তি: দৈবাৎ কোন কারণে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন ঘটনা ঘটলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষিকার জেল জরিমানাসহ চাকুরীচ্যুতির ব্যবস্থা ..............
পরিশেষে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক ম্যাকিয়াভেলীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই --- "উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয় তা যেকোন পন্থা অবলম্বন করেই অর্জন করতে হবে "!!!!.............
লেখাটা অনেক বড় হয়েছে,,, পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে জেনেও না লিখে উপায় নেই তাই অগত্যা এই মুখ্য সুক্ষ মানুষটির যা মনে এসেছে পরীক্ষার হলের মত তাই লিখে দিলাম মনের মাধুরী মিলিয়ে ...... ধন্যবাদ.....